Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অবশেষে কি-গ্যানট্রি ক্রেন!

কন্টেইনার ওঠানামায় সরঞ্জাম ক্রয়ে ২৩৮ কোটি টাকার চুক্তি, নৌ-মন্ত্রণালয়ের শীর্ষকর্তার নির্লিপ্ততায় এক যুগ পার

শফিউল আলম : | প্রকাশের সময় : ১১ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০২ এএম

কলের কাজ কলে হয়। বলে হয়না। দেশের প্রধান চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে আমদানি-রফতানি পণ্যসামগ্রী হ্যান্ডলিংয়ের চাহিদা ও চাপ বাড়ছে প্রতিনিয়তই। অথচ চাহিদার সমানুপাতে যান্ত্রিক সরঞ্জামের সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ছে বন্দর। চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য ওঠানামা, পরিবহনের ক্ষেত্রে গত দশ বছর যাবত বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি ডাবল ডিজিটের ওপরে। ক্রমবর্ধমান আমদানি ও রফতানি প্রবাহ সামাল দিতে গিয়ে ভারী, মাঝারি ও হালকা যান্ত্রিক সরঞ্জামের ঘাটতির কারণে হিমশিম খাচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে করে বন্দরের সার্বিক উৎপাদনশীলতা, দক্ষতা, গতি ও সক্ষমতা ব্যাহত হচ্ছে। বছরের অনেক সময়ই বন্দরে জাহাজ ও কন্টেইনারের জট সৃষ্টির কারণে বেসামাল অবস্থা তৈরি হচ্ছে।
কন্টেইনার-নির্ভর আমদানি ও রফতানি বৃদ্ধির ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য অপরিহার্য ভারী ও অন্যান্য যান্ত্রিক সরঞ্জামের ঘাটতি দীর্ঘদিন ধরেই অত্যন্ত প্রকট। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে বার বার এসব যান্ত্রিক সরঞ্জামের চাহিদা পূরণের জন্য সরকারের কাছে আবেদন-নিবেদন করা হচ্ছে দীর্ঘদিন। মূলত নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষব্যক্তির নির্লিপ্ততা ও সিদ্ধান্তহীনতার কারণে এই ঘাটতি জিইয়ে রয়েছে অন্তত এক যুগ যাবত। এসব ভারী সরঞ্জামের ঘাটতির বহরে রয়েছে অত্যাবশ্যকীয় কী গ্যানট্রি ক্রেন। চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনারবাহী জাহাজ থেকে আমদানি ও রফতানমুখী পণ্যবোঝাই কন্টেইনার সরাসরি খালাস, ওঠানামার জন্য কী গ্যানট্রি ক্রেন সার্বক্ষণিক অপরিহার্য। এক যুগ আগে বন্দরে কী গ্যানট্রি ক্রেন ক্রয় করা হয় ৪টি। গত বছর বেপরোয়া জাহাজের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় দু’টি। যদিও পরে তা মেরামত করা হয়। বছরের পর বছর চাহিদা ও চাপ বাড়লেও নতুন করে আর কোনো কী গ্যানট্রি ক্রেন সংগ্রহ না করার কারণে অপ্রতুল এই সরঞ্জাম দিয়ে প্রতিদিনই হিমশিম অবস্থায় পড়ছে বন্দর। তাছাড়া সাম্প্রতিক কালে ক্রেনযুক্ত জাহাজের স্থলে আধুনিক ক্রেনবিহীন গিয়ারলেস জাহাজযোগে কন্টেইনার পরিবহনের আধিক্যের ফলেও বন্দরে কী গ্যানট্রি ক্রেন অত্যাবশ্যকীয় সরঞ্জাম। অথচ এ বিষয়টি উপলব্ধি করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের শীর্ষকর্তা ব্যক্তিবিশেষের দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলো!
অবশেষে এক যুগ পর চট্টগ্রাম বন্দরের ভারী যান্ত্রিক সরঞ্জামের বহরে যুক্ত হতে যাচ্ছে বহু প্রত্যাশিত সেই কী গ্যানট্রি ক্রেন। জাহাজের কন্টেইনার সরাসরি ওঠানামার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বছর বছর মুনাফালব্ধ নিজস্ব অর্থায়নে ২৩৮ কোটি টাকা মূল্যে অপরিহার্য চারটি সরঞ্জাম ক্রয়ে চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। চলতি আগস্ট অথবা আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে নতুন চারটি কী গ্যানট্রি ক্রেন চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ৪টি কী গ্যানট্রি ক্রেন সরবরাহ করবে চীনের সাংহাই জেনহুয়া হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানি লিমিটেড। ৪০ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন চারটি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন সংগ্রহে ব্যয় হচ্ছে ২৩৮ কোটি ৬১ লাখ ৫২ হাজার টাকা। গত বুধবার নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে এ লক্ষ্যে একটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর জুলফিকার আজিজ এবং চীনের সাংহাই জেনহুয়া হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানি লিমিটেডের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট লিউ কি জং। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ৬টি কী গ্যানট্রি ক্রেন সংগ্রহের লক্ষ্যে গত বছরের অক্টোবরে ঢাকায় চীনের সাংহাই জেনহুয়া হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ-এর সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে এ বছরের আগস্ট অথবা সেপ্টেম্বরে কী গ্যানট্রি ক্রেনগুলোর সরবরাহ পাওয়ার টার্গেট ধরা হয়। এই ৬টি কী গ্যানট্রি ক্রেন ক্রয়ে প্রায় ৩৪৫ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। উক্ত ৬টি এবং নতুন চারটি কী গ্যানট্রি ক্রেন চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালে সংযোজন করা হবে। এরফলে একযোগে এনসিটিতে বার্থিং অবস্থায় ৫টি গিয়ারলেস জাহাজ থেকে কন্টেইনার ওঠানামা করা সম্ভব হবে। প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ২ হাজার ৫শ’৩২টি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা যাবে। এরফলে বন্দরে জাহাজের টার্ন এরাউন্ড টাইম কমিয়ে আনতে সক্ষম হবে। বৃদ্ধি পাবে এনসিটিসহ সমগ্র চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের গতিশীলতা। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ২০০৫ সালে জাপানের মিতসুবিশি কোম্পানির কাছ থেকে চারটি কী গ্যানট্রি ক্রেন ক্রয় করে। তা চিটাগাং কন্টেইনার টার্মিনালে ব্যবহৃত হচ্ছে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি পরিচালনার জন্য শিপ-টু-শোর গ্যানট্রি ক্রেনসহ ৫১টি অপরিহার্য যান্ত্রিক সরঞ্জাম সংগ্রহের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এসব যান্ত্রিক সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে ১০টি কী গ্যানট্রি ক্রেন, ২০টি রাবার টায়ার গ্যান্টি ক্রেন, ১০টি স্ট্র্যাডল ক্যারিয়ার, একটি রেল মাউন্টেড ইয়ার্ড ক্রেন, একটি মোবাইল হারবার ক্রেন, ৫টি কন্টেইনার মুভার ও ৪টি খালি কন্টেইনার হ্যান্ডিলিং রীচ স্টেকার। এসব ভারী যন্ত্রপাতি সংযোজিত হলে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং আরও ২ লাখ টিইইউস বৃদ্ধি পাবে। ২০২১ সালে ৬০ বিলিয়ন ডলার রফতানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর যান্ত্রিক সরঞ্জামের অপ্রতুলতা নিরসনের চেষ্টা করছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম

৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ