পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঈদ যাত্রা শুরু হচ্ছে। এবারও বেহাল দেশের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক। নানা সমস্যায় জর্জরিত মহাসড়কগুলো ঘরমুখো যাত্রীদের জন্য ভোগান্তির অশনীসংকেতের মতো। কোথাও খানাখন্দ-গর্ত, কোথাও চলছে সংস্কারের কাজ। আবার বহুদিন ধরে কোনো কোনো মহাসড়কের বৃহৎ অংশ আগে থেকে চলাচলের অযোগ্য হয়ে আছে। সবকিছু মিলে দুর্ঘটনা ও ভোগান্তির শঙ্কা তাড়া করছে ঘরমুখি যাত্রীদের। অনেকেরই আশঙ্কা এবারও দুর্ভোগ থেকে রেহাই মিলবে না। যদিও সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এবারের ঈদ যাত্রায় কোনো ভোগান্তি হবে না। আর সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, ঈদকে সামনে রেখে পুরোদমে সংস্কার কাজ চলছে। ঈদ যাত্রার আগেই তা শেষ হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার ঈদ যাত্রায় সে সব মহাসড়ক যাত্রীদের ভোগান্তির অশনীসংকেত জানান দিচ্ছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-বরিশাল, ঢাকা-রাজশাহী, ঢাকা-বগুড়া ও ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক। ঈদ যাত্রায় এসব মহাসড়কে চলবে হাজার হাজার বাস। এসব মহাসড়কে পাড়ি জমাতে হবে লাখ লাখ যাত্রীকে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক
অর্থনীতির লাইফলাইনখ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়কে মেঘনা ও গোমতী সেতু আগে থেকেই ভোগান্তির প্রধান কারণ হয়ে আছে। এই দুই সেতুতে সৃষ্ট যানজট প্রতিনিয়ত যাত্রীদের ভোগান্তিতে ফেলে। মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার মেঘনা সেতু টোল প্লাজার পশ্চিম পাশের অংশটি খানাখন্দে ভরা। এতে করে এই অংশে প্রতিবছরের মতো এবারও ভোগান্তি পোহাতে হতে পারে এ পথে চলাচলকারীদের। জানা গেছে, মহাসড়কের কাঁচপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিকল্প সেতুর নির্মাণকাজ চলার কারণে মহাসড়কের একাংশ কেটে ফেলা হয়েছে। এই অংশে প্রতিনিয়ত যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় পিচ ঢালাই নষ্ট হয়ে মহাসড়কে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে ওই অংশ যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সামান্য বৃষ্টি হলেই গুরুত্বপূর্ণ মেঘনা সেতুর টোলপ্লাজার পশ্চিম পাশের সড়কটি হাঁটু পরিমাণ পানিতে তলিয়ে যায়। এতে বৃষ্টির সময় বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করায় রাস্তাটিতে বড় বড় গর্ত হয়েছে এবং গর্তে পানি জমে দুর্ভোগের মাত্রা আরো বেড়ে গেছে।
নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগের একজন প্রকৌশলী জানান, ঈদ যাত্রা নির্বিঘœ করতে ইতোমধ্যে মহাসড়কের অনেক স্থান মেরামত করা হয়েছে। বাকীগুলো ঈদের আগেই মেরামত করা হবে।
অন্যদিকে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চান্দিনা থেকে দাউদকান্দির মেঘনা-গোমতী সেতু পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত আর কয়েকটি স্থানে সংযোগ সড়ক ভেঙে যাওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। তা ছাড়া একই সড়কে কুটুম্বপুর থেকে ইলিয়টগঞ্জ পর্যন্ত টানা বৃষ্টিপাতের কারণে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ওই অংশ দিয়ে যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না। এ ছাড়া, ইলিয়টগঞ্জ থেকে মেঘনা-গোমতী সেতু পর্যন্ত সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক ভেঙে যাওয়ায় প্রতিদিন যানজট লেগেই আছে। ঈদ যাত্রায় এ যানজট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে ভুক্তভোগিদের আশঙ্কা।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে রাজধানী থেকে উত্তরবঙ্গে ১৬টি জেলার যানবাহন চলাচল করে। এই মহাসড়কে এখনো চলছে চার লেনের কাজ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কালিয়াকৈর অংশে সড়কের বিভিন্ন অংশে পিচ ঢালাইয়ের কাজ এখনো বাকি। বৃষ্টি হলে সড়কের কাঁচা অংশে বৃষ্টির পানি জমে যানবাহন চলাচলে দুর্ভোগ সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে, চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত ফোর লেনে গাড়ি চলাচল করলেও সড়কের ওই অংশের দুই পাশে এখনো পিচ ঢালাই করা হয়নি। চন্দ্রা থেকে কোনাবাড়ী পর্যন্ত চার লেনের কাজের এখনো অনেক বাকি। আসন্ন ঈদ যাত্রা নিয়ে চরম ভোগান্তির কারণ হতে পারে এই অংশ।
সওজের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা দাবি করেন, মহাসড়কের চার লেনের কাজের ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ৫০ কিলোমিটার সড়কে কার্পেটিং করা হয়েছে। চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেনে গাড়ি চলাচল করছে। এর মধ্যে কিছু অংশে সড়কের দুই পাশে কর্পেটিং করা না হলেও গাড়ি চলাচলে কোনো সমস্যা হবে না।
ওই কর্মকর্তা জানান, আসন্ন ঈদ যাত্রায় চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত ২৩টি সেতু খুলে দেওয়া হবে। সেতুগুলো গত ঈদুল ফিতরে খোলা ছিল না।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মহাসড়কের চন্দ্রা থেকে কালিয়াকৈরের সূত্রাপুর পর্যন্ত চার লেনে গাড়ি চলাচল করছে। কিন্তু সড়কের ওই অংশের দুই পাশে বিভিন্ন স্থানে কাঁচা রয়েছে। বৃষ্টি হলে সড়কের ওই কাঁচা অংশে যান চলাচলে কিছুটা বিঘœ ঘটতে পারে।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গাজীপুর অংশ আগে থেকেই অশনীসংকেত জানান দিচ্ছে। এই মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গীর তুরাগ সেতু পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার অংশে পানি জমে দুই পাশে তৈরি হয়ে আছে বিশাল নালা। ভুক্তভোগিদের মতে, ঈদের আগে এই অংশ সংস্কার না করলে ঈদ যাত্রায় দুর্ভোগ কয়েক গুণ বাড়বে। ঈদ যাত্রায় দুর্ভোগ আরো বাড়বে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহাসড়কের গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গীর এরশাদনগর পর্যন্ত দুই পাশে পানি জমে বিশাল নালার মতো রয়েছে। দুই পাশের কলকারখানা ও আশপাশের বাড়িঘরের পানি মহাসড়কে জমে নালা তৈরি হয়ে সংকুচিত হয়ে আছে মহাসড়ক। সংস্কারের অভাবে ভোগড়া, মালেকের বাড়ি, হারিকেন, সাইনবোর্ড, জাতীয় বিশ্ববিদালয়, বোর্ডবাজার, গাজীপুরা, হোসেন মার্কেট, এরশাদনগর, চেরাগ আলী মার্কেট, মিলগেইট, স্টেশন রোড ও টঙ্গী বাজারসহ কয়েকটি অংশ ভেঙে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে মহাসড়কে। এছাড়া, টঙ্গী থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত বিশাল অংশজুড়ে মহাসড়কের পাশেই রাখা থাকে ট্রাক ও পিকাপভ্যান। যেগুলো যান চলাচলে বাধার সৃষ্টি করে। কয়েকজন চালক বলেন, মহাসড়কের পাশে পার্কিং করে রাখা শত শত যানবাহনের কারণেও যানজটের সৃষ্টি হয়। যা ঈদ যাত্রায় ভয়াবহ আকার ধারণ কার আশঙ্কা রয়েছে।
ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক
ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের রাজবাড়ী অংশের জাতীয় মহাসড়ক, রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের বেহাল দশা। স্থানীয় সূত্র জানায়, রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ মোড় থেকে পাংশার শিয়ালডাঙ্গী পর্যন্ত সড়কের উন্নয়নকাজ চলছে ধীরগতিতে। এতে যানবাহন চলাচলে যেমন ব্যাঘাত ঘটছে, তেমনি ধুলায় নাকাল হচ্ছে যাত্রী, পথচারী ও সড়কের পাশে বসবাসকারীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের রাজবাড়ী অংশে থাকা জাতীয় মহাসড়কের প্রায় ২০ কিলোমিটার অংশই ভাঙাচোরা। খানাখন্দ থাকায় দুর্ভোগ নিয়েই চলতে হচ্ছে যাত্রীদের। ঈদ ঈদের আগে এই অংশ মেরামত বা সংস্কারের কোনো সম্ভাবনা নেই। এতে করে এই অংশ ঈদ যাত্রায় ভোগান্তির অশনীসংকেত হিসাবে জানান দিচ্ছে।
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের অনেক অংশই চলাচলের অনুপযোগি হয়ে আছে। সওজ সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে এই মহাসড়কের কোনো কোনো অংশে কাজ শুরু হলেও এখনও শেষ হয়নি। এসব অংশই ঈদ যাত্রায় ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মহাসড়কের ভুরঘাটা, কাসেমাবাদ, বামরাইল, অশোকাঠি, বাটাজোর, বার্থী, কটকস্থল, টরকী, কসবা, গৌরনদী, দক্ষিণ বিজয়পুর, মাহিলাড়া ও জয়শ্রী এলাকায় রয়েছে ছোট-বড় অনেক গর্ত। এসব এলাকা দিয়ে স্বাভাবিক গতিতে কোনো যানবাহনই চরতে পারে না। ঈদের আগে গর্তগুলো ভরাট করা না হলে মহাভোগান্তির আশঙ্কা রয়েছে বলে বাস চালকরা জানান।
ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক
ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের অনেকটা অংশ এবার খানাখন্দকে ভরে গেছে। গত ঈদুল ফিতরেও এই মহাসড়ক দিয়ে চলতে গিয়ে বহু দুর্ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা থেকে রাজশাহী যেতে ১৬ ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় লেগেছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, এবার কোথাও কোথাও সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। খানাখন্দকের কারণে এই মহাসড়কে এখন প্রায় প্রতিদিনই সৃষ্টি হচ্ছে যানজট।
অন্যদিকে, ঢাকা বগুড়া এবং ঢাকা-রংপুর মহাসড়কেরও একই অবস্থা। দুটো মহাসড়কেই বড় বড় গর্ত, ঝুঁকিপূর্ণ মোড় ও যত্রতত্র হাটবাজার বসার কারণে কোনো যানবাহনই স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারে না। অনেকেরই আশঙ্কা আসন্ন ঈদ যাত্রায় পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ। আর বৃষ্টি হলে তো রক্ষা নেই। ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে বগুড়ার ৭৪ কিলোমিটার অংশে মূলত খানাখন্দ, সেতু সংস্কার, চার লেনের চলমান কাজের পাশাপাশি দুর্বল সড়ক ব্যবস্থাপনার কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাচ্ছে যাত্রীরা। বগুড়ার শেরপুর অংশে সড়কের পাথর উঠে গিয়ে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে।
অন্যদিকে, বগুড়া থেকে রংপুর পর্যন্ত মহাসড়কের অবস্থা গত বছর থেকেই বেহাল অবস্থায় রয়েছে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের বগুড়ার তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী সাদেকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, এখন মহাসড়কের যেসব জায়গায় যান চলাচল ব্যহত হচ্ছে, সেসব জায়গায় জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করা হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।