Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দেশের ১ কোটি ৫৯ লাখ মানুষ সড়ক সুবিধাবঞ্চিত

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৬ জুলাই, ২০১৮, ১২:০১ এএম

দেশের সড়ক মহাসড়ক উন্নয়নে গত পাঁচ বছরে বরাদ্দ ছিল ৩০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রম ও ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেন বাদ দিলেও এ বরাদ্দ দাঁড়ায় সাড়ে ২১ হাজার কোটি টাকার বেশি। অথচ এই পাঁচ বছরে দেশে সড়ক-মহাসড়কের দৈর্ঘ্য এক বাড়েনি। যোগ হয়নি এক কিালোমিটার সড়কও। দেশের সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে প্রতি বছরই বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ছে। গত কয়েক বছরে এই বরাদ্দ রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে। মহাসড়ক ছাড়াও গ্রামীণ সড়ক নির্মাণেও ক্রমান্বয়ে বাড়ানো হচ্ছে বরাদ্দ। গ্রামীণ এলাকায় নতুন নতুন সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এতোকিছুর পরেও দেশের জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশ এখনও রয়ে গেছে সড়ক সুবিধার আওতার বাইরে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, বর্তমানে এর পরিমাণ এক কোটি ৫৯ লাখ, বিশ্বে যা চতুর্থ সর্বোচ্চ। এ তালিকার শীর্ষ তিন দেশই হলো আফ্রিকার।
সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের‘অ্যাটলাস অব সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস ২০১৮: ফ্রম ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট ইন্ডিকেটরস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। জনসংখ্যার ঘনত্ব, নগরায়নের হার, অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাত্রা ও গ্রামীণ অবকাঠামো ইনডেক্সের ভিত্তিতে সড়ক নেটওয়ার্ক যাচাই-বাছাই করা হয়েছে।
বিশ্ব ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের আটটি দেশে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ সড়ক নেটওয়ার্কের বাইরে রয়েছে। দেশগুলোর মোট জনসংখ্যা ৪৬ কোটি ১৭ লাখ। আর সড়ক নেটওয়ার্কের বাইরে রয়েছে প্রায় ১৭ কোটি ৪২ লাখ মানুষ। এর মধ্যে ছয়টি দেশই আফ্রিকা মহাদেশের। বাকি দুটি দক্ষিণ এশিয়ার। দেশগুলোতে কমপক্ষে দুই কিলোমিটার পথ নৌকায় বা হেঁটে গিয়ে প্রধান সড়কে উঠতে হয়। এরপর মানুষ বিভিন্ন স্থানে ও শহরে যাতায়াত করতে হয়।
বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সড়ক সুবিধাবঞ্চিত ইথিওপিয়ার জনগোষ্ঠী। দেশটির ৬ কোটি ৩৭ লাখ মানুষের যাতায়াতে প্রধান সড়ক ব্যবহারের সুযোগ পায় না। তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে তানজানিয়া। দেশটির তিন কোটি ২৮ লাখ মানুষ সড়কের সুবিধাবঞ্চিত। তৃতীয় অবস্থানে থাকা উগান্ডার এক কোটি ৬৩ লাখ মানুষ সড়কের সুবিধাবঞ্চিত।
বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে আফ্রিকার দারিদ্র্যপীড়িত এ দেশগুলোর পর চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এ দেশের এক কোটি ৫৯ লাখ মানুষ সড়ক নেটওয়ার্ক সুবিধার বাইরে রয়েছে। সড়ক নেটওয়ার্কের সুবিধাবঞ্চিত শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে পঞ্চম ও ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে আফ্রিকার দারিদ্র্যপীড়িত আরও দুই দেশ মোজাম্বিক ও কেনিয়া। দেশ দুটির যথাক্রমে এক কোটি ৫০ লাখ ও এক কোটি ৩৩ লাখ মানুষ সড়ক নেটওয়ার্কের বাইরে রয়েছে। তালিকায় সপ্তম অবস্থানে রয়েছে নেপাল। দেশটির এক কোটি তিন লাখ মানুষ সড়ক নেটওয়ার্কের বাইরে রয়েছে। আর অষ্টম অবস্থানে রয়েছে আফ্রিকা মহাদেশের জাম্বিয়া। দেশটির ৬৯ লাখ মানুষ সড়ক ব্যবহারের সুবিধাবঞ্চিত।
বিশ্বব্যাংকের গত বছর প্রকাশিত ‘অ্যাটলাস অব সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস ২০১৭’-শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, দেশে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) অধীনে তিন লাখ ২৫ হাজার ৬৮১ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে ৩২ শতাংশ পাকা সড়ক। সারা দেশে সড়ক নেটওয়ার্কের মধ্যে ২১ হাজার ৩০২ কিলোমিটার সওজের অধীন। আর বাকি তিন লাখ চার হাজার ৩৭৯ কিলোমিটার ফিডার বা গ্রামীণ সড়ক। এর মধ্যে মাত্র ৫৩ হাজার ৩১৬ কিলোমিটার ভালো অবস্থায় আছে।
এতে আরও বলা হয়, দেশের সবচেয়ে কম সড়ক নেটওয়ার্ক রয়েছে খাগড়াছড়িতে। এরপর রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও সুনামগঞ্জ জেলায়। দেশে প্রতি ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে সড়কের পরিমাণ ১৯২ কিলোমিটার। তবে জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় মাথাপিছু সড়কের দিক থেকে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
এর আগে ২০১৪ সালে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়, মাথাপিছু সড়কের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান তলানিতে। এতে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রতি হাজার মানুষের জন্য সড়ক রয়েছে মাত্র দশমিক ১০ কিলোমিটার। অথচ মালদ্বীপে প্রতি হাজার মানুষের জন্য সড়ক রয়েছে দশমিক ৩০ কিলোমিটার, নেপালে ৮০, পাকিস্তানে এক দশমিক ৫০, আফগানিস্তানে এক দশমিক ৬০, ভারতে তিন দশমিক ৫০, শ্রীলঙ্কায় পাঁচ দশমিক ৫০ ও ভুটানে ৯ দশমিক ৭০ কিলোমিটার।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট সড়কের মাত্র ১০ শতাংশ পাকা। যেখানে আফগানিস্তানে পাকা সড়ক ২৯ শতাংশ, ভুটানে ৪০, ভারতে ৫০, নেপালে ৫৪, পাকিস্তানে ৭২ ও শ্রীলংকায় ৮১ শতাংশ। আর মালদ্বীপের শতভাগ সড়কই পাকা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিশ্বব্যাংক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ