Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সু চির অভিযোগে বাংলাদেশের ক্ষোভ

রোহিঙ্গা সঙ্কটের এক বছর : সমাধানে ধীর গতি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৫ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০১ এএম

সেনাবাহিনী ও তাদের দোসরদের নৃশংস নির্যাতনের শিকার হয়ে স্রোতের মতো বাংলাদেশে প্রবেশ করতে থাকে মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা। এক বছর হতে চলেছে তবুও তারা মিয়ানমার বাহিনির নির্যাতনের ভয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তাদের দুর্ভোগের যেন শেষ হয় নি। এমন কি মিয়ানমারও তাদেরকে গ্রহণ করতে এখন পর্যন্ত আন্তরিকতা দেখায় নি। উল্টো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিলম্ব হওয়ার জন্য সেদেশের নেত্রী অং সান সুচি দায় চাপিয়েছেন বাংলাদেশের ওপর। অং সান সূ চি গতকাল মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরে এক বক্তৃতায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আটকে থাকার জন্য কার্যত বাংলাদেশকে দায়ী করেছেন। তার ঐ বক্তব্যে বাংলাদেশের একাধিক কর্মকর্তা বিবিসির কাছে ক্ষোভ ও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়ার জন্য সূচি কার্যত বাংলাদেশকেই দায়ী করেছেন। তবে বিবিসির সাথে আলাপকালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেছেন, অং সান সূ চি-র এমন বক্তব্যকে দুর্ভাগ্যজনক বলে তিনি মনে করছেন। বাংলাদেশ সরকারের রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশনার আবুল কালাম বিবিসিকে বলেছেন, মিয়ানমারের নেত্রীর বক্তব্যের সাথে বাস্তবতার কোনো মিল নেই।
গত বছর ২৫ শে আগস্টের পরই মিয়ানমারের নিরাপত্তা রক্ষীরা রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংস নির্যাতন শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী ও তার দোসররা। তারা নির্বিচারে গণধর্ষণ করে বালিকা, যুবতী ও নারীদের। গুলি করে হত্যা করে অসংখ্য মানুষকে। এর পর মিয়ানমার থেকে দলে দলে রোহিঙ্গরা পালিয়ে আসতে শুরু করে এবং ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এখন গাদাগাদি করে অবস্থান করছেন। সেখানে দেখা দিয়েছে নানা সামাজিক সমস্যা। মিয়ানমার বাহিনি আগুন ধরিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেয় গ্রামের পর গ্রাম। এরপর সেইসব গ্রামের ওপর তারা নির্মাণ করে সেনাবাহিনীর অবকাঠামো। এসব বিষয় প্রামাণ্য আকারে উপস্থাপন করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা। রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের ওপর আছে আন্তর্জাতিক চাপ। তবে জাাতিসংঘে এ বিষয়ে উত্থাপিত একটি প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে চীন ও রাশিয়া। ফলে মিয়ানমারের ওপর জাতিসংঘের চাপ প্রয়োগের বিষয়টি ঠুনকো বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বছর পেরুলেও এখনও রোহিঙ্গারা আতঙ্কে পালাচ্ছে
এখনও মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা আসার প্রবণতা রয়েছে। প্রায় দুই মাস আগে স্বামী, দুই বছরের একটিেে ছলে ও তিন মাস বয়সী একটি বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন হামিদা বেগম। পালিয়ে আসার আগের সময়টাতে তার স্বামী ঠিকমতো কখনো ঘুমাতে পারেন নি। কারণ, সারাক্ষণই তার মধ্যে গ্রেপ্তার হওয়ার ভয় কাজ করতো। ১৮ বছর বয়সী হামিদা বলেন, রাত হলে তার স্বামী কোনো গাছের মগডালে উঠে যেতেন। সারা রাত সেখানেই বসে থাকতেন। প্রচন্ড বৃষ্টি হলেও সেখানে বসে থাকতেন। তিনি এখন বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ শরণার্থী শিবিরের একপাশে অবস্থান নিয়েছেন।
হামিদা রয়টার্সকে বলেন, গতবছর অগাস্টের আগে উত্তর রাখাইনে তাদের গ্রামের জনসংখ্যা ছিল পাঁচ হাজারের মত। আর দুই মাস আগে যখন তিনি গ্রাম ছেড়ে আসেন, তখন পুরো এলাকা যেন বিরানভূমি; লোক ছিল মাত্র একশর মত।
মিয়ানমার বার বার বলছে, তারা রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করতে প্রস্তুত। কিন্তু এখনও হামিদা ও তার পরিবারের মতো অনেক মানুষ পালিয়ে আসায় মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সমস্যা সমাধানে অগ্রগতিতে ঘাটতির বিষয়টিকেই ফুটিয়ে তোলে। এতে বিশ্বের কাছে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অং সান সুচির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়ার জন্য তিনি কার্যত বাংলাদেশকেই দায়ী করেছেন।
মিয়ানমারে নিয়োজিত জাতিসংঘের সাবেক কূটনীতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক রিচার্ড হরসি বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট বিশ্বের কাছে মিয়ানমারের ভাবমূর্তি ভয়াবহভাবে ক্ষতি করেছে। সেনাবাহিনী বা নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের বিরুদ্ধে নৃশংসতার অভিযোগ আনা হয়েছে। এ বছরের শুরু থেকে আগষ্ট পর্যন্ত প্রায় ১৩ হাজার রোহিঙ্গা এসেছেন বাংলাদেশে। এতে পরিষ্কার বোঝা যায়, এক বছর আগে যে সঙ্কট শুরু হয়েছিল তা দ্বিতীয় বছরে প্রবেশ করলেও এ সঙ্কট সমাধান এখনও বহু দূরের বিষয়।
নতুন আসা প্রায় অর্ধ ডজনের মত শরণার্থী বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা বলেছেন, পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া বাড়িঘর ও ফাঁকা গ্রামগুলোতে টিকে থাকার লড়াই করছিলেন তারা। কিন্তু নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা তাদেরকে গ্রেপ্তার করে হয়রান করতে পারে এমন আতঙ্কে সব ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন তারা। আরো বলেছেন, তাদেরকে এক রকম গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল। অনাহারে মারা যাওয়ার অবস্থায় তাদেরকে ঠেলে দেয়া হয়েছিল তাদেরকে কোনো কাজে, মার্কেটে, পুকুরে মাছ ধরতে যেতে দেয়া হতো না। মসজিদে যেতে পারছেন না নামাজ আদায় করতে। মিয়ানমার বলেছে, তারা সংকটে উস্কানি দেয় নি। উল্টো সেনাবাহিনী সন্ত্রাসবিরোধী একটি অপারেশন চালিয়েছে।
বিবিসি জানায়, বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলেছেন, নভেম্বরে সই হওয়া প্রত্যাবাসন চুক্তির ১০ মাস পরেও প্রধান কোনো শর্তই মিয়ানমার বাস্তাবায়ন করেনি। কর্মকর্তারা বলছেন, দু›টি অভ্যর্থনা ক্যাম্প এবং একটি ট্রানজিট ক্যাম্প তৈরি করা ছাডা কিছুই করেনি মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়ে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরও অনেকে বলেছেন,তারা নিজের দেশে কোনো ক্যাম্পে থাকার জন্য ফিরে যেতে চায় না।
নতুন আসা রোহিঙ্গাদের বরাতে তিনি রয়টার্সকে বলেন, “মানুষ আমাদের বলছে, তাদের সেখানে দিন কেটেছে কারাবন্দির মত। কারফিউ এতটাই কড়া যে তারা বাড়ি থেকে বের হতে পারেনি, মাছ ধরতে যেতে পারেনি। আলো জ্বালার অনুমতি ছিল কেবল নির্দিষ্ট একটা সময়।”
গত সপ্তাহে ইউএনএইচসিআরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন আসা রোহিঙ্গাদের আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে এখনও যারা মিয়ানমারে রয়ে গেছেন, তারাও বাংলাদেশে চলে আসার পরিকল্পনা করছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ