মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় আসাম রাজ্যে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় ৪০ লাখ মানুষ যাদের অধিকাংশই বাংলাভাষী মুসলিম। ভারতীয় পরিচয় প্রমাণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের অভাবে তারা নাগরিকত্ব হারাতে পারেন। আর তাই তাদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছেই।
গত ৩০ জুলাই ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন্স (এনআরসি) প্রকাশিত হয়েছে। যারা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে আসামে গিয়েছিল, তাদের নাগরিকত্বের সুযোগ রাখা হয়েছে এই তালিকায়। কিন্তু সীমান্তবর্তী আসাম রাজ্যের মানুষের জন্য এই তালিকা তৈরি করে চূড়ান্ত খসড়া যখন প্রকাশ করা হলো, সেখানে দেখা গেলো ৪০ লাখ মানুষের নাম বাদ পড়েছে। ফলে বাদ পড়া লোকজন অনেকটা রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়েছেন।
আসামের ৩২ মিলিয়ন মানুষ তালিকায় তাদের নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করেছিল। কিন্তু এর মধ্যে চার মিলিয়নেরও বেশি মানুষের নাম বাদ পড়েছে। করিমগঞ্জ, শিলচর এবং ধুবড়ি জেলার অনেকে বলেছেন, তারা ১৯৭১ সালের বহু আগে এখানে এসেছেন। কিন্তু তাদেরকে নাগরিকত্বের সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। তাদেরকে ফেরত পাঠানোর কথা বলা হচ্ছে। সরকারের এ ধরনের পদক্ষেপের কারণে রাজ্যের অনেক বাংলাভাষী মুসলমান দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন।
যে কোন সময় কোন কারণ ছাড়াই রাজ্য সরকার তাদের বের করে দিতে পারে। যারা এই আতঙ্কের মধ্যে আছেন, তাদের একজন স্থানীয় মুসলমান মোহাম্মদ আজমল। তিনি জানান, প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র তিনি জমা দিয়েছেন। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে তার নাম তালিকায় আসেনি। আজমল বলেন, ‘কোন একটা বিষয় রয়েছে। আমাদের রাজ্যে মারাত্মক কিছু একটা হচ্ছে এবং আমরা ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছি। আমরা কেন ভাববো না যে, মুসলমানদের ফেরত পাঠানোর জন্য একটা পরিকল্পিত এজেন্ডার অংশ এটা। এতে করে ভোট ব্যাংক রক্ষা করা যায়’।
৬২ বছর বয়স্ক আজমল আরও বলেন, ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এ রাজ্যে বসবাসের পর ক্ষমতার কাঠামোর মধ্যে এখন ষড়যন্ত্র চলছে। ষড়যন্ত্র যাতে তার মতো লাখ লাখ মানুষকে রাজনৈতিক কারণে ফেরত পাঠানো হয়।
এদিকে, এ ধরণের ধারণাও রয়েছে যে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) যারা বর্তমানে আসামের ক্ষমতায় রয়েছে, তারা এবং কেন্দ্রীয় সরকার এই তালিকাকে ব্যবহার করে তাদের হিন্দু ভোট ব্যাংক রক্ষা করতে চাচ্ছে। কারণ আগামী বছরের এপ্রিলে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
গত ১ আগস্ট বিজেপি নেতা টি রাজা সিং আসামের নাগরিক তালিকা নিয়ে বিতর্ক উসকে দেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গা মুসলমানরা ভারতের জন্য আতঙ্কের বিষয়। তারা যদি স্বেচ্ছায় দেশ ছেড়ে না যায়, তাহলে তাদের গুলি করে মারা উচিত।
রাজা এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমি কেন্দ্রীয় সরকারকে বলবো, তাদেরকে ফেরত পাঠান। আর তারা যদি না যায়, তাহলে অন্যান্য দেশে যেটা করা হয়, বিপজ্জনক অনুপ্রবেশকারীদের তারা গুলি করে মারে, ভারতেও ঠিক সেটা করতে হবে। রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশীদের মধ্যে যারা শান্তিপূর্ণভাবে ভারত ছেড়ে না যাবে, তাদেরকে গুলি করে মারতে হবে আমাদের’।
তার বিবৃতি নাগরিক সমাজ ও মুসলিম গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। তারা এই বিবৃতিতে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে হুমকি এবং দেশের মধ্যে সা¤প্রদায়িক সহিংসতা উসকে দেয়ার প্রচেষ্টা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। নয়াদিল্লী ভিত্তিক সমাজকর্মী তালিব হোসেন বলেন, ‘এটা এখন স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, বিজেপি সা¤প্রদায়িক সহিংসতা উসকে দেয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করছে। গরিব অভিবাসী এবং মুসলমানদের দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি আখ্যা দেয়া হচ্ছে। এই ধরণের ব্যক্তিদের মাধ্যমে দলটি ধর্মীয় গেম খেলছে যাতে তারা ভোট ব্যাংক রক্ষা করতে পারে’।
তিনি আরও বলেন যে, জনগণকে বিভাজিত করে শাসন করার জন্য এই নাগরিক তালিকা বিজেপির একটি কৌশল মাত্র। ‘এতদিন সরকার কোথায় ছিল? কেন হঠাৎ করে তারা তালিকা নিয়ে হাজির হলো যখন নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক মাস বাকি আছে? আর কেনই বা ৪০ লাখ মানুষকে এই তালিকা থেকে বাদ রাখা হয়েছে’?
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির প্রধান প্রতিদ্বন্ধী তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থক সোমেন্দ্র চ্যাটার্জি বলেন, এই তালিকা ‘জাতিগত টার্গেটের’ একটি অংশ ছাড়া কিছু নয়। তিনি আরও বলেন, যাদেরকে তালিকা থেকে বাদ রাখা হয়েছে, তারা আগের নির্বাচনে বিজেপিকে ভোট দেয়নি। তিনি সাউথ এশিয়ান মনিটরকে বলেন, ‘এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, বিজেপি আগামী নির্বাচনে সেই সব ভোটারদের চায় না, যারা তাদের রাজনীতির বিরোধী। তাই এই তালিকা তৈরির মাধ্যমে তারা ভোটের বিজয়কে নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে’। সূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।