২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
খাদ্যে ভেজালের রাহু থেকে কিছুতেই মুক্তি মিলছে না আমাদের। ফলমূল যাই খাই না কেন, মনে হয় বিষ খাচ্ছি না তো? আর মনে হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে-ভেজাল, নকল ও নি¤œমানের নানা পণ্যে ছেয়ে গেছে। শিশুর গুড়ো দুধ থেকে বৃদ্ধের ইনসুলিন, রুপচর্চার কসমেটিক থেকে শক্তি বর্ধক ভিটামিন, এমন কি বেঁচে থাকার জন্য যা অপরিহার্য, সেই পানি এবং জীবন রক্ষাকারী ওষুধ পর্যন্ত এখন ভেজালে ভরপুর। মাছ, দুধ, শাক সবজি ও ফলমূলে ফরমালিন, হলুদে সিসা, মরিচে ইটের গুঁড়া, সরষের তেলে কেমিক্যাল, মশার কয়েলে বিপদজনক উপাদান, গরুর গোশতে হরমোন, মরগির খাবারে বিষাক্ত উপকরণ। টোকাই থেকে ধনীর সন্তান, ভেজালের ভয়াবহতা থেকে নিরাপদ নয় কেউ -যেন ভেজালেই জন্ম, ভেজালেই বেড়ে ওঠা, ভেজালের রাজ্যেই বসবাস। আমাদের দেশে খাদ্যে ভেজাল, খাদ্যে বিষক্রিয়ার বিষয়টি নতুন কিছু নয়। সম্প্রতি এর ব্যাপ্তি যে হারে বাড়ছে তাতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। দেশি-আন্তর্জাতিক সব গবেষণায় দেশে খাবারের বিষয়ক্রিয়ার বিষয়টি বারবার উঠে আসছে। ফুটপাথ থেকে শুরু করে অভিজাত হোটেল রেস্টুরেন্ট বা নামিদামি ব্রান্ডের পণ্যও এখন ভেজালমুক্ত নয়।
রমজান মাসকে কেন্দ্র করে ভেজালের ব্যাপকতা আরো বেড়ে যায়। জনসচেতনতা ও প্রশাসনিকভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন ব্যতীত ভেজালের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা অসম্ভব। বিত্রসটিআই রমজান উপলক্ষে বিশেষ অভিযান শুরু করেছিল-এটা স্বস্তিদায়ক। এর ধারাবাহিকতা জরুরি। রমজানে ভোক্তাদের ভেজালমুক্ত খাদ্য এবং পণ্যসামগ্রী সরবরাহ নিশ্চিত করতে রাজধানীসহ সারাদেশে নিয়মিত ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেছে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। গত ১৫/০৫/২০১৮ইং মঙ্গলবার শিল্প মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এ কথা জানান। পাশাপাশি ঢাকা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগেও ঢাকা মহানগরীতে প্রতিদিন অতিরিক্ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনার কর্মসূচি নেয়া হয়েছিল। এছাড়া সারা দেশে বিএসটিআইর আঞ্চলিক অফিসের মাধ্যমে এ ধরনের ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। ভেজালবিরোধী এই অভিযান কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারবে সেটা দেখার বিষয়। ভেজালবিরোধী অভিযান আমরা প্রায়ই দেখি। কোনোভাবে যেন এই চক্রকে দমন করা যাচ্ছে না।
খাদ্যপণ্যে নকল ভেজাল আমাদের দেশের খাদ্য ব্যবসায়ীদের প্রবণতায় পরিণত হয়েছে। রোজায় এবং ঈদ উপলক্ষ্যে এ অভ্যাস আরো বৃদ্ধি পায়। ইফতারি পণ্যে ক্ষতিকর রং এবং অস্বাস্থ্যকর উপকরণের ব্যবহার অহরহ ঘটে। এসব খাবার খেয়ে সাধারণ মানুষ নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। মহাখালী পাবলিক হেলথ ইনস্টিটিউটের খাদ্য পরীক্ষাগারের তথ্যানুযায়ী, দেশের ৫৪ ভাগ খাদ্যপণ্য ভেজাল ও দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলে চিহ্নিত হয়। সারা দেশ থেকে স্যানিটারি ইন্সপেক্টরদের পাঠানো খাদ্যদ্রব্যাদি পরীক্ষাকালে এ তথ্য বেরিয়ে আসে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন এক গবেষণায় বলছে, শুধু ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩ লাক্ষ লোক ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা দেড় লাখ, কিডনি রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ । এ ছাড়া গর্ভবতী মায়ের শারীরিক জটিলতাসহ গর্ভজাত বিকলাঙ্গ শিশুর সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। এই পরিসংখ্যানটি আমাদের ভাবিয়ে না তুলে পারেনা।
১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে খাদ্যে ভেজাল দেয়া এবং ভেজাল খাদ্য বিক্রির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া ১৪ বছরের কারাদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা প্রয়োগ করার কোনো নজির নেই। আমরা আশা করব, রোজার পরেও ভেজালবিরোধী অভিযান কঠোর থাকবে। আইনের যথাযথ প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে। ভেজাল পণ্য ও অসাধু ব্যবসায়ীদের ঠেকাতে এই ধরনের অভিযান নিয়মিত থাকলে ভেজালকারীদের দৌরাত্ম্যে অনেকাংশে কমে আসবে বলে আশা করা যায়। তবে ভেজাল ঠেকাতে সচেতনতার বিকল্প নেই। আইন দিয়ে ভেজাল ঠেকানো সম্ভব নয়। এ জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। অতএব, ভেজালের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে হলে শুধু আইন করে সবকিছু হবে না। র্যাবের ভয় যেখানে ব্যর্থ-রবের ভয়ই পারে সেখানে ভেজাল বন্ধ করতে। রব সব দেখছেন। রবের ভয় থাকলে কেউ ভেজালের মতো অপকর্ম করতে পারে না। এজন্য প্রয়োজন নৈতিক প্রশিক্ষণ।
ষ মো: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক,আম্বরখানা পয়েন্ট,সিলেট।
মোবা : ০১৭১৬২৭০১২০
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।