মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
গতকাল সোমবার প্রকাশিত আসামের নাগরিক তালিকায় স্থান মেলেনি নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা ৪০ লাখেরও বেশি অধিবাসীর। সেখানকার নিবন্ধনকারী সূত্রের বরাতে বলা হয়, ন্যাশনাল রেজিস্ট্রার অব সিটিজেন্স (এনআরসি) বা জাতীয় নাগরিকপঞ্জি তালিকায় স্থান না পাওয়ার কারণে এই অধিবাসীদের ভবিষ্যত এখন শঙ্কার মধ্যে। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা আবারো নাগরিকত্ব পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে পারবে। রয়টার্স, আল জাজিরা ও আনন্দবাজার পত্রিকা।
চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা প্রকাশকে ঘিরে রোববার থেকেই আসামে বিরাজ করছিল থমথমে অবস্থা। সোমবার দুপুরে আসামের রাজধানী গৌহাটি থেকে রেজিস্ট্রার জেনারেল অব ইন্ডিয়া চূড়ান্ত জাতীয় নাগরিকত্ব নিবন্ধন তালিকা উন্মুক্ত করেন। প্রথম ধাপে এক কোটি ৯০ লাখ অধিবাসীকে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তবে বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার কারণে চ‚ড়ান্ত তালিকায় সেখান থেকে দেড় লাখ অধিবাসীকে বাদ দেয়ার কথা ছিল। তাদের পাশাপাশি প্রথম ধাপে তালিকায় স্থান না পাওয়া এক কোটি ৩৯ লাখ অধিবাসীর ভাগ্যও নির্ধারিত হওয়ার দিন ছিল সোমবার। ২২ লাখ পৃষ্ঠার এই নাগরিক তালিকাকে ঘিরে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ যখন তুঙ্গে, আল জাজিরা জানায়, নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা তিন কোটি ২৯ লাখ অধিবাসীর মধ্যে দুই কোটি ৮৯ লাখকে চূড়ান্ত নাগরিকত্ব তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রয়টার্স নিবন্ধন সংশ্লিষ্ট স‚ত্রের বরাতে জানায়, ৪০ লাখ সাত হাজার ৭০৭ জন তালিকায় স্থান পায়নি।
তালিকা প্রকাশকে ঘিরে আগামী ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তাদের যাবতীয় ছুটি বাতিল করা হয়েছে। মোতায়েন হয়েছে আধা-সামরিক কেন্দ্রীয় বাহিনীর ২০ হাজারেরও বেশি সদস্য। নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে বাংলাদেশ সীমান্তে। আসামের সঙ্গে মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম, মনিপুর এবং পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। প্রকাশিত তালিকাকে ঘিরে সেখানে পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে একজন কর্মকর্তা বলেছেন, তালিকায় যাদের স্থান মেলেনি, তাদের এক্ষুণি দেশ থেকে বের করে দেয়া হবে না। তারা নাগরিকত্ব পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
মুসলিম জনসংখ্যার দিক থেকে আসামের অবস্থান ভারতে দ্বিতীয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ২০১৬ সালে আসামে সরকার গঠন করে। বিজেপি সরকার আসার পরই বাংলাদেশি উদ্বাস্তু উৎখাতে উদ্যোগী হয় আসাম সরকার। কে বাংলাদেশ থেকে এসেছে আর কে আসামের বাসিন্দা এ নিয়ে চলছে টানাপড়েন। অনুপ্রবেশকারীরা স্থানীয় হিন্দুদের কর্মসংস্থান নষ্ট করছে দাবি করে ‘অবৈধ’ মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার শপথ নিয়েছিল তারা। এরই ধারাবাহিকতায় একটি আদমশুমারি চালানো হয়। ১৯৫১ সালের পর এটিই আসামে পরিচালিত প্রথম আদমশুমারি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিজেপি হিন্দুত্ববাদী প্রচারণায় জোর দিচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, আসামে নাগরিকত্বের পরীক্ষাসহ বিভাজনমূলক কর্মস‚চি এরই মধ্যে জাতিগত ও সা¤প্রদায়িক সহিংসতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এনসিআরের খসড়া তালিকাটি নতুন করে সহিংসতা উস্কে দেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত কয়েক দশক ধরে বাংলা ভাষাভাষীদের সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। যার ফলে ‘বাঙালি বনাম আসামীয়’র মতো বিভাজনমূলক ধারণা আসামের রাজনীতিতে গেড়ে বসেছে। অনেক বছর ধরেই আসামে ‘বহিরাগতদের’ বিরুদ্ধে প্রবল আন্দোলন চলছে। প্রাথমিকভাবে ওই আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল নৃতাত্তি¡কভাবে যারা আসামীয় নয় তাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু এখন ‘বহিরাগত’ বলতে ‘বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অভিবাসী’ বোঝানো হচ্ছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এই ‘বহিরাগতবিরোধী’ প্রচারণাকে ব্যবহার করেই ২০০৬ সালে রাজ্যটিতে ক্ষমতাসীন হয়। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ‘বহিরাগতদের’ কারণে আসামের পরিচয় ‘বিনষ্ট’ হওয়া রুখতে তারা জাতীয় নাগরিকত্বের তালিকা হালনাগাদ করবে। আর হয়েছেও তাই। প্রথম ধাপে হালনাগাদ করা তালিকায় নাম নেই অনেক বাংলাভাষী মানুষের। কয়েক প্রজন্ম ধরে আসামে বসবাসকারীদেরও নাগরিকত্বের তালিকায় নাম ওঠেনি। দেখা গেছে, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী বাংলাভাষী তিনটি প্রশাসনিক এলাকার বেশির ভাগ আবেদনকারী তালিকাভুক্ত হননি। চূড়ান্ত তালিকা থেকেও ৪০ লাখ অধিবাসী বাদ পড়েছেন।
ভারতে ‘ইলিগ্যাল মাইগ্রেন্টস ডিটারমিনেশন বাই ল’ বা আইএমডিটি নামের অবৈধ অভিবাসী সংক্রান্ত আগের যে আইনটি ছিল তাতে বলা হয়েছিল, যতক্ষণ না পর্যন্ত অবৈধ হিসেবে প্রমাণিত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত নাগরিকত্ব বহাল থাকবে। তবে ২০০৫ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ওই আইনের সেই ধারাটি উল্টে দিয়েছে, যার ভিত্তিতে চালু থাকা জাতীয় নাগরিকত্ব হালনাগাদ প্রকল্প এখন লাখ লাখ মানুষের ঘরছাড়া হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। অবৈধ অভিবাসী সংক্রান্ত নতুন আইনে বলা হয়েছে, যাদের নাগরিকত্ব নিয়ে সরকার নিশ্চিত নয়, তাদের নিজেদেরই নাগরিকত্বের প্রমাণ হাজির করতে হবে। ভারতীয় নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পেতে হলে আসামের সকল বাসিন্দাকে প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে যে, তারা ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে থেকে সেখানে আছে। তবে বাংলাদেশি মুসলিমদের কেউ কেউ বলছেন, তাদের পূর্বসূরিরা এসব প্রমাণ বা নথি সংরক্ষণ করার কথা বুঝতে পারেননি। এ অবস্থায় নাগরিক প্রমাণের মতো যথেষ্ট কাগজপত্র অনেকের নেই।
আসামের খসড়া ন্যাশনাল রেজিস্ট্রার অব সিটিজেন্স (এনআরসি) বা নাগরিকপঞ্জির এই তালিকা প্রকাশের কিছুুক্ষণ পরই এ নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, এই ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। বাঙালি তাড়াও অভিযান চলছে। ভোট রাজনীতি করতে গিয়ে বিভাজনে উস্কানি দিচ্ছে কেন্দ্র। এই ৪০ লাখ লোকের ভবিষ্যৎ কী হবে? এই বিপুল সংখ্যক মানুষের পুনর্বাসন প্যাকেজ নিয়ে কিছু ভেবেছে কেন্দ্র? নিজের দেশের মধ্যেই উদ্বাস্তু হয়ে পড়বে এই মানুষগুলো। যদি পুশব্যাক হয়, অর্থাৎ বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেয়া হয় এবং বাংলাদেশ যদি তাদের না নেয়, তাহলে তারা কোথায় যাবে?
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যদি আসাম থেকে বিতাড়িত হয়ে কেউ বাংলায় আশ্রয় চায়, তা হলে রাজ্যসরকার ভেবে দেখবে। তিনি বলেন, জাতিসংঘের নির্দেশনা অনুসারে উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দেয়া বাধ্যতামূলক। আসামের নাগরিকপঞ্জি থেকে যদি বিপুল সংখ্যক নাম বাদ পড়ে, তা হলে বাংলার উপরেই সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে জানা সত্তে¡ও বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার কোনো আলোচনা তার সঙ্গে করেনি বলে অভিযোগ করেন মমতা। তিনি বলেন, যে ৪০ লাখ নাম তালিকায় ওঠেনি, তাদের মধ্যে হিন্দু-মুসলিম সব ধর্মের বাঙালিই রয়েছেন। বিহার থেকে আসামে যাওয়া অনেকের নামও তালিকায় রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আসামের পরিস্থিতি দেখে আসার জন্য তৃণমূলের তরফ থেকে সংসদীয় দল পাঠানো হবে। প্রয়োজন হলে তিনি নিজেও আসাম যেতে পারেন।
এদিকে এ ঘটনার প্রেক্ষিতে আসামে অশান্তির আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। সেই আশঙ্কা থেকেই আসাম জুড়ে নিরাপত্তার বন্দোবস্ত জোরদার করা হয়েছে। সেনাবাহিনীকে যে কোনো পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে বলা হয়েছে। আসাম ও প্রতিবেশী রাজ্যগুলোতে ২২ হাজার আধাসেনা পাঠানো হয়েছে। রাজ্য পুলিশকে চ‚ড়ান্ত সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে।
আসাম থেকে ফেরত আসলো ৫২ বাংলাদেশী
কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জানান, ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের অপরাধে বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ শেষে কুড়িগ্রামের রৌমারী সীমান্ত দিয়ে দেশে ফিরেছে শিশুসহ ৫২ বাংলাদেশী নারী-পুরুষ। গতকাল সোমবার দুপুরে আইনী প্রক্রিয়া শেষে তাদের নিজ নিজ আত্মীয়-স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে রৌমারী থানা পুলিশ। এসময় উপস্থিত ছিলেন রৌমারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম, রৌমারী থানার পরিদর্শক (তদন্ত ওসি) মোন্তাছির বিল্লাহ্ ও রৌমারী চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মামুনর রশিদ।
এর আগে রৌমারী উপজেলার আন্তর্জাতিক মেইন পিলার ১০৬৫ নিকট দিয়ে গত রোববার সন্ধ্যার দিকে রৌমারী ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে তাদের হস্তান্তর করে ভারতের মানকার চর ইমিগ্রেশন পুলিশ।
জানা গেছে, বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় আসামের শানমারা ও মানকার চর থেকে আটক করে কারাগারে পাঠায়। অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে কারাভোগের পর তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। ভারতে কারাভোগের পর ফেরত আসা ব্যক্তিদের মধ্যে, কুড়িগ্রামে ৭, শেরপুর ও জামালপুরে ৪ জন করে, নরসিংদী, গাইবান্ধা ও সিরাজগঞ্জে ৩ জন করে, ঢাকা, গোপালগঞ্জ, দিনাজপুর, সিলেট, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, ময়মনসিংহ ২ জন করে এবং কুমিল্লা, পিরোজপুর, টাঙাইল, ঝিনাইদহ, মাদারীপুর, বরিশাল, লালমনিরহাট, নেত্রকোনা, নড়াইল, চাঁদপুর ও ফরিদপুরে ১ জন করে মোট ৫২ জন বাংলাদেশীকে ফেরত পাঠানো হয়।
রৌমারী চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মামুনর রশিদ জানায়, শিশুসহ ৫২ নারী-পুরুষকে রৌমারী থানার পুলিশের কাছে সোপর্দ করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ও ভারতীয় পুলিশ। এর মধ্যে ৯ নারী ৪৩ জন পুরুষকে (রৌমারী থানা ও বিজিবি) গ্রহণ করেন। রৌমারী থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম জানান, হস্তান্তরকৃতরা অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে যাওয়ায় সময় আসামের শালমারা ও মানকার চর পুলিশের আটক করে কারাগারে পাঠায়। এরপর বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ করার পর বাংলাদেশ-ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যোগোযোগের প্রেক্ষিতে ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যমে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।