Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চট্টগ্রামে গণপরিবহনে নৈরাজ্য রাস্তায় নামলেই দুর্ভোগ

রফিকুল ইসলাম সেলিম : | প্রকাশের সময় : ৩ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০১ এএম

 লক্কর-ঝক্কর বাস-মিনিবাস, টেম্পু, হিউম্যান হলার। ৮০ ভাগ যানবাহনের নেই ফিটনেস সনদ। সড়কে অবৈধ ছোট যান ও রিকশার ঢল। নিষিদ্ধ হলেও মহাসড়কে ছোট গাড়ির দাপট। দিনের বেলায়ও নগরীতে চলছে ট্রাকসহ ভারী যানবাহন। গলাকাটা ভাড়া, পরিবহন চালকদের ট্রাফিক আইন না মানা এবং যাত্রী ধরতে সড়কে প্রতিযোগিতা নিত্যদিনের ঘটনা। এমনই নৈরাজ্য চলছে চট্টগ্রামের গণপরিবহনে।
রাস্তায় নেমেই দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। সড়ক দুর্ঘটনায় বেঘোরে মৃত্যুর মিছিল কেবলই দীর্ঘ হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে দুর্ঘটনায় আহতদের আহাজারি এখন নিয়মিত ঘটনা। সড়কে দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ববরণ করছে অগণিত কর্মক্ষম মানুষ। বছরের পর বছর এমন নৈরাজ্য চললেও পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা আনার কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। জনগুরুত্বপূর্ণ এ বিষয় নিয়ে মাথা ঘামান না সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা। জিম্মি হচ্ছে সাধারণ মানুষ। দেশের অন্যান্য এলাকার মতো চট্টগ্রাম অঞ্চলেও গত ১০ বছরে পরিবহন খাতে কোন শৃঙ্খলা আসেনি। ওয়ান ইলেভেনের পর এ খাতে শৃঙ্খলা আনতে বেশকিছু উদ্যোগ নেয়া হলেও তত্ত¡াবধায়ক পরবর্তী সময়ে সেই ফাইল চাপা পড়ে যায়। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ মহানগরীতে ৬০ লাখ মানুষের বসবাস। দেশের সবচেয়ে বড় ইপিজেড সিইপিজেড ছাড়াও দু’টি ইপিজেড ও শিল্পাঞ্চলগুলোতে কর্মরত রয়েছে ১০ লক্ষাধিক শ্রমিক। এত বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্য নেই পর্যাপ্ত গণপরিবহন। রুট পারমিট নিয়েও বিভিন্ন রুটে বাস-মিনিবাস চালায় না পরিবহন মালিকেরা। বিআরটিসির দু’একটি বাস থাকলেও এসব বাস সড়কের পাশে পরিত্যক্ত অবস্থায় দেখা যায়।
পরিবহন সঙ্কটকে পুঁজি করে সরকারি দলের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নামে অবৈধ ছোট যানবাহনের ঢল নেমেছে নগরীতে। বিআরটিএর লাইসেন্স ছাড়াই নগরীর অলিগলি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে টমটম, ইজিবাইক, লেগুনাসহ হরেক যানবাহন। বৈধ ১৩ হাজার অটোরিকশার পাশাপাশি চলছে আরও অন্তত ১০ হাজার অবৈধ অটোরিকশা। সিটি কর্পোরেশনের হিসেবে নগরীতে বৈধ রিক্সার সংখ্যা ৫২ হাজার। বাস্তবে রিক্সা চলাচল করছে তিন লাখের বেশি। বিভিন্ন সংগঠনের নামে সাইনবোর্ড লাগিয়ে এসব অবৈধ রিক্সা চলছে বছরের পর বছর।
এমনিতে পরিবহন সঙ্কট তার উপর অফিস শুরু ও ছুটির সময় গণপরিবহনের প্রায় ৭০ ভাগ বাস-মিনিবাস রিজার্ভ ভাড়ায় শ্রমিক পরিবহনে ব্যস্ত থাকে। এ সুযোগে আদায় করা হয় গলাকাটা ভাড়া। বাস-মিনিবাসে সর্বনিম্ন ভাড়া পাঁচ টাকা হলেও অফিস শুরু ও ছুটির সময় সর্বোচ্চ ২০ টাকাও আদায় করা হয়। একই অবস্থা মহানগরী থেকে উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের শতাধিক রুটেও। বৃহস্পতিবার বিকেলে এবং রোববার সকালে প্রায় প্রতিটি রুটে তীব্র পরিবহন সঙ্কট দেখা দেয়।
ভাড়া নৈরাজ্যের পাশাপাশি প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। টেম্পো ও হিউম্যান হলার চালকদের বেশিরভাগই বয়সে কিশোর কিংবা উঠতি যুবক। অভিযোগ রয়েছে, বৈধ-অবৈধ সব যানবাহন পুলিশ ও পরিবহন সংগঠনের নেতাদের নিয়মিত চাঁদা দেয়। পুলিশের এ টোকেন বাণিজ্যই পরিবহন খাতে নৈরাজ্যের অন্যতম কারণ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
ট্রাফিক আইন মানে না পরিবহন চালক ও শ্রমিকেরা। পুলিশকে মাসোহারা দিয়েই বেপরোয়া হয়ে উঠে চালকেরা। যত্রতত্র যাত্রী উঠানামার ফলে নগরীতে হচ্ছে তীব্র যানজট। বড় বাসের বদলে অসংখ্য ছোট গাড়ির কারণে মহানগরী এবং মহাসড়ক গুলোতে যানজট স্থায়ী রূপ নিয়েছে। ট্রাফিক পুলিশের নাকের ডগায় নগরীর বিভিন্ন সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান। মহাসড়কে তিন চাকার গাড়ি নিষিদ্ধ হয়েছে অনেক আগে। কিন্তু প্রকাশ্যে চলছে এসব ছোট যানবাহন। আর এ কারণে যানজটের পাশাপাশি দুর্ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। পরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে বিভিন্ন সময়ে নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও তার কোনটিই বাস্তবায়ন হয়না। ফলে যাত্রীদের দুর্ভোগ আর জিম্মিদশা কেবলই বাড়ছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম

৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ