Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

র‌্যাবের সাবেক অধিনায়ক হাসিনুরকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নেয়ার অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ১০ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

রাজধানীর মিরপুর সেনানিবাসের ডিওএইচএস এলাকা থেকে র‌্যাবের সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল (চাকরিচ‚্যত) হাসিনুর রহমান ডিউককে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছে পরিবার। বুধবার রাত ১০টা ২০ মিনিটে ডিওএইচএসের ১১ নম্বর রোডের ৭৯২ নম্বর বাড়ির সামনে থেকে তাকে মাইক্রোবাসে করে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসিনুর ডিওএইচএস এলাকার ৪ নম্বর এভিনিউয়ের ১০ নম্বর রোডের ৬৫৯ নম্বর বাড়িতে সপরিবারে থাকতেন। ঘটনার পর তার স্ত্রী শামীমা রহমান পল্লবী থানায় অপহরণ সংক্রান্ত অভিযোগ দিলে ঘটনাস্থলে পুলিশ দ্রুত ছুটে যায়। পুলিশ ৭৯২ নম্বর বাড়ির সামনের রাস্তায় হাসিনুরের লাইসেন্সকৃত পিস্তলটি পড়ে থাকতে দেখে উদ্ধার করে।
এদিকে গতকাল সকালে হাসিনুরের স্ত্রী শামীমা রহমান পল্লবী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডি নম্বর-৬৪২। পল্লবী থানার এসআই মনিরুল ইসলাম জিডির তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন ।
পল্লবী থানার ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা জিডিটি তদন্ত করছি। তার সম্ভাব্য অবস্থান জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
জিডিতে হাসিনুরের স্ত্রী শামীমা তার স্বামীকে সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। জিডিতে তিনি অভিযোগ করেন, বুধবার রাত ৯ টার দিকে এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে হাসিনুর বাসা থেকে বাইরে যান। দেখা শেষ করে ১০টার পর বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। ১০টা ২০ মিনিটের দিকে বাসার ঠিক কাছেই ৭৯২ নম্বর বাড়ির সামনে একটি মাইক্রোবাস থেকে ৪/৫ জন লোক নেমে হাসিনুরকে উঠিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালায়। ওই সময় হাসিনুর চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। তখন মাইক্রোবাস থেকে নামা ব্যক্তিরা নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দেয়। এসময় হাসিনুরের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি হয়। পরে তারা তাকে মাইক্রোবাসে জোরপূর্বক উঠিয়ে নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়।
ডিবি র‌্যাবের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, লে. কর্নেল হাসিনুর রহমান ডিউক ২০০৯ সালে চট্টগ্রামে র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক ছিলেন। র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা তদন্ত করে তার সঙ্গে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীরের সংশিষ্টতার তথ্য পায়। ওই সময় হাসিনুরের শ্যালিকা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। শ্যালিকা হিজবুত তাহরীরের নারী ইউনিটের একজন শীর্ষ স্থানীয় নেত্রী ছিলেন। হিযবুত তাহরীরের নারী শাখার প্রধান ফারিয়া আফসানা মুনমুন, নেত্রী হোমায়রা, লুনা, বুয়েটের থেকে স্থাপত্য বিভাগ থেকে পাস করা ফাহমিদা খানমসহ অন্তত ৫০ জন নারী কর্মীর সঙ্গে লে.কর্নেল হাসিনুরের যোগাযোগ থাকার সংশ্লিষ্টতা পায়। চট্টগ্রামে র‌্যাব-৭ অফিসে হিযবুত তাহরীরের কয়েকজন নেতা তার সঙ্গে দেখাও করেন। ২০০৯ সালের অক্টোবরে হিজবুত তাহরীর নিষিদ্ধ ঘোষণার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ’র শিক্ষক ও হিজবুত তাহরীরের উপদেষ্টা গোলাম মহিউদ্দিন গ্রেফতার হন। তার জবানবন্দী থেকেই হাসিনুর রহমানের জঙ্গি সংশিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া যায়। তখন হাসিনুর রহমান র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক ছিলেন। র‌্যাবের হাতে হিজবুত তাহরীরের বেশ কয়েকজন সদস্য আটক হওয়ার পর র‌্যাবও নিশ্চিত হয় হাসিনুর রহমানের সাথে হিজবুত তাহরীরের সংশিষ্টতা রয়েছে। ২০১১ সালের প্রথম দিকে তাকে র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখায় ডেকে পাঠানো হয়। সেসময় গোয়েন্দা শাখার প্রধান ছিলেন লে. কর্ণেল জিয়াউল আহসান। তিনি সাংবাদিকদের কাছে হাসিনুর রহমানের হিজবুত তাহরীর সংশিষ্টতা নিশ্চিত করে। এরপরেই তাকে র‌্যাব-৭ থেকে অব্যাহতি মাতৃবাহিনীতে ফেরত পাঠানো হয়।
হাসিনুর রহমান শ্যালক একটি সংবাদ মাধ্যমের কাছে জানান যে, র‌্যাব থেকে সেনাবাহিনীতে ফিরে গিয়ে হাসিনুর সর্বশেষ আর্মি ট্রেইনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডে (আরডক) কর্মরত ছিলেন। একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পর তিনি চাকরিচ‚্যত হন। চাকরির সময় রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় দÐিত হয়ে পাঁচ বছরের জেল খেটে ২০১৪ সালে মুক্তি পেয়েছিলেন।
একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা লে. কর্নেল (চাকরিচ‚্যত) হাসিনুর রহমান ডিউকের ফেসবুক আইডি যাচাই করে মন্তব্য করেন যে, সম্প্রতি ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ শিক্ষার্থীদের চলা আন্দোলনে তিনি ফেসবুকে অনেক ভ‚য়া ও মিথ্যা তথ্য শেয়ার করেছেন। এ বিষয়টিই হয়তো যাচাই বাছাই করা হচ্ছে।
গতকাল মিরপুর ডিওএইচএস এলাকায় হাসিনুরের বাসায় সাংবাদিকরা এ ব্যাপারে খোঁজ খবর নিতে যান। হাসিনুরের স্ত্রী শামীমা রহমান বলেন, ‘আমার স্বামী কোন অন্যায় বা অপরাধ করলে রাষ্ট্রের প্রচলিত আইন অনুযায়ি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক। তাকে কারা অপহরণ করে নিয়ে গেছে, তা আমি নিশ্চিত নয়। সরকারের কাছে আমার স্বামীকে উদ্ধার করার দাবি জানাচ্ছি।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অভিযোগ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ