Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেললো বাংলাদেশ জিতলো শ্রীলঙ্কা!

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০১ এএম

আসন্ন সাফ চ্যাম্পিয়নশিপকে সামনে রেখে শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলের বিপক্ষে ফিফা প্রীতি ম্যাচে পুরোটা সময় নজরকাড়া ফুটবল খেললো বাংলাদেশ, কিন্তু জিতলো লঙ্কানরা। গতকাল বিকালে নীলফামারীর শেখ কামাল স্টেডিয়ামে দু’দলের মধ্যকার ম্যাচে শ্রীলঙ্কা ১-০ গোলে হারায় বাংলাদেশকে। বিজয়ী দলের হয়ে একমাত্র জয়সূচক গোলটি করেন মোহাম্মদ ফজল।
দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে বিশ্বকাপ খ্যাত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ দোরগোড়ায়। আগামী ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বসছে এই টুর্নামেন্টের ১২তম আসর। শেষ হবে ১৫ সেপ্টেম্বর। এতে স্বাগতিক বাংলাদেশসহ সাফের সাতটি সদস্য দেশ অংশ নেবে। দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ এই ফুটবল টুর্নামেন্টে নিজেদের সেরা পারফরেমেন্স দেখাতে বদ্ধপরিকর বাংলাদেশ। যে লক্ষ্যে তারা বেশ ক’মাস ধরে দেশ-বিদেশে কঠোর অনুশীলন করেছে। টুর্নামেন্টে মাঠে নামার আগে নিজেদের প্রস্তুতি ঝালাই করে নিতে ব্রিটিশ কোচ জেমি ডে’র শিষ্যরা কাল ফিফা প্রীতি ম্যাচে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখী হয়। এ ম্যাচ দেখতে নীলফামারীর শেখ কামাল স্টেডিয়ামের গ্যালারী ছিলো দর্শকে পরিপূর্ণ। স্টেডিয়ামের দর্শক ধারণ ক্ষমতা সাড়ে ২০ হাজার। ম্যাচ শুরু প্রায় ঘন্টাখানেক আগেই তা পূর্ণ হয়ে যায়। গ্যালারীর কোথাও তিল ধারণের জায়গা ছিলো না। স্টেডিয়ামের আশ-পাশের ভবন ও গাছের উপরে বসে অনেক দর্শককে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচটি উপভোগ করতে দেখা গেছে। এতে অনুমেয় বাংলাদেশে ফুটবল জনপ্রিয়তা একটুও কমেনি। 

এশিয়ান গেমসে ইতিহাস সেরা পারফরমেন্স করে সদ্য ইন্দোনেশিয়া থেকে ফিরেছে বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-২৩ দল। তারা প্রথমবারের মতো এশিয়াড ফুটবলের প্রথম পর্ব পেরিয়ে নক আউট পর্বে খেলেছে। গ্রæপ ম্যাচে কাতারের মতো শক্তিশালী দলকে ১-০ গোলে হারিয়ে শেষ ষোল’তে দু’বার বিশ্বকাপে খেলা উত্তর কোরিয়ার বিপক্ষে লড়াই করে ৩-১ ব্যবধানে হেরেছে। এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ অলিম্পিক দলের এমন পারফরমেন্স জাতিকে করেছে উজ্জীবিত। তাই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপকে সামনে রেখে দেশের ফুটবলপ্রেমীরা জাতীয় দলকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে বিভোর। তাদের আশা ছিলো প্রীতি ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সাফে প্রস্তুতি সফলভাবেই শেষ করবে অধিনায়ক মামুনুল ইসলামের দল। কিন্তু না, হারের বৃত্তেই থেকে গেল জাতীয় দল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচের প্রায় পুরোটা সময় ভালো খেললেও গোল পেল না তারা। ফলে হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় মামুনুল বাহিনীকে।
লঙ্কানদের বিপেক্ষ খেলা শেষ চার ম্যাচের মধ্যে এই প্রথম হারলো বাংলাদেশ। ২০১৪ ও ২০১৬ সাল মিলিয়ে খেলা তিন ম্যাচের দু’টিতে জিতেছিল লাল-সবুজরা। অন্য ম্যাচটি ড্র হয়েছিল।
কাল ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আক্রমণাতœক ফুটবল উপহার দিলেও শেখ কামাল স্টেডিয়ামের গ্যালারী উপচে পড়া সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটাতে পারেননি মামুনুল-সোহেলরা।
ম্যাচের ৮ মিনিটে প্রথম সুযোগ পায় বাংলাদেশ। এসময় স্ট্রাইকার সাখাওয়াত হোসেন রনির ডান দিক থেকে বাড়ানো ক্রসে টোকা দিতে পারেননি রবিউল হাসান। উল্টো ১১ মিনিটে বাংলাদেশ গোলরক্ষক শহিদুল ইসলাম সোহেলের ভুলে এগিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। এসময় লঙ্কান স্ট্রাইকার মোহাম্মদ ফজল প্রায় ৪০ গজ দূর থেকে আচমকা শট নিলে বল বাংলাদেশের আগুয়ান গোলরক্ষক সোহেলের মাথার উপর দিয়ে জালে আশ্রয় নেয় (১-০)। এ গোলের জন্য পুরো দায় বাংলাদেশ দলের গোলরক্ষকের। আর পরে বাংলাদেশ যে ম্যাচে ফিরতে পারেননি তার দায় স্ট্রাইকার সাখাওয়াত রনির।
পুরো ম্যাচে মাঝমাঠে খেলাটা বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণেই ছিল। আক্রমণও হয়েছে প্রচুর। কিন্তু শ্রীলঙ্কার বক্সের আশপাশে গিয়েই তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে লাল-সবুজের স্ট্রাইকাররা। স্বাগতিক আক্রমণভাগের খেলোয়াড়রা হতাশ করেছেন নীলফামারীর দর্শকদের। বাংলাদেশের মাঝমাঠ ও আক্রমণভাগের সেতুবন্ধনটা মোটেও ভালো হয়নি। এ ম্যাচের পর বাংলাদেশ কোচ ব্রিটিশ জেমি ডে’র দুশ্চিন্তাটা বাড়লো। আসন্ন সাফে কাকে দিয়ে গোল করাবেন তিনি? ম্যাচে ৬ জন খেলোয়াড় পরিবর্তন করেছেন কোচ জেমি ডে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। অপর স্ট্রাইকার নাবীব নেওয়াজ জীবন কিংবা জুয়েল রানারা নেমেও কোনো পরীক্ষায় ফেলতে পারেননি লঙ্কান গোলরক্ষককে। একমাত্র জাফর ইকবাল বাম দিক দিয়ে ঢুকে কয়েকটি নিঁখুত ক্রস ফেললেও তা গোল আদায়ের মতো ছিল না। দর্শকদের জন্য হতাশার এটাই যে, নিজেদের খেলোয়াড়দের গোল দেখতে পাননি। দেখবেন কি করে? ডজন খানেক সুযোগ পেলেও গোল হওয়ার মতো একটা ভালো শটও লঙ্কান পোস্টে করতে পারেনি বাংলাদেশের স্ট্রাইকাররা।
পিছিয়ে পড়ার পর ম্যাচে ফিরতে চেষ্টা করেও বারবার ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ দল। ম্যাচের ২৫ মিনিটে রনির দূরপাল্লার শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। একটু পর সতীর্থের বাড়ানো চিপে পা ছোঁয়াতে পারেননি তিনি। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকে ওয়ালী ফয়সালের কর্ণার লাফিয়ে উঠে শ্রীলঙ্কান গোলরক্ষক সুজান পেরেরা গ্রিপে নিলে বাংলাদেশের হতাশা আরো বাড়ে। ৭৮ মিনিটে বাঁ দিক থেকে স্বাগতিক দলের জাফর ইকবালের বাড়ানো ক্রসে কেউ হেড নিতে পারেননি। এরপর নাসিরউদ্দিন চৌধুরীর হেড লক্ষ্যেই থাকেনি। ৮৬ মিনিটে গোলরক্ষক বরাবর শট নিলেও লক্ষ্য ঠিক রাখতে পারেননি জাফর। ফলে শেষ পর্যন্ত হারের গøানি নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় লাল-সবুজদের।
স¤প্রতি কোরিয়ায় ৩টি, কাতারে ১টি ও এশিয়ান গেমসে ৪টি ম্যাচ খেলার পর আসন্ন সাফ চ্যাম্পিয়নশিপকে উপলক্ষ্য করে সাজানো হয়েছে যে দলটি, তাদের এই হারে কি বলবেন ফুটবলবোদ্ধারা?

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাদেশ


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ