পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ব্যাটারিচালিত ইজিবাইককে বৈধতা দেয়ার পাঁয়তারা চলছে বলে জানা গেছে। রাজনৈতিক কারণে বিশেষত আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এই পাঁয়তারা পরিচালিত হচ্ছে। গত ২৮ জুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় ইজিবাইক নিয়ে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে সরকারের প্রতিনিধিদের আলোচনা হয়। সভায় মালিক-শ্রমিকপক্ষ ইজিবাইক চলাচল বন্ধের দাবি জানায়। জানা গেছে, সরকারপক্ষ তাতে সাড়া দেয়নি। রাজনৈতিক ফায়দা পাওয়ার আশায় শেষ পর্যন্ত সরকার যদি ইজিবাইক চলাচলের বৈধতা দেয় তবে সেটা হবে সড়কশৃংখলা ও মসৃণ যাতায়াতের জন্য বিপর্যয়কর। উল্লেখ করা যেতে পারে, ২০১৫ সালে দেশের ২২টি মহাসড়কে থ্রি হুইলার চলাচল নিষিদ্ধ করে সরকার। এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতের স্পষ্ট নির্দেশনাও আছে। তা সত্তে¡ও থ্রি হুইলার, ইজিবাইক, নসিমন, করিমন, ভটভটি ইত্যাদি যানবাহন দৌর্দ প্রতাপে চলাচল করছে। পরিসংখ্যান বলছে, সারাদেশে ১০ লাখেরও বেশি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশা চলাচল করছে। প্রথমত, এসব যানবাহন হালকা ও দুর্ঘটনাপ্রবণ। সড়ক-মহাসড়কে হরহামেশা যে সব দুর্ঘটনা ঘটে তার একটা বড় অংশের কারণ এসব যানবাহন। দুর্ঘটনায় প্রায়শই প্রাণহানি হয়। অনেকে আহতও হয়। দ্বিতীয়ত, সড়ক-মহাসড়কে দ্রুতগতির যানবাহনের পাশাপাশি কমগতির ইজিবাইক ও রিকশা ত্বরিৎ ও মসৃণ যাতায়াতের অন্যতম প্রধান অন্তরায়। এদের কারণে সড়ক-মহাসড়কের যত্রযত্র যানজট সৃষ্টি হতে দেখা যায়। তৃতীয়ত, ১০ লাখ ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশায় প্রচুর বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয়। এই বিদ্যুতের বেশির ভাগই অবৈধ সংযোগ থেকে নেয়া হয়। এতে বিদ্যুতের বৈধ গ্রাহকেরা বিদ্যুৎ থেকে বঞ্চিত হয় আর সরকার বঞ্চিত হয় বিপুল অংকের রাজস্ব থেকে। চতুর্থত, ১০ লাখ ইজিবাইক ও রিকশায় ৪০ লাখ ব্যাটারি ব্যবহৃত হয়। এসব ব্যাটারি এক বছরের মাথায় ফেলে দিতে হয়। এতে মারাত্মক দূষণ ছড়িয়ে যাচ্ছে পরিবেশে।
এত নেতিবাচক দিক থাকার পরও ইজিবাইক ও রিকশা কিভাবে দিব্যি চলাচল করে, সেটাই প্রশ্ন। দেখা গেছে, সড়ক মহাসড়কেই নয়, দেশের বিভিন্ন শহরে এমন কি খোদ রাজধানী শহরেও বিনা বাধায় এসব যানবাহন চলাচল করছে। রাজধানীতে এক লাখেরও বেশি ইজিবাইক ও রিকশা চলাচল করে। এদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। শ্যামপুর, কদমতলী, ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, দারুসসালাম, কাফরুল, পল্লবী, খিলগাঁও, সবুজবাগ, বাড্ডা প্রভৃতি এলাকায় ব্যাপক সংখ্যায় এসব যানবাহন চলাচল করছে। ট্রাফিক পুলিশ বা আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এদের দেখেও দেখেনা। প্রকাশিত তথ্য মতে, রাজধানীসহ সারাদেশে বিভিন্ন সিন্ডিকেট এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের লোকদের নিয়ে গড়ে ওঠা এসব সিন্ডিকেট নিয়মিত চাঁদা প্রাপ্তির সুবাদে ইজিবাইক ও রিকশা চলাচলের অভয় অবস্থা নিশ্চিত করেছে। এদের আদায়কৃত চাঁদার একটা অংশ আইনশৃংখলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরাও নিয়মিত পেয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব নিষিদ্ধঘোষিত ও অবৈধ যানবাহনকে কেন্দ্র করে সারাদেশেই একটা অবৈধ ব্যবসা বা কারবার গড়ে উঠেছে। এই কারবার যেহেতু ক্ষমতাসীন দলের লোকজনদের দ্বারা বা তাদের পৃষ্ঠপোষকরা গড়ে উঠেছে এবং বেনিফিশিয়ারীদের মধ্যে আইনশৃংখলা রক্ষার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরাও রয়েছে সুতরাং কোনো নিষেধাজ্ঞাই এখানে কার্যকর হচ্ছে না। এখন আবার এই অবৈধ ইজিবাইকে চলাচলের বৈধতা দেয়ার চেষ্টা চলছে। সে চেষ্টারও মূল কারণ রাজনৈতিক। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
এ মুহূর্তে নিরাপদ সড়ক চাই, আন্দোলন তুঙ্গে। এ আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য, সড়কে মানুষের নিরংকুশ নিরাপত্তা, দুর্ঘটনার নামে মানুষ হত্যা বন্ধ এবং যান চলাচল নিবিঘœ ও মসৃণ করা। এ লক্ষ্য অর্জন করতে হলে অন্যান্য ব্যবস্থার পাশাপাশি নিষিদ্ধ ঘোষিত ব্যাটারিচালিত ঝুঁকিপূর্ণ ইজিবাইক, নসিমন, করিমন, ভটভটিসহ সকল রিকশার সড়ক-মহাসড়ক ও শহর থেকে অবশ্যই বিদায় করে দিতে হবে। নতুন করে বৈধতা দেয়ার প্রশ্নই উঠতে পারে না। আমরা আশা করবো, রাজনৈতিক ফায়দা পাওয়ার জন্য এমন সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে সরকার বিরত থাকবে। যে সিদ্ধান্তের সঙ্গে সড়ক-মহাসড়কে, শহরে-জনপদে বিপদ-বিশৃংখলা, প্রাণহানি, ক্ষতি ও বিপর্যয় বাড়ার আশংকা রয়েছে, ক্ষুদ্র দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থে, সে সিদ্ধান্ত নেয়া মোটেই সমীচীন হবে না। সরকারের বরং উচিৎ হবে, অবৈধ এসব যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।