চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
তিন
কোরআন-হাদীস দ্বারা প্রমাণিত একমাত্র কাফিররাই নবী (সাঃ)কে আমাদের মত দোষে-গুণে মানুষ, তাঁকে দশজনের মত একজন’’ বলে আখ্যায়িত করেছিল। অথচ প্রকৃত মুসলমানের আক্বীদা হল-নবী (সাঃ) হচ্ছেন সর্বকালের সকলের সেরা নবী, সৃষ্টির কারো সাথে তাঁর তুলনা নেই, হতেও পারেনা। নারী নেতৃত্বকে নবী (সাঃ) চিরতরে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। সুতরাং যারা নবীজির বিরোধীতা করে, নারী নেতৃত্বের অনুসরণ করে, নবী (সাঃ)কে আমাদের মত মানুষ বলে থাকে এদের মুখে দাড়ি, হাতে তাসবীহ থাকলেও মনে করতে হবে এরা ভÐ। এরা কখনও সৎলোক হতে পারেনা। সৎলোকের পরিচয় দিতে হলে সকল নবী-রাসূলগণকে নিষ্পাপ বলে বিশ্বাস করতেই হবে।
৩. একজন সংসদ সদস্য-এমপি। তিনি সরকার প্রদত্ত কোটি কোটি টাকার টিন ও বিস্কুট আত্মসাত করেছেন। পুলিশ-র্যাব বাহিনী এমপির বাড়ির পুকুরের পানির নীচ থেকে ও বাড়ির বাংলা ঘরের চাল থেকে হাজার হাজার লোকের উপস্থিতিতে ঐ আত্মসাতকৃত টিন উদ্ধার করেছে। ঐ এমপি তার গরু ও ঘোড়াকে রিলিফের বিস্কুট খাওয়াতেন। জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে সংবাদটি ফলাও করে ছাপা হয়েছে। আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আদালত রাজনৈতিক চাপে রায় দিয়ে থাকে। এমন অপরাধীকে ও সেই আদালত রাজনৈতিক চাপে বেকসুর খালাস বলে রায় দিয়েছে। এমন কুখ্যাত অপরাধীকে তথাকথিত সেই আদালত রাজনৈতিক চাপে বেকসুর খালাস দিল বলে কি সেই দুর্নীতিবাজ এমপি সৎলোক হয়ে গেছেন? রিলিফের মাল আত্মসাত করে কি কখনও সৎলোক হওয়া যায়?
৪. শিক্ষকতা হচ্ছে একটি সম্মানজনক পেশা। একজন শিক্ষক সৎ থাকবেন এটাই স্বাভাবিক। শিক্ষক সরকার থেকে নির্ধারিত বেতন পেয়ে থাকেন। অনেক শিক্ষক টিউশনীর নামে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে থাকেন। যারা তার কাছে প্রাইভেট পড়তে যায় তাদেরকে ভাল করে পড়ান কিন্তু ঐ শিক্ষক ক্লাসে মনোযোগ সহকারে পাঠদান করেন না। কারণ ক্লাসে মনোযোগ সহকারে পাঠদান করলে ছাত্ররা শিখে ফেলবে, কোন ছাত্র তাঁর কাছে প্রাইভেট পড়তে আসবেনা। এরূপ দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে থাকেন অনেক শিক্ষক। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, বিপর্যস্ত হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো। এরূপ যারা করেন তারা কি সৎ শিক্ষক? ঐ শিক্ষক এক ঘন্টা প্রাইভেট পাঠদান করে বিষয়টি বুঝাতে পারলে ক্লাসে এক ঘন্টা পাঠদান করে সেই বিষয়টি অন্তত ৫০% ছাত্রকেও বুঝাতে পারেননা কেন? নিশ্চয়ই তিনি এ ব্যাপারে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে থাকেন। এরূপ নীতির শিক্ষকতো কখনও সৎ হতে পারবেন না। শিক্ষকতা একটি পবিত্র পেশা। সেই পবিত্র ও সম্মানজনক পেশাকে নানাভাবে কলংকিত করা হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়ার একটি নির্ধারিত নিয়ম আছে। দুর্নীতিবাজ শিক্ষকরা যখন ইচ্ছা তখন আসেন আবার যখন ইচ্ছা তখন চলে যান। অনেক শিক্ষক ক্লাসে শিক্ষা দেন ‘‘ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, ধূমপান মৃত্যু ঘটায়।’’ আবার ঐ শিক্ষকদের দেখা যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সামনেই ধূমপান করতে। অনেক শিক্ষক ছাত্র/ছাত্রীদের নিয়ে দেখেন নগ্ন ও অশ্লীল ছবি। কিছু শিক্ষক তাদের ছাত্রীদের সাথে অবৈধ প্রেম-প্রীতিতে জড়িয়ে পড়েন। প্রশ্ন হল- শিক্ষক বলতে তো সৎ থাকার কথা। কিন্তু উক্ত কালচারের শিক্ষককে কি সৎ বলা যাবে? আর এই অসৎ শিক্ষকরাই জন্ম দিচ্ছে অসৎ লোকের। এই অসৎ লোকদের প্রভাবেই দেশ ও জাতি ধ্বংস হচ্ছে।
৫. একজন শিক্ষা অফিসার। তিনি নিয়মিত নামাজ আদায় করেন। নবীজির সুন্নত মোতাবেক চলার সর্বাত্মক চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি ঘুষ ছাড়া কোন কাজ করেন না বা ঘুষ ছাড়া কোন কথাই বলেননা। এরূপ লোককে কি কখনও সৎ বলা যাবে? সুদখোর, ঘুষখোর কখনও সৎ হতে পারেনা। অথবা একজন অফিসার ঘুষ গ্রহণ করেন না। কিন্তু তিনি ধর্মবিমুখ বা ধর্মকর্মের দিকে তার খেয়াল নেই। এরূপ শিক্ষা অফিসারকেও সৎ বলা যাবেনা। কারণ সৎ হতে হলে ধার্মিক হতেই হবে।
৬. একজন লোক মুখে দাড়ি রেখেছেন কিন্তু এতে তার স্ত্রী অসন্তুষ্ট। তার স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করার জন্য তিনি ক্লীন সেভ করলেন। তিনি কি সৎলোকের কাজ করলেন? দাড়ি হচ্ছে মুসলমানের ইউনিফর্ম। এক মুষ্টি পরিমাণ দাড়ি রাখা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ওয়াজিব। এই ওয়াজিব ত্যাগ করে যতই ইবাদত করুক না কেন তার ইবাদত গ্রহণযোগ্য হবেনা, সে সৎলোকও হতে পারবেনা। কারণ দাড়ি মুÐনকারীর প্রতি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সর্বদা অসন্তুষ্ট থাকেন।
৭. সন্তান-সন্ততি ও পরিবারের খোজ খবর নেয়া একটি বড় ইবাদত। একজন লোক তাবলীগ করার জন্য মাসের পর মাস, বছরের পর বছর মসজিদে মসজিদে ঘুরে বেড়ান। তার পরিবারের কোন খবর নেননা। অথচ তার সন্তান-সন্ততি ও পরিবার নানা ধরনের অপকর্মে লিপ্ত। প্রশ্ন হল- সেই তাবলীগকারী লোককে কি সৎলোক বলা যাবে? এর উত্তরে বলব- এরূপ লোককে কখনও সৎলোক বলা যাবেনা।
৮. একজন সমাজ সেবক নির্বাচনে ভোট পাবার জন্য নির্বাচনের পূর্বে জনসেবায় মত্ত থাকেন, মাথায় টুপি ও গায়ে পাঞ্জাবী পরেন, নামাজ আদায় করেন, সদকাÑখয়রাত করেন। কিন্তু নির্বাচনের পর আর কোনদিন তার কোন খবর পাওয়া যায় না, তিনি ধর্ম-কর্মও ছেড়ে দেন। এরূপ ব্যক্তি কি সৎলোক? এরূপ লোক কখন ও সৎলোক হতে পারেনা। কেননা সে স্বার্থের জন্য জনসেবা করেছে। সৎলোক হওয়ার জন্য নির্বাচনের আগে ও পরে নিঃস্বার্থ ভাবে তাকে জনগণের সেবা করতে হবে।
৯. একজন রূপবতী মহিলা। তিনি বোরখা ব্যতীত বাড়ি থেকে বের হননা। নিয়মিত নামাজ আদায় করেন তিনি। কিন্তু তিনি সারারাত নগ্ন ও অশ্লীল ছবি দেখেন, পর পুরুষের সাথে গোপনে অবৈধ সম্পর্ক রাখেন। এরূপ মহিলা কি সৎ? নগ্ন ছবি দেখা, পর পুরুষের সাথে অবৈধ সম্পর্ক রাখা সততার পরিপন্থী। তাই ঐ মহিলা যতই বোরখা পরিধান করুক, যতই সে নামাজ আদায় করুক না কেন তাকে কখনও সৎ বলা যাবেনা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।