Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিশেষ ক্ষমতা আইনের বিলুপ্ত ধারায় গ্রেফতার

| প্রকাশের সময় : ২৫ জুলাই, ২০১৮, ১২:০৪ এএম

চুয়াত্তর সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৬(২) ধারা ২৮ বছর আগে বিলুপ্ত হলেও এখনো দেশের বিভিন্ন থানায় এই ধারায় মামলা ও গ্রেফতার করছে পুলিশ। গতকাল পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানায় দায়ের করা একটি মামলায় আগাম জামিন নিতে আসা দুই আসামীর পিটিশনের শুনানী শেষে বিলুপ্ত ধারায় মামলা দায়ের এবং গ্রেফতারের ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আদালত। ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৬,১৭,১৮ ধারাসহ বেশকিছু ধারা ইতিমধ্যে বাতিল হয়ে গেলেও দেশের বিভিন্ন থানায় এসব বিলুপ্ত ধারায় এখনো মামলা ও গ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে বলে জানা যায়। কথিত মামলায় গোপণ বৈঠকের অভিযোগে১৬(২) ও ২৫(ঘ) ধারায় ৩৬জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছিল সিঙ্গাইর থানার পুলিশ। এদের মধ্যে গ্রেফতার হওয়া দুই আসামী উচ্চ আদালতে আগাম জামিন চাইতে গেলে বিচারপতি এনায়েতুর রহীম এবং বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের দ্বৈত বেঞ্চ এসব বিলুপ্ত ধারায় মামলার বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশের পাশাপাশি এসব বিলুপ্ত ধারায় মামলা বা গ্রেফতার বন্ধ করার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পুলিশ মহাপরিদর্শকের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। বিশেষত বিএনপিসহ বিরোধিদলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এসব অস্তিত্বহীন ধারায় মামলা ও গ্রেফতার করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অনিশ্চয়তা ও গণতন্ত্রহীনতার কারণে দেশ পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে বলে বিরোধিদল ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে অভিযোগ রয়েছে। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ নানাভাবে ব্যর্থ হলেও বিরোধিদল ও মত দমনে পুলিশের অতি উৎসাহী তৎপরতার কারণে এ ধরনের অভিযোগে পুলিশের নিরপেক্ষতা ও আইনের শাসন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে শুধু পুলিশের উপর দোষ চাপিয়ে লাভ নেই। দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং সরকারের উচ্চ মহলের অপরিনামদর্শি ভ’মিকা এর জন্য দায়ী। পুলিশে নিয়োগ, পদায়ণ ও পদন্নোতিতে মেধা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার মানদন্ডের বদলে দলীয় আনুগত্যের বিবেচনা মূখ্য বিষয় হয়ে উঠায় পুরো পুলিশ বিভাগের কাজে মানের ক্রমাবনতি ঘটছে। বিশেষ ক্ষমতা আইনের বিলুপ্ত ধারায় মামলা দায়ের ও গ্রেফতার প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্য জানিয়েছেন, আইনের ধারার বিলুপ্তি বা অস্তিত্বহীনতা সম্পর্কে তার কোন ধারনা নেই। এমন অজ্ঞ, অদক্ষ ও দায়িত্বজ্ঞানহীন পুলিশ সদস্যের সংখ্যা বেশুমার। প্রতিবছর হাজার হাজার পুলিশ সদস্যকে বিভিন্ন ধরনের অপরাধে বিভাগীয় শাস্তি দেয়া হলেও পুলিশের অপরাধপ্রবণতা কমছে না। সবচেয়ে বিপজ্জনক বিষয় হচ্ছে পুলিশের একটি বড় অংশের মধ্যে পেশাদারিত্ব ও আইনগত নিরপেক্ষতার বদলে দলীয় ক্যাডারের ভ’মিকা দেখা যাচ্ছে। বিরোধি দলের নেতাকর্মীদের দমন করতে এরা যত্রতত্র ৫৪ ধারা, বিলুপ্ত বিশেষ ক্ষমতা আইন এবং বিতর্কিত আইসিটি অ্যাক্টের অপব্যবহার করছে।
পুলিশের পেশাদারিত্ব, কর্মদক্ষতা ও সেবাপরায়ণতার উপর যে কোন দেশের সমাজ ও সভ্যতার মাপকাঠি নির্নীত হয়। আইনের হাত সবচেয়ে লম্বা আর আইনের বাস্তবায়ণ ঘটে পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে। কিন্তু আমাদের পুলিশ বাহিনীর একশ্রেনীর সদস্য শুধুমাত্র বিলুপ্ত ও বিতর্কিত আইনের অপব্যবহারই করছেনা। অনেক ক্ষেত্রে তারা আদালতের নির্দেশনা ও আইনগত বাধ্যবাধকতারও কোন তোয়াক্কা করছেনা। যেখানে পুলিশের সাধারণ দায়িত্বই হচ্ছে ‘দুষ্টের দমন-শিষ্টের লালন’ ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সেখানে এসব পুলিশ সদস্যের ভ’মিকা সম্পুর্ন বিপরীত। দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ ও পদন্নোতি প্রাপ্ত এক শ্রেনীর পুলিশ সদস্যের দলীয় ক্যাডারে পরিনত হওয়া এবং অপরাধপ্রবণতার কারণে কখনো কখনো পুলিশের চেইন অব কমান্ড লঙ্ঘন করে। দেশের গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং নির্বাচন ব্যবস্থায় মানুষের আস্থা পুন:প্রতিষ্ঠার বাস্তবতা নির্ভর করছে পুলিশের মানবিক, পেশাদার ও নিরপেক্ষ ভ’মিকার উপর। সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধি দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানি না করতে ইতমধ্যে একাধিকবার আদালতের নির্দেশনা জারি হলেও সাম্প্রতিক খুলনা, গাজীপুরে এবং এখন সিলেট, রাজশাহী ও বরিশালে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানি বন্ধ হয়নি। এসব ঘটনা স্পষ্টত পুলিশের আদালতের নির্দেশনা অমান্য করার প্রমাণ। সাধারণ মানুষ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং যে কোন বিপদাপদে পুলিশের কাছে আইনগত নিরাপত্তা কামনা করে। কিন্তু পুলিশ জনগনের প্রত্যাশা পুরণে চরমভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। গত রবিবার কুষ্টিয়ার আদালতে জামিন লাভের পর বিশিষ্ট সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানের উপর সন্ত্রাসী হামলার সময় পুলিশের নিস্ক্রিয় ভ’মিকার যে অভিযোগ উঠেছে তা দেশে-বিদেশে আমাদের পুলিশ বাহিনীর পেশাদারিত্বের সুনামকে ক্ষুন্ন করেছে। দেশের মানুষ এমন পুলিশ বাহিনী দেখতে চায় যারা বিলুপ্ত বা বিতর্কিত আইনের অপব্যবহার করবেনা, আইনের শাসন, গণতন্ত্র এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেশাদার ও রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতহীন ভূমিকা পালন করবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিশেষ ক্ষমতা গ্রেফতার
আরও পড়ুন