বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
একসময়ের প্রমত্তা বালুনদ এখন মৃতপ্রায়। বর্ষা মৌসুম ছাড়া বছরের প্রায় পুরো সময়ই নদের বুক থাকে পানিশূণ্য। ধু-ধু বালুচর, কোথাও চাষাবাদ, কোথাও গরু চরানো কিংবা দূরন্ত কিশোরদের খেলাধুলার দৃশ্য চোখে পড়ে। অথচ একসময় এ নদের বুকে চলত জাহাজ। তিন যুগ আগেও বড় বড় ফেরি ও লঞ্চের ভেঁপুর শব্দে কানপাতা দায় ছিল।
বালু নদের অবস্থান গাজীপুর, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলায়। লম্বায় ৪৪ কিলোমিটার, পাশে গড় ৭৯ মিটার এবং নদের প্রকৃতি সর্পিলাকার। ঢাকা শহরের উত্তর-পূর্ব এলাকায় বেলাই বিল ও ঢাকার উত্তর-পূর্ব বিস্তীর্ণ জলাভ‚মির উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ডেমরার কাছে শীতলক্ষ্যা নদীতে গিয়ে পড়েছে। শীতলক্ষ্যার সাথে গাজীপুরের কাপাসিয়ার কাছে সুতি নদীর মাধ্যমেও এর একটা ক্ষীণ যোগাযোগ ছাড়াও টঙ্গী খালের মাধ্যমে তুরাগ নদে মিলিত হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে বালু নদ শীতলক্ষ্যা ও তুরাগের পানি বহন করে।
আশির দশকের শুরুর দিকেও বালু নদ দিয়ে বড় বড় ফেরি-লঞ্চ চলতে দেখা গেছে। বর্তমানে নদের বুকে পানির অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করা হাজার হাজার জেলে পরিবারেও চলছে দুর্দিন। অনেকেই মাছ ধরার পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। যারা পেশা বদল করতে পারেননি, তাদের জীবন কাটছে মানবেতরভাবে। নদ মরে যাওয়ায় কৃষিনির্ভর এ এলাকার সেচ কাজও দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বালু আর শীতলক্ষ্যা নদীতে বিশাল বিশাল চর পড়েছে। চরে আবাদ হচ্ছে ফসলের। অনেক জায়গায় চলছে দখলের মহাযজ্ঞ। শীতলক্ষ্যার পাড়ের বাসিন্দা আফতাব উদ্দিনরে বয়স ৮২ বছর। তিনি বলেন, দুই দশক আগেও এত খারাপ অবস্থা ছিল না। শীতলক্ষ্যা একসময় বাড়ির পাশে ছিল। মাছ ধরা, গোসল করা, ঘরের কাজ, কৃষি কাজে ব্যবহার হত নদীর পানি। এখন আর নদীতে পানি নেই। বেশির ভাগ জায়গা ভরাট হওয়ার পাশাাপশি দখল হয়ে গেছে। কৃষক ইসমাইল বলেন, বালু নদ ভরাট হয়ে যাওয়ায় সেচকাজে পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কৃষি কাজ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রিগেন মোল্লা বলেন, মাছ, জলজ পতঙ্গ, পাখিসহ অনেক প্রাণী নদীর ওপর নির্ভরশীল। নদী শুকিয়ে গেলে বিলুপ্ত হয়ে যাবে তারাও, কমবে মাছের প্রজনন। বালুরপাড় সরকারী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণ গোপাল সরকার বলেন, নদের পাড় অবৈধভাবে দখল করে ভরাট করেছেন ব্যবসায়ীরা। দুই পাড়েই গড়ে উঠেছে অসংখ্য ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান।
আর বিআইডবিøউটিএ’র খনন বিভাগের দাবি প্রতি বছর বন্যার পানির ঢলে প্রচুর পলি থাকে। সেই পলি সদ-নদীতে জমে নাব্যতা সঙ্কট সৃষ্টি করে। তাছাড়া রাজধানীর ময়লা আবর্জনা ফেলায় নদ-নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআইডবিøউটিএ’র এক কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীর ময়লা আবর্জনা ফেলা বন্ধ না করলে শুধু ড্রেজিংয়ে কাজ হবে না। প্রতিনিয়তই নদ-নদীতে চলছে দখল আর দূষণ।
স্থানীয়রা বলেন, ‘আমরা জানতে চাই, প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ হলেও বছর ঘুরতেই কেন নাব্যতা সঙ্কট তীব্র হবে? তাহলে নাব্যতা ফেরাতে যে অর্থ ব্যয় হচ্ছে সেটা কোথায় যাচ্ছে? নদ-নদীর নাব্যতা ফেরাতে আমরা স্থায়ী সমাধান চাই’।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।