পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রামে বেসরকারি চিকিৎসা সেবা খাতে নৈরাজ্য থামছে না। ভুল ও অপচিকিৎসার পাশাপাশি রোগীদের কাছ থেকে গলাকাটা হারে অর্থ আদায় চলছে। এতে করে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে অনেকে পথে বসছেন। আর বিত্তশালীরা ছুটছেন বিদেশে। হত-দরিদ্রদের কাছে চিকিৎসা সেবা এখন দুষ্প্রাপ্য হতে চলেছে। দেশের সব বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ল্যাবরেটরি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসা সংক্রান্ত সব পরীক্ষা ও সেবার মূল্য তালিকা প্রদর্শনে উচ্চ আদালতের নির্দেশও কেউ মানছে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই অঞ্চলে অপ্রতুল সরকারি চিকিৎসা সেবার কারণে বেসরকারি চিকিৎসা সেবা খাতে এই নৈরাজ্য চলছে। চিকিৎসা ব্যয় দরিদ্র্যতার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনো নিয়ম-নীতি ছাড়াই বন্দরনগরী ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠছে একের পর এক বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক। নামে-বেনামে করা এই সকল প্রতিষ্ঠানের স্থায়ীভাবে কোনো নিয়োগ নেই, নেই কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, কনসালটেন্ট অথবা নার্স। ফলে অদক্ষ চিকিৎসক দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা। এতে প্রায়ই অবহেলায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠছে। ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে দেয়া হচ্ছে ভুল রিপোর্ট। একেক সেন্টারে একেক রকম আদায় হচ্ছে ফি। বিশিষ্টজনদের অভিযোগ স্বাস্থ্য সেবাকে বাণিজ্যিক করণের ফলেই এমন অব্যবস্থাপনা ক্রমেই বাড়ছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, চট্টগ্রামে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের সংখ্যা ৫০৪টি। কিন্তু এর বাইরেও চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান। এসব হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বেশিরভাগেরই কোন অনুমোদন নেই। যেসব ভবনে হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়েছে সেসব ভবনেরও অনুমোদন নেই। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ’র অনুমোদন ছাড়াই আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠছে হাসপাতাল। সিটি কর্পোরেশনের কাছ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই চালু করা হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। এসব হাসপাতাল-ক্লিনিকের উপর সকারের কোন নিয়ন্ত্রণও নেই। যখন যে দল ক্ষমতায় আসে সেই দলের অনুসারি চিকিৎসক তথা বিএমএ নেতাদের সামনে রেখেই চলে চিকিৎসা সেবার নামে এই বাণিজ্য। চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলায় এক কোটির বেশি মানুষের জন্য সরকারি হাসপাতালের সংখ্যা একেবারেই কম। এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় সরকারি হাসপাতাল চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ১৩১৩টি। তবে এর কয়েকগুণ বেশি রোগী সেখানে ভর্তি হচ্ছে। এরপর রয়েছে ২৫০ শয্যার চট্টগ্রাম জেনারেল হাসাপাতাল। এই বিভাগের বাকি দশ জেলায় সরকারি হাসপাতাল থাকলেও সেখানে চিকিৎসা সেবা বিশেষত উন্নত চিকিৎসার সুযোগ কম। তাই চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই রোগীর চাপ সবচেয়ে বেশি। কিন্তু এই হাসাপাতালেও নানা সঙ্কট আর সীমাবদ্ধতার কারণে রোগীরা বেসরকারি হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল হতে বাধ্য হচ্ছে।
এই সুযোগে গত কয়েক বছরে নগরীতে অসংখ্য বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। যাদের অনেকেরই নেই প্রয়োজনীয় অনুমোদন। যার সর্বশেষ উদাহরণ নগরীর মেহেদীবাগের ম্যাক্স হাসপাতাল। শিশু রাইফার মৃত্যুর ঘটনায় জেলা সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে অদক্ষ ও অনভিজ্ঞ চিকিৎসকদের দিয়ে চলছে এ হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা। স্থায়ীভাবে নেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং নার্স। জরুরি প্রয়োজনে চিকিৎসক আনার ব্যবস্থা থাকলেও তা অনেকটা মর্জি মাফিক।
এতে সময় মত চিকিৎসা পান না রোগীরা, ফলে অবহেলায় মৃত্যু হয় অনেক রোগীর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালকের নেতৃত্বে গঠিত অপর একটি তদন্ত কমিটি ম্যাক্স হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসা সেবায় ১১টি ত্রুটি চিহ্নিত করে। র্যাবের অভিযানে হাসপাতালের অপারেশজন থিয়েটারে অনুমোদনহীন ওষুধ ও মেয়াদোত্তীর্ণ অপারেশন সামগ্রী জব্দ করা হয়। হাসপাতালটির ল্যাবে কোন প্রকার পরিক্ষা ছাড়াই প্যাথলজি রিপোর্ট দেওয়ার প্রমাণ পায় র্যাবের ভ্রাম্যমান আদালত। এত অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনার পরও হাসপাতালটির বিরুদ্ধে এখনও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর আগেও নগরীর আরও কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অপচিকিৎসা ও অব্যবস্থপনার প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে কোন হাসপাতালের বিরুদ্ধেই কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।
সেবার মনোবৃত্তির চেয়ে বাণিজ্যকেই প্রাধান্য দেয়া এসব প্রতিষ্ঠানের লাগাম টেনে ধরার যেন কেউই নেই। এতে করে চিকিৎসার নামে এই বাণিজ্যের পণ্য হয়ে যাচ্ছেন রোগীরা। চিকিৎসায় ভুলের শিকার হলেও প্রতিকার পান না ভুক্তভোগীরা। জবাবদিহিতা নেই চিকিৎসকদের। চট্টগ্রামের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল এবং ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু ঘটছে। এছাড়া জীবিত শিশুর বদলে অভিভাবককে মৃত শিশু গছিয়ে দেয়া, রোগীর প্রতি নানা অবহেলাসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। যে কারণে হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোতে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও রোগীর প্রতি অবহেলা বেড়েই চলেছে। অভিযোগ রয়েছে, চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) কোনো বাছবিচার ছাড়াই অভিযুক্ত চিকিৎসক বা হাসপাতালের পক্ষ নেয়। এতে ক্ষতিগ্রস্তরা সুবিচার থেকে বঞ্চিত হয়। কোন প্রতিষ্ঠান বা চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলেই সেবা বন্ধ করে রোগীদের জিম্মি করার ঘটনাও ঘটছে।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবার মান নিশ্চিতে স্বাস্থ্য বিভাগ কাজ করছে। কোথাও কোন অপচিকিৎসা বা ভুল চিকিৎসার প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। তবে অনেক ক্ষেত্রে নানা সীমাবদ্ধতার কারণে ব্যবস্থা নিতে কিছুটা দেরি হয়। ক্যাব চট্টগ্রামের বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে কোনো ধরনের নিয়ম-কানুন নেই। প্রশাসন কোনো ধরনের নজরদারি করতে পারবে না, সেটা খুবই উদ্বেগজনক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।