বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার ড্রেনেরঘাট শিমুলতলীতে ব্রহ্মপুত্র নদ খননের নামে চলছে অবৈধ ভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন। এতে করে পার্শ্ববর্তী গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলা ও মনোহরদী উপজেলার রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাড়ি-ঘর ও শতাধিক বিঘা ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিন ব্রহ্মপুত্র নদের এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলন করছেন লেবুতলা ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল আলম রতন ও লেবুতলা ইউপি ৩নং ওয়ার্ড সদস্য লেহাজ উদ্দিন, লেবুতলা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান, স্থানীয় জনৈক ব্যক্তি সবুজ ও জাহাঙ্গিরসহ ২৫/৩০ জনের একটি সংঘবদ্ধ চক্র। তাদের নেতৃত্বে প্রতিদিন শত-শত ট্রাক বালু উত্তোলন করা হচ্ছে ড্রেজার মেশিন দিয়ে। এসব বালু খেকোদের সাথে কয়েকজন ভূঁইফোড় আ.লীগের নামধারী নেতা রয়েছে বলেও অনেকে জানিয়েছে। নদী থেকে বালু উত্তোলন করে আঞ্চলিক রাস্তার পাশে ৫টি স্পটে পাহাড়ের মতো উঁচু করে জমিয়ে রাখে চক্রটি। পরবর্তীতে বিভিন্ন ক্রেতা-ব্যবসায়িদের কাছে বালু বিক্রয় করে থাকে। দৈনিক ৭শ’ টাকা হাজিরায় ৫টি স্পটে ১০জন লোক ম্যানেজার হিসেবে কাজ করে থাকে। এর বাহিরে অপরিচিত কোন লোক বালু উত্তোলনস্থলে আসলেই কয়েকজন এসে নানা ধরণের প্রশ্ন করতে থাকে। বালু উত্তোলনের চিত্র ধারণ করতে গেলেও তারা বাধা প্রদান করে থাকে। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা হুকুমের গোলাম হিসেবে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের পক্ষে কাজ করে থাকে। দিনে ও রাতে পালাক্রমে তারা বালুর স্পটে অবস্থান করে। লেবুতলা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান প্রতি সপ্তাহে বালুখোকাদের কাছ থেকে সেলামি নিয়ে থাকে। যেখানে বালুর স্তুপ বেশি সেখান থেকে সেলামিও বেশি। যেখানে কম সেখান থেকে কমই নাকি তিনি নিয়ে থাকে।
এ ব্যাপারে এলাকাবাসী জানায় নদী খনন করার নামে যেন বালু উত্তোলনের ধুম পড়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত শ্যালো ও ড্রেজার মেশিন চালিয়ে বালু উত্তোলন করা হয়। নদী খননের নাম করে ইতোমধ্যে প্রায় ৪ কোটি টাকার বালু বিক্রয় করা হয়েছে। প্রতি ট্রাক বালু ৭০০/৮০০ টাকা করে বিক্রয় করে থাকে চক্রটি। তারা আরো জানিয়েছে, কিছুদিন পূর্বে মনোহরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ শহিদ উল্লাহ অবৈধ বালু খেকোদের বিরুদ্ধে মোবাইলকোর্টও পরিচালনা করেছে। কিন্তু চক্রটি এতেও খান্ত হয়নি।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) নরসিংদী জেলা শাখার দুর্ঘটনা অনুসন্ধান ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক শান্ত বণিক বলেন, মনোহরদী উপজেলার লেবুতলা, খিদিরপুর, রামপুর, কাপাসিয়া উপজেলার টোকসহ আশপাশ এলাকার সকল আঞ্চলিক সড়কের অবস্থা খুবই নাজুক। কারণ প্রতিদিন ৩০/৩৫টি রেজিস্ট্রেশন বিহীন ট্রলি ট্রাক অদক্ষ চালক দিয়ে যাতায়াত করে থাকে। এতে করে সড়কগুলোর বেহাল দশা দেখা দিয়েছে। যদিও বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ এর ধারা ৫ এর ১ উপধারা অনুযায়ী পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোনো মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না বলা আছে। ধারা ৪ এর (খ) অনুযায়ী সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারেজ, বাঁধ সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা হলে অথবা আবাসিক এলাকা থেকে সর্বনিম্ন এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ করা হয়েছে তারপরও নদী খননের নামে কতিপয় ব্যক্তি হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের অর্থ। সরকার বঞ্চিত হচ্ছে রাজস্ব থেকে।
লেবুতলা ইউপি ৩নং ওয়ার্ড সদস্য লেহাজ উদ্দিন জানান, বালুতো উত্তোলন হইতাছে, রতন ভাই উডাইছে। এহানে চেয়ারম্যানসহ অনেক লোক জড়িত আছে, বালু অহনে কয়দিন ধইরা উডাই না, ড্রেজার বন্ধ, যেইডি তোলা হইছে এডি বেচি। সরকারি ভাবে যে নদী খুদে এইডার জাগা ভাউ কইরা বালুডা রাইখ্যা আমরা বেচি।
এ ব্যাপারে লেবুতলা ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান শফিকুল আলম রতন মোবাইল ফোনে জানান, ‘সরকারি ভাবে নদী যেমনে খনন হয় এইভাবেই চলতেছে। আগে যেইডা অন্যবাই উডানো হইতো এইডা এহন অয় না’ সরকারি ড্রেজারে যেইডা নদী খনন, এহনে এইডাই চলে’ আগে যেইভাবে বালু বেচাকিনা অইত এহন কিছুদিন ধইরা বন্ধ’ আমি অবগত আছি সমস্যার কোন কারণ নাই। একটা ট্যাগের মধ্যে লেহাজ মেম্বারের ভাইগনারা বালু উডাইছে, এহানে কয়েকজন জড়িত আছে পার্টনারদের মধ্যে একটা ঝামেলা হইছে।
লেবুতলা ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান জানান, ‘বালু উত্তোলন এহন বন্ধ’ নদীর থাইক্কা চেয়ারম্যান সাবের ভাইয়েরা আছে, সাবেক চেয়ারম্যান সাব আছে, এরা নদী খননের যে কর্তৃপক্ষ আছে এদের সাথে যোগাযোগ কইরা এরা বালুগুলা তুলে আরকি, আমরা বাধা দিয়া রাখছি। ইউএনও স্যার আইসা বাধা দিছে এরা বলছে আর বালু তুলবে না।
এ ব্যাপারে লেবুতলা ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।