আসামের জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকরণের (এনআরসি) চূড়ান্ত খসড়া তালিকায় ৪০ লাখেরও বেশি বাঙালির নাম বাদ দেয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তারা ভারতের নাগরিকত্ব হারিয়েছেন।
মাতৃভূমি ভারতে রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়া এসব বাঙালিকে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এ অবস্থায় মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের মতোই এসব ভারতীয় বাঙালিকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
স্থানীয় সময় আজ সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে আসামের সব এনআরসি সেবাকেন্দ্র থেকে অনলাইনে নাগরিক পঞ্জির চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে।
তালিকাভুক্ত হতে মোট তিন কোটি ২৯ লাখ ৯১ হাজার ৩৮৪ জন আবেদন করলেও দুই কোটি ৮৯ লাখ ৮৩ হাজার ৬৭৭ জন পঞ্জিতে জায়গা পেয়েছেন। তালিকা থেকে ৪০ লাখ সাত হাজার ৭০৭ জন বাদ পড়েছেন বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্স।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে কত সংখ্যা মানুষ অবৈধভাবে আসামে অভিবাসন করেছে তা জানতে ১৯৫১ সালের পর প্রথমবারের মতো নাগরিক পঞ্জি হালনাগাদ করা হচ্ছে, যার চূড়ান্ত খসড়ার বাইরে রাখা হয়েছে প্রায় ৪০ লাখ মানুষকে।
এদিকে এনআরসি কর্মকর্তারা বলছেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে থেকে যারা ভারতে রয়েছেন, তাদের নাম, ঠিকানা ও ছবি খসড়া তালিকায় আছে।
যদি কারও নাম তালিকায় না থাকে, তবে তাকে নিজের এলাকার এনআরসি সেবাকেন্দ্র থেকে ফরম নিয়ে আবেদন করতে হবে। ফরম পাওয়ার পর কর্তৃপক্ষ জানাবে, কেন বাদ পড়েছে তার নাম। আগামী ৭ আগস্ট থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সেবাকেন্দ্রগুলোতে এ ফরম পাওয়া যাবে।
এর পর নিজেকে ভারতীয় নাগরিক দাবি করতে হলে একটি ফরম পূরণ করতে হবে। আগামী ৩০ আগস্ট থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ ফরম পাওয়া যাবে। এর পর শুনানির মাধ্যমে আবেদন নিষ্পত্তি করা হবে।
জানা গেছে, নাগরিক তালিকা প্রকাশ সামনে রেখে অভূতপূর্ব নিরাপত্তাবলয় তৈরি হয়েছে আসামে। বরপেটা, দারাং, ডিমা হাসাও, শোনিতপুর, করিমগঞ্জ, গোলাঘাট ও ধুবড়িতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি ২২০ কোম্পানি (২২ হাজার) সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
এনআরসির চূড়ান্ত তারিকা প্রকাশ উপলক্ষে শুধু আসামই নয়, প্রতিবেশী পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড ও অরুণাচল প্রদেশও তাদের সীমান্তে জারি করেছে কড়া নজরদারি।
উল্লেখ্য, আসামের হিন্দুত্ববাদী ও উগ্র জাতীয়তাবাদী অহমীয়রা বাঙালিদের দেশ ছাড়া করে তাদের জায়গাজমি লুটে নেয়ার মতলবে দীর্ঘদিন ধরে মিথ্যা প্রচার চালিয়ে আসছিল। তাদের দাবি, আসামের বাঙালিরা বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী।
উগ্রপন্থীদের দাবির মুখে ২০১৫ সাল থেকে আসামে জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকরণ কর্মসূচি শুরু হয়। এতে নাম তালিকাভুক্ত করতে আসামের ৬৮ লাখ ২৭ হাজার পরিবার থেকে ৩ কোটি ২৯ লাখ মানুষ আবেদন করেছিলেন।
প্রথম দফায় গত ৩১ ডিসেম্বর মাত্র এক কোটি ৯০ লাখ ব্যক্তিকে এনআরসিতে তালিকাভুক্ত করা হয়। ওই তালিকা থেকে প্রায় ৭০ শতাংশ বাঙালির নাম বাদ পড়ে যায়। এ নিয়ে আসামে কয়েক পুরুষ ধরে বসবাসকারী বাঙালি নাগরিকদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ে।
তবে ওই সময় এনআরসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, চূড়ান্ত খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হলে সবার উৎকণ্ঠা দূর হবে। কিন্তু আজ সেই তালিকাতে ৪০ লাখ মানুষকে বাদ দেয়া হয়েছে। এখন ভিটেমাটির পাশাপাশি দেশ হারানোর ভয় জেঁকে ধরেছে এসব মানুষকে।