পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দাম্পত্যকলহের জের ধরে মা নিজেই তার দেড় বছরের শিশুকে হত্যা করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত সোমবার রাতে রাজধানীর উত্তরখান এলাকায়। পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে খবরে বলা হয়েছে, সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন ও ফাহমিদা মীরের একমাত্র সন্তান ছিল নেহাল সাদিক। সাজ্জাদ ও ফাহমিদা নিজেদের পছন্দমত সাড়ে চার বছর আগে বিয়ে করে। এটি দু’জনেরই ছিল দ্বিতীয় বিয়ে। বিয়ের পর থেকেই দু’জন দু’জনকে সন্দেহ করত। এনিয়ে প্রায়শই তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো। এদিকে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের বোয়ালমারিতে ৫ বছরে শিশুকে হত্যার পর মায়ের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। সেখানেও পারিবারিক কলহের জের ধরে সারোয়ারতলী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ কনজুরি বটতল এলাকার শীলপাড়ায় গত মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটেছে। মৃত্যুর আগে শিশুটির মা তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একটি দৈনিককে জানিয়েছেন, প্রাথমিক অবস্থায় জানা গেছে, কথা কাটাকাটির জের ধরে এঘটনা ঘটেছে। এদিকে চট্টগ্রাম নগর পুলিশ জানিয়েছে, গত একমাসে চট্টগ্রাম শহর ও জেলায় ৫টি আাত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। সব কটি ঘটনাই ঘটেছে পারিবারিককলহের জের ধরে।
মায়ের কোল শিশুদের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়। এখন দেখা যাচ্ছে, যে মা সন্তানের জন্য নিরাপদ, সেই মাই কখনো কখনো সন্তানের ঘাতক হয়ে উঠছে। গত কিছুদিন ধরে এ ধরনের অকল্পনীয় ঘটনা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘটে চলেছে। শুধু মায়ের হতেই নয় অন্যের হাতেও সমাজের সবচেয়ে দুর্বল শ্রেণী শিশুরা হত্যার শিকার হচ্ছে। এ হার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী চলতিবছরের প্রথম দুমাসেই রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ৫৪টি শিশুহত্যার শিকার হয়েছে। পরিসংখ্যাণ অনুযায়ী, প্রতিদিন গড়ে প্রায় একটি করে শিশুহত্যার ঘটনা ঘটেছে। শিশুহত্যার কারণ সম্পর্কে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পারিবারিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, বেকারত্ব, অনৈতিক উচ্চাকাক্সক্ষা, সংস্কৃতির নেতিবাচক প্রভাব, অনলাইন প্রযুক্তির কুপ্রভাব, পর্ণোগ্রাফির প্রসার, অনৈতিক জীবনযাপন, মানবপাচার, বিরোধ বা শত্রুতা, ব্যক্তি স্বার্থপরতা, লোভ, ক্রমাগত রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা। মানবাধিকার সংস্থাগুলো মনে করছে, শিশুহত্যার মতো ঘৃণিত অপরাধে জড়িতদের শাস্তি না হওয়ার কারণেই হত্যার ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শিশুহত্যাকা- বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো, মানুষের মানবিক গুণাবলী ক্রমশ লোপ পাওয়া। মূল্যবোধের অবক্ষয় ও অসহিষ্ণু মনোভাবের কারণেই অবুঝ শিশুদের প্রতি নির্মম আচরণ করা হচ্ছে। নিঃসন্দেহে বলা যায়, এটি সুনির্দিষ্টভাবেই শিক্ষা ব্যবস্থায় মূল্যবোধ, নীতি-নৈতিকতার উদ্বোধক পাঠ্য বিষয় না থাকা, চরম অবক্ষয় এবং যথাযথ ধর্মীয় র্চ্চা না থাকার কুফল। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও ইসলামী ভাবধারা বিলুপ্তের পাঁয়তারা অব্যাহত রয়েছে। আমাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধকে পাশ কাটিয়ে আধুনিকতার নামে এমন কিছুর অনুপ্রবেশ ঘটানো হচ্ছে যার নেতিবাচক প্রভাব সমাজের সর্বত্র পড়ছে। সমাজ গড়ে ওঠে পরিবারকে কেন্দ্র করে। পরিবারের নৈতিক মূল্যবোধের প্রভাব সমাজে পড়ে। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, পারিবারিক ও সামাজিক এই মূল্যবোধে ভয়াবহ অবক্ষয় ও ঙ্খলন দেখা দিয়েছে। সন্তান হত্যা থেকে শুরু করে শিশুহত্যার মতো ভয়ঙ্কর ঘটনাগুলোই তার সাক্ষ্য দিচ্ছে।
শিশুহত্যার মতো নির্মম, হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটছে এবং তা নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে, সমাজের বিশিষ্টজনরাও মতামত দিচ্ছেন। কিন্তু আসলে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বরং দিন দিন বেড়েই চলছে। দেখা যাচ্ছে, যাদের এসব শোনার কথা তারা কর্ণপাত করছে না। আরো গভীর উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এধরনের ঘটনা এখন সমাজের নিম্নস্তর থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত এমনকি উচ্চবিত্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। সে কারণে এনিয়ে গভীরভাবে ভাববার রয়েছে। সন্তানারা তাদের পিতামাতাকে অবিশ্বাস করতে শুরু করলে সমাজ যে অচিরেই বড় ধরনের বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে তা লিখে বা বলে বুঝাবার কোন প্রয়োজন নেই। সে কারণে সংশ্লিষ্টদের এখনই ভাবতে হবে। শুধু কথায় নয়, কাজে রূপায়ণ করতে হবে। সর্বগ্রে শিক্ষায় এবং সামাজিক র্চ্চায় মূল্যবোধের প্রতিষ্ঠা জরুরি হয়ে দেখা দিয়েছে। তা নাহলে অর্থনৈতিক উন্নতির কথা যতই বলা হোক, পারিবারিক ও সামাজিক অবক্ষয়ের ক্রমাগত অবনতির কারণে তা কোনো কাজেই আসবে না। মানুষের নীতি-নৈতিকতাই যদি লোপ পায়, তবে অর্থ যতই থাকুক তাতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।