মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
কোমরে নীল-সাদা চেকের লুঙ্গি পরিহিত নূর আল-আমিন বাঁশের চাটাইয়ের ঘরের সারির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া একটি কর্দমাক্ত খালের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। ৪০-র ঘরে বয়স থাকা এই রোহিঙ্গা বলেন, ‘এখানে কোনও কাজ নেই, কোনও কিছুই করার নেই। ভোরে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ি, কুরআন পড়ি, তারপর আবার ঘুমাই। তারপর সাহায্য সংস্থার আসার জন্য অপেক্ষা করি। এটাই আমার নিত্যদিন।’ আমাদের আর্তনাদ কেউ শোনার কেউ নেই। আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে নো-ম্যানস ল্যান্ডে আটকে পড়া রোহিঙ্গাদের আর্তনাদের কথা। নূর আল-আমিন সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থানরত ৪ হাজার ৬০০ রোহিঙ্গার একজন। এখানে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা শরণার্থীর মর্যাদা পায়নি। আর যে এলাকায় তারা প্রায় এক বছর ধরে অবস্থান করছে তা এখন মিয়ানমারের নিয়ন্ত্রণাধীন। কিন্তু স্থলপথে মাইন পুঁতে দেওয়ার পাশাপাশি সীমান্ত বেড়া নির্মাণ করার মাধ্যমে সেখানে থেকে রাখাইন রাজ্যে যাওয়া তাদের জন্য অসম্ভব। আর তাদের ঘরের কয়েক মিটার দূরে খালের ওপারেই তাম্রু কোনাপাড়া। মাসে দুইবার করে রেডক্রসের লোকজন সেখানে গিয়ে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ সহায়তা দিয়ে আসে। কঠোর নজরদারি মধ্য দিয়ে একটি কাঠের ব্রিজের মাধ্যমে খাল পার হয়ে তারা তাম্রু চেক পয়েন্টে আসতে পারে। মূলত ত্রাণের পণ্য নেওয়া ছাড়া তাম্রু গ্রাম থেকে কিছু বাজার করার জন্য তারা মাঝে মাঝে সীমান্ত পার হয়ে থাকে। এই ক্যাম্পের বাসিন্দা নূর আল-আমিনের মিয়ানমারের মংডুর শহরতলীর পানিপাড়া গ্রামে নিজের ধানের জমি রয়েছে। তিনি এই পর্যন্ত তিনবার জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত হয়েছেন। প্রথমবার ১৯৭৮ সালে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা শুরু করলে বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরে একবছর ছিলেন আল আমিন। সেই সময়ে তিনি শিশু ছিলেন। এরপর ১৯৯২ সালে তাদের জোর করে তাড়িয়ে দেওয়া হলে দ্বিতীয়বার পালিয়ে আসেন তিনি। ওই সময় শরণার্থী হিসেবে ৮ বছর পার করেছিলেন এই কৃষক। আর সর্বশেষ গত বছর রাখাইন রাজ্যজুড়ে সেনা অভিযানের মুখে ২৭ আগস্ট পরিবার নিয়ে তৃতীয়বারের মতো পালিয়ে আসতে বাধ্য হন তিনি। জাতিসংঘ সেনাবাহিনীর ওই অভিযানকে জাতিগত নিধনের পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ বললেও মিয়ানমার তা অস্বীকার করে আসছে। আল আমিন বলেন, মাইন বিস্ফোরণের শিকার হয়ে আমার দুই ছেলে আহত হয়েছে। একজন মাথায় ও আরেকজন বুকে আঘাত পেয়েছে। হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে তারা এখন অনেক সুস্থ হয়ে উঠেছে। ওই সময় তিনি বলেন, তার ছেলেরা ভাগ্যবান যে পঙ্গু হয়ে যায়নি বা মারা যায়নি। আল আমিন জানান, তিনি সীমান্ত বেড়ার গর্তের মধ্যে পুতে রাখা মাইন বিস্ফোরণ হয়ে এক নারীর দুই পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে দেখেছেন। আল আমিনের বড় ছেলের বয়স ২১ বছর আর ছোট ছেলের বয়স ৭ বছর। এই ক্যাম্পের জীবনের হতাশা ও সন্তানদের ভবিষ্যতের বিষয়টি উদ্বিগ্ন হয়ে তিনি জিজ্ঞেস করেন, আর কত দিন আমাকে এখানে থাকতে হবে? বাকি জীবন কি তাদের শরণার্থী হিসেবেই কাটিয়ে দিতে হবে? নো-ম্যানস ল্যান্ডের জীবন খুবই কষ্টকর। এখানে কোনও সুবিধা নেই, কোনও কাজ নেই, কোনও স্কুল নেই। গত বছর বর্ষাকালে বন্যা হওয়ায় এবার এখানকার ঘরগুলোর কাঠামো ইস্পাত দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এই রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা দিল মোহাম্মদ একটি ব্রিজ দেখান। একটি বাঁশ দিয়ে নির্মিত সাধারণ কাঠামোর ব্রিজটি সবুজ রং করা। তিনি বলেন, একমাস আগে জুলাইয়ের ১ তারিখে এটা তৈরি করা হয়েছে। ৫১ বছর বয়সী দিল মোহাম্মদ বলেন, মিয়ানমার সীমান্ত বেড়া থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরেই তার বাড়ি। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে বার বার ভিত্তিহীন অভিযোগ এনেছে যে, তিনি আরসা’র একজন জ্যেষ্ঠ সদস্য। আল-জাজিরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।