Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জিম্মি উত্তরাঞ্চলের চামড়া ব্যবসায়ীরা

চামড়া পাচারের আশঙ্কা

রাজশাহী ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : ১৯ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

উত্তরাঞ্চলের চামড়া নিয়ে এবার বেশ অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে চামড়া ব্যবসায়ীরা। একদিকে চামড়ার বাজার নিম্নমুখি অন্যদিকে কোটি কোটি টাকা ট্যানারী মালিকদের কাছে বকেয়া পড়ে থাকায় বিপাকে পড়েছে তারা । এবার চামড়া সংগ্রহে তাদের খুব একটা আগ্রহ নেই। আর এ সুযোগটাই নিতে পারে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। আর সেই চামড়া চলে যেতে পারে পাচার হয়ে সীমান্তের ওপারে।
এ অঞ্চলের সবচেয়ে চামড়ার বড় মোকাম নাটোর। বিভিন্ন স্থান থেকে চামড়া এসে এখানে জড়ো হয়। তারপর চলে যায় ঢাকার ট্যানারী গুলোতে। সেই মোকাম চকবৈদ্যানাথপুরে এবার চামড়া নিয়ে ব্যস্ততার বদলে রয়েছে হতাশা। আর ক’দিন পর কোরবানী ঈদ। সরকারীভাবে চামড়ার মূল্য ঘোষনা করা হয়েছে। এতে খুশী নয় তারা। কারন চামড়ার বাজার এখন নিম্নমুখী। আড়তে মজুদ রয়েছে কোটি কোটি টাকার চামড়া। অথচ অন্য বছর গুলোয় আড়ত ফাঁকা থাকে। ব্যবসায়ীরা প্রস্তুতি নেয় কোরবানীর চামড়া কেনার। ট্যানারী মালিকরা চামড়া না কেনায় গুদামবন্দী হয়ে রয়েছে চামড়া। তাই নতুন চামড়া নিয়ে খুব একটা আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদের। এরপর রয়েছে আগের টাকা বকেয়া। যার পরিমান ষাট সত্তর কোটি টাকার কম নয়। ট্যানারী মালিকরা বছরের পর বছর ধরে তাদের টাকা আটকে রেখেছে। ফলে আর্থিক সংকটের কারনেও ব্যবসায়ীরা চমড়া ক্রয় করতে পারবেন না।
বেশ কজন ব্যবসায়ী বলেন প্রতি বছর ঈদের আগে ট্যানারী মালিকরা সুবিধাজনক শর্তে ব্যাংক থেকে ঋন নিলেও মাঠ পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের ঋণ শোধ করে না। ফলে সংকট বাড়ছে। তারা পাওনা পরিশোধের জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এবার চামড়ার বাজার পড়ে যাওয়া, পরিবহন খরচ, লবন সংরক্ষনের জন্য শ্রমিকের মজুরী সব মিলিয়ে খাজনার চেয়ে বাজনা বেশী। চামড়া ব্যবসায়ীরা হাত গুটিয়ে বসে থাকার সুযোগ নেবে মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীরা। তারা এসব চামড়া চড়া দামে ভারতে পাচার হয়ে যাবার আশঙ্কা রয়েছে।
নাটোর চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শরিফুল ইসলাম শরিফ বলেন উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম চামড়া বাজার নাটোর। আড়াই শতাধিক চামড়ার আড়তে বেচাকেনা হয়। এখান থেকে এ অঞ্চলের ২২ জেলার চামড়া যায় ট্যানারী গুলোতে। বছরজুড়ে ব্যবসা হয় সাত আটশো কোটি টাকার। শুধুমাত্র কোরবানীর সময় চামড়া বেচাকেনা হয় পাঁচশো কোটি টাকার।
এদিকে পুঁজি আটকে থাকায় ট্যানারি মালিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন রাজশাহীর চামড়া ব্যবসায়ীরা। গত তিন বছরের বিক্রি করা কোরবানীর চামড়ার দাম তারা এখনো পাননি। এভাবে ঢাকার ট্যানারী গুলোর কাছে বকেয়া পড়েছে প্রায় ১৫ কোটি টাকা। এ অবস্থায় পুঁজি হারাতে বসেছেন জেলার প্রায় ১৫০ ব্যবসায়ী। অথচ আর মাত্র ক’দিন পরই কোরবানীর ঈদ। সারাবছর ধরে এ সময়টার দিকেই তাকিয়ে থাকেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এবার অনেকটা হাত গুটিয়ে বসে আছেন তারা। নেই ব্যাংকের ঋণ সুবিধাও। ফলে এবার চামড়ার বাজার মৌসুমি ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ চলে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন প্রকৃত ব্যবসায়ীরা।
জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি আসাদুজ্জামান মাসুম বলেন, চামড়ার দাম নির্ধারনের পরও সেই দামে কেনেন না ট্যানারি মালিকরা। ফলে চামড়া নিয়ে অনেকটা বিপাকে পড়তে হয় ব্যবসায়ীদের। আবার কম দামে চামড়া বিক্রি না করলে তা বেশীদিন মজুত রাখাও সম্ভব নয়। এতে খরচ আরও বাড়ে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, রাজশাহীতে প্রতি কোরবানী ঈদে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার গরু মহিষ এবং ২০ হাজার ভেড়া এবং একলাখ ছাগল কোরবানী হয়ে থাকে। জেলায় প্রায় ৩৫-৪০টি চামড়ার আড়ত রয়েছে।
এ আড়তগুলো থেকে ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে চামড়া কেনেন ট্যানারি মালিকরা। চামড়া ব্যবসায়ী নেতা আসাদুজ্জামান মাসুদ বলেন, বকেয়া টাকা না পাওয়ায় প্রকৃত ব্যবসায়ীরা এবার চামড়া কেনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চামড়া

১৩ ডিসেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ