পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীসহ সারাদেশের রাজপথে অবাধে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নিষিদ্ধ ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা। নিষিদ্ধ এ যানগুলো আগে কখনও ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় চলতে দেখা যায়নি। গত বছর করোনার সংক্রমণ দেখা দেয়ার পর থেকে এগুলো শহরের মধ্যে এমনকি অভিজাত এলাকাতেও চলাচল করছে। এতে করে বৈধ যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। বাড়ছে দুর্ঘটনা, যানজট এবং ভোগান্তি। অবৈধ যান চলাচল ও রাস্তা ফুটপাত দখলকে কেন্দ্র করে সারাদেশে প্রতিদিন প্রায় ২০ কোটি টাকা চাঁদাবাজি হয়। মাসে যার পরিমান প্রায় ৬শ কোটি টাকা। এর নেপথ্যে রয়েছে প্রভাবশালী নেতা ও পুলিশ। ভুক্তভোগিরা জানান, নেতাদেরকে টাকা না দিলে অবৈধ এসব যান কোনোভাবেই রাস্তায় নামানো যায় না। নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, নগরবাসীর যাতায়াত ও চলাচল নির্বিঘ্ন করতে না পারলে কোনোভাবেই ভোগান্তি কমবে না। রাজধানী ক্রমেই বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে। এজন্য সরকারকে কঠোর হতে হবে। সরকার ইচ্ছা করলে একদিনেই এসব সমস্যার সমাধান সম্ভব।
জানা গেছে, সারাদেশে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের সংখ্যা কমপক্ষে ১৮ লাখ। এর মধ্যে ১১ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যান। বাকি ৭ লাখ ইজিবাইক। আর ঢাকায় এই সংখ্যা ১২ লাখের বেশি। এর মধ্যে ১০ লাখ রিকশা বাকি ২ লাখ ইজিবাইক। এসব অবৈধ যান থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ কোটি টাকা চাঁদা তোলা হয়। স্থানীয় প্রভাবশালী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা এই চাঁদা তুলে থাকে। চাঁদার একটা বড় অংশ পায় সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ।
অটোরিকশার চালক ও মালিকরা বলেছেন, বিধি অনুযায়ী অবৈধ হলেও রাস্তায় চলতে তাদের কোনো অসুবিধা হয় না। কারণ একদিকে যেমন এলাকার নেতাদের ‘ম্যানেজ’ করে চলেন, তেমনি সড়কে তাদের বিরুদ্ধে যাদের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা সেই পুলিশ তাদের কাছে ‘ম্যানেজড’। অটোরিকশা চলাচল বন্ধ হলে এই দুই পক্ষ, নেতা ও পুলিশ-উভয়ে বড় অঙ্কের মাসোহারা হারাবে। সে বিবেচনায় অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করা সহজ নয়।
গত বছর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজুলে নূর তাপস ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করেছিলেন। তবে সে নিষেধাজ্ঞা কাগজে কলমের মধ্যেই ঘুরপাক খেয়ে এক পর্যায়ে আর বাস্তবায়িত হয়নি। যদিও নিষিদ্ধ ঘোষণার পর ক্ষমতাসীন দলের নেতারাই দাবি করেছিলেন, এগুলো বন্ধ করা সম্ভব হবে না। শেষ পর্যন্ত তাদের কথাই সত্যি হয়েছে। করোনার অজুহাতে এক বছরের মধ্যে নিষিদ্ধ এসব যানের সংখ্যা হু হু করে বেড়েই চলেছে। চালক ও মালিকরা জানান, নিষিদ্ধ ঘোষণা পর চাঁদার পরিমান বেড়ে গেছে। আগে দিনে গাড়িপ্রতি দেড়শ’ থেকে দুশ টাকা দিলেই চলতো। এখন প্রতিটি রুটে চাঁদার পরিমান এলাকাভেদে আরও একশ’ টাকা করে করে বাড়ানো হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকায় চলাচলরত ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশার চালক ও মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা তোলা হয় নিয়মিত। প্রতি মাসে এর পরিমাণ ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকা পর্যন্ত। সে হিসাবে বছরে আড়াই থেকে সাড়ে তিনশ’ কোটি টাকা চাঁদা দিয়ে থাকেন অটোরিকশার চালক-মালিকরা। অভিযোগ রয়েছে, এসব টাকা স্থানীয় নেতা নামধারী কিছু নেতা, মাস্তান, সন্ত্রাসী, থানা পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্রাফিক পুলিশের মধ্যে ‘ভাগ-বাটোয়ারা’ হয়। এ কারণেই এই বিপুল অঙ্কের অর্থের উৎস সহজে বন্ধ করতে রাজি নন কেউ। অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, অপরাধ নিয়ন্ত্রণকারীরা যদি অপরাধকে প্রশ্রয় দেয়, তবে প্রতিবাদকারীদের নিরব দর্শক হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। কারণ অপরাধ নিয়ন্ত্রণকারীরাই তখন অপরাধী বনে যান। অটোরিকশার ক্ষেত্রে ঘটছে সেটিই। সরেজমিনে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, ডেমরা, বাসাবো ও মাদারটেক, মুগদা, মান্ডা, হাজারীবাগ, জিগাতলা, কামরাঙ্গীরচর, দক্ষিণখান, মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, জুরাইনসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি এলাকাতেই ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা অগনিত। এসব নিষিদ্ধ যানের ভিড়ে পায়ে হাঁটাও মুশকিল। চালক-মালিকরা জানান, অটোরিকশা চালানোর জন্য প্রতিটি এলাকাতেই সুনির্দিষ্ট ‘ব্যবস্থা’ আছে। থানা পুলিশ ও স্থানীয় নেতাদের যৌথ উদ্যোগে ‘লাইনম্যান’দের মাধ্যমে প্রতিটি ইজিবাইক ও রিকশার জন্য একটি করে কার্ড ইস্যু করা হয়। এই কার্ডে উল্লেখ থাকে, কোন ইজিবাইক বা রিকশা কোন এলাকা পর্যন্ত চলতে পারবে। আর এই কার্ডের জন্য প্রতি মাসে কমপক্ষে এক হাজার টাকা করে দিতে হয় লাইনম্যানকে। তবে যেসব এলাকা ভিআইপি হিসেবে পরিচিত (উত্তরা, ধানমন্ডি, মতিঝিল, মিরপুর ), সেসব এলাকায় এই ‘লাইন খরচ’ তথা মাসিক চাঁদার পরিমাণ ২ হাজার টাকা। এই টাকা না দিলে নির্ধারিত এলাকার মধ্যে ইজিবাইক বা ব্যাটারিচালিত রিকশা চালানো সম্ভব হয় না। অন্যদিকে কোনো রিকশার কার্ডে উল্লেখ করা এলাকার বাইরে গেলে সেটি ধরা পড়লে আবার ট্রাফিক পুলিশকে ‘খুশি করে’ গাড়ি ছাড়িয়ে আনতে হয়। তাতে একেকবার খরচ সর্বনিম্ন ৫শ’ টাকা থেকে সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা পর্যন্ত।
ব্যাটারিচালিক রিকশাচালকরা জানান, প্রতিটি এলাকার জন্য কার্ডের রঙ হয় আলাদা। আবার একেক এলাকার কার্ডে চিহ্নও থাকে আলাদা আলাদা। কোনো এলাকার কার্ডে থাকে কাঁঠাল, তো কোনো এলাকার কার্ডে ইলিশ মাছের ছবি। একইভাবে নানা ধরনের ফুল ও ফল ব্যবহার করা হয়ে থাকে বিভিন্ন এলাকার চিহ্ন হিসেবে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রিকশা-ভ্যান শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ইনসুর আলী বলেন, গত প্রায় এক দশকে রাজধানীসহ সারাদেশে ব্যাটারিচালিত রিকশার দৌরাত্ম্য বেড়েছে। কিন্তু এসব রিকশার ব্যাটারি তিন থেকে ছয় মাস পর অকেজো হয়ে যায়। সেই অকেজো ব্যাটারি নিঃশেষ করার কোনো উপায় দেশে নেই। যে কারণে এটি পরিবেশের জন্য চরম ক্ষতি। আবার এ রিকশার ব্যাটারি চার্জ করতে গিয়ে বিদ্যুৎ খরচ হয়। তাই আমরা চাই না, এসব অটোরিকশা চলুক। আমরা দুই সিটি করপোরেশনকে একাধিকবার লিখিতভাবে বলেছি এসব রিকশা উচ্ছেদ করার জন্য।
ইজিবাই ও ব্যাটারিচালি রিকশার ‘লাইন ভাড়া’ থানায় থানায় জমা হওয়ার বিষয়ে জানতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তাদের কেউ কথা বলতে রাজি হননি। তবে ট্রাফিক পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, এর আগে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একটা নির্দেশনা তারা পেয়েছিলেন। অবৈধ এসব যান উচ্ছেদে অভিযানও শুরু হয়েছিল। করোনার কারণে সে অভিযান আর জোড়ালো করা সম্ভব হয়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।