Inqilab Logo

বুধবার, ২৯ মে ২০২৪, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

মাদক মামলার বন্দিদের জন্য বিশেষ কারাগার চায় র‌্যাব

স্টাফ রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ৩০ জুলাই, ২০১৮, ১২:০১ এএম

 বিদ্যমান মাদক মামলার বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা রোধে দেশের প্রতিটি জেলায় জেলায় বিশেষ কারাগার স্থাপন এবং বঙ্গোপসাগরের দ্বীপে বিশেষ একটি কারাগার স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছেন র‌্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ। তিনি বলেন, অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের নিয়ে দেশের ৬৪টি জেলায় মাদকবিরোধী বিশেষ আদালত করা যেতে পারে। যাতে অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। প্রতিটি জেলায় তিনজন সদস্য নিয়ে এ আদালত গঠিত হবে। গতকাল দুপুরে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁ হোটেলে মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসনরোধে প্রণীত অ্যাকশন প্লান বাস্তবায়ন শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।
মাদক কারবারীদের বিরুদ্ধে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বেনজীর আহমেদ বলেন, দেশ থেকে মাদক নির্মূল করা হবে। কক্সবাজারে মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন। আমি দেখি আরো অনেক জায়গায় মাদকের আগ্রাসন থাকা সত্তে¡ও স্থানীয় সাংবাদিকরা সেটা নিয়ে লিখেন না। তারা কী ভয় পান? আপনাদের অভয় দিয়ে বলতে চাই, মাদকের গডফাদারদের হাত চ‚র্ণ-বিচ‚র্ণ করে দেবো।
র‌্যাব ডিজি বলেন, সাংবাদিকতায় অনেক নীতি-নৈতিকতা ও দায়বদ্ধতার জায়গা আছে। সেই দায়বদ্ধতা থেকে আপনাদের মাদকের বিরুদ্ধে লিখতে হবে। যেভাবে দেশকে জঙ্গিমুক্ত করেছি, সেভাবে দেশকেও মাদকমুক্ত করবো। এটা করা সম্ভব। পৃথিবীর কোন দেশ মাদকমুক্ত নয়। একটু হলেও মাদকের ব্যবহার আছে। তবে আমরা চাইলে মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।
র‌্যাব প্রধান বলেন, কক্সবাজারে ৮টি উপজেলা আছে। প্রয়োজনে ৮টি উপজেলায় আলাদা আলাদা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। মাদকের জন্য জনসংখ্যার ভয়াবহতাও দায়ী। শুধু ঢাকা শহরেই জনসংখ্যা ২ কোটি। পক্ষান্তরে পুরো অস্ট্রেলিয়ার জনসংখ্যা ২ কোটি। অর্থাৎ অস্ট্রেলিয়ার মতো বিশাল একটি দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য যেমন বেগ পেতে হয় শুধুমাত্র ঢাকার জন্য একই বেগ পেতে হয়।
বিশেষ কারাগার স্থাপন প্রসঙ্গে র‌্যাব ডিজি বলেন, মাদকের মামলায় আটক আসামিদের জন্য আলাদা বিশেষ কারাগার স্থাপন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বঙ্গোপসাগরে একটা দ্বীপ আইডেন্টিফাই করা যেতে পারে বা বিচ্ছিন্ন কোনো এলাকা। যেখানে ৭০ হাজার থেকে এক লাখ আসামি রাখা যাবে। ৩ মে থেকে আমরা যখন মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি সে সময় অনেকেই সমালোচনা করেছেন। এখন তারা চুপ হয়ে গেছে। আমরা স্পষ্ট কথায় বলে দিচ্ছি কারও কোনো সমালোচনায় আমরা ধার ধারি না।
মাদকের মামলার দ্রæত বিচারের ওপর জোর দিয়ে বেনজীর আহমেদ বলেন, র‌্যাবের মাদকবিরোধী অভিযানে এ পর্যন্ত ৫৫ জন নিহত এবং ১১ হাজারেরও বেশি মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় জঙ্গিবাদ ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছি। এবারও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা বিজয়ী না হয়ে ফিরব না। সরকার ও রাষ্ট্রের ১৬ কোটি জনগণের ডিমান্ডের প্রেক্ষিতে মাদকেরবিরোধী অভিযান চলবে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (ডিএনসি) আয়োজনে কর্মশালায় ১৬টি মন্ত্রণালয়ের ৫০ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন। অ্যাকশন প্লানের পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের (মাদকদ্রব্য অনুবিভাগ) অতিরিক্ত সচিব আতিকুল হক।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী বলেন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সময় স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি ডোপ টেস্টের জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বেসরকারি চাকরিতে নিয়োগ কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সময়ও ডোপ টেস্টের বিষয়ে ভাবা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী শেষ পর্যন্ত মাদকবিরোধী অভিযান চলবে।
বর্তমান মাদক আইনে ধরা পড়ছে দুর্বলরা, যাদের কাছে ১০-১৫ পিস ইয়াবা রয়েছে। কিন্তু পর্দার অন্তরালে যারা রয়েছেন, যারা অর্থদাতা বা গডফাদাররা ধরা পড়ছেন না। বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীদেরকেও নতুন আইনের আওতায় আনা হবে। মাদকবিরোধী নতুন আইনটি চুড়ান্ত হয়েছে, আশা করছি দুই সপ্তাহের মধ্যে এটি সংসদে উত্থাপন করতে পারব।
ডিএনসি ডিজি মো. জামাল উদ্দীন আহম্মদ বলেন, সারাদেশে সাড়ে ৪০০ অপারেশনাল ফোর্সসহ মোট জনবল প্রায় ১৭০০। আর যানবাহন রয়েছে ৫১টি। তবে সরকার আরও ৫০টি যানবাহন এবং জনবল ৮ হাজারে উন্নীত করার উদ্যোগ নিয়েছে।
সংশিষ্টরা বলছেন, আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যুগে মাদক ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে মাদক ব্যবসার কৌশল। একদিকে নতুন মাদকের আগ্রাসন অন্যদিকে বিভিন্ন শ্রেণির ব্যক্তিদের মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ততা পরিস্থিতিকে ভয়াবহ করে তুলছে। ইয়াবা নামক মরণ নেশার হাত থেকে জাতিকে রক্ষা করতে হলে প্রয়োজন মাদক বিরোধী সর্বাত্মক সামাজিক সচেতনতা ও সকল বাহিনীর সমন্বয়ে যৌথ অভিযান।
মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে ডিএনসি প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সীমিত জনবল ও লজিস্টিকস দিয়ে অধিদফতরের পক্ষে মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন রোধ করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এজন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসার আহবান জানান।



 

Show all comments
  • Yasir Arafat Mollick ৩০ জুলাই, ২০১৮, ১২:১১ পিএম says : 0
    Right decision
    Total Reply(0) Reply
  • Umar Faruque ৩০ জুলাই, ২০১৮, ১২:১১ পিএম says : 0
    পুরা দেশটাই তো এখন কারাগার
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাদক

২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ