পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
আমাদের দেশে যে কোনো জনগুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ও পরে নেতিবাচক কী প্রতিক্রিয়া হতে পারে, তা অনেক ক্ষেত্রেই উপেক্ষিত থেকে যায়। জনসাধারণে কল্যাণে যে কোনো ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য। তবে সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় সতর্কতামূলক কিছু দিক-নির্দেশনা থাকাও জরুরী। দুঃখের বিষয়, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলেও সতর্ক হওয়ার দিক-নির্দেশনাগুলো উপেক্ষিত থেকে যায়, যথাযথভাবে পালিত হয় না। এই যেমন প্রাইভেট গাড়িসহ সাধারণ পরিবহনকে গ্যাসচালিত করার সিদ্ধান্ত যখন নেয়া হয়েছিল, তখন মনে হয়েছিল সিদ্ধান্তটি সময়োপযোগী। সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় কিছু নিয়ম-কানুন করা হলেও, সেগুলো বাধ্যতামূলক না করায় এই সময়ে এসে দেখা যাচ্ছে, সিদ্ধান্তটি যথাযথ ছিল না। একদিকে গ্যাস সংকট সৃষ্টি, অন্যদিকে গ্যাসে রূপান্তরিত গাড়ির সিলিন্ডার অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। একেকটি গ্যাস সিলিন্ডার একেকটি চলমান বোমায় পরিণত হয়েছে। সিলিন্ডারের মেয়াদ ৫ বছর হলেও বেশিরভাগ গাড়ির মালিকরা তা আমলে নিচ্ছেন না এবং সিলিন্ডারের নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করছেন না। এক হিসেবে দেখা গেছে, বোমাসদৃশ গ্যাস সিলিন্ডার নিয়েই প্রায় ৩ লাখ যানবাহনের মধ্যে দেড় লাখ অপরিক্ষীত রয়ে গেছে। এগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় চলাচল করছে। এর ফলে মারাত্মক ঝুঁকি এবং প্রাণহানির আশংকা সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে দুর্ঘটনাও ঘটেছে। গত কয়েক দিনে গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে বেশ কয়েকজন নিহত ও আহত হয়েছে। পহেলা বৈশাখে আশুলিয়ায় গ্যাস নেয়ার সময় একটি প্রাইভেট কারের গ্যাস সিলিন্ডার বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। এতে দুইজন নিহত ও চারজন আহত হয়। কয়েকদিন আগে চট্টগ্রামে সিলিন্ডারে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। বেসরকারী একটি প্রতিষ্ঠানের হিসাবে গত তিন বছরে ১৫০টি গাড়িতে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের সিলিন্ডার ব্যবহার করার কারণেই এসব দুর্ঘটনা ঘটছে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। শুধু যানবাহনের সিলিন্ডার বিস্ফোরণই নয়, বাসা-বাড়িতেও ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডারের বিস্ফোরণে আহত-নিহত হওয়ার ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নিয়ম রয়েছে, যানবাহনকে গ্যাসে রূপান্তরিত করার পাঁচ বছর পর সিলিন্ডার পুনঃপরীক্ষা করা। প্রয়োজনে বদলে ফেলা। বলাবাহুল্য, এ ক্ষেত্রে বেশিরভাগ গাড়ির মালিক চরম উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছেন। আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকায় তারা সিলিন্ডার পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা বোধ করছেন না। এ ধরনের অসচেতনতা যে জেনেশুনে মৃত্যুর সঙ্গে বসবাসের শামিল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অথচ নিজের জানমালের হেফাজতের জন্যই অতি আবশ্যক এই পরীক্ষা। তাদের মনে রাখা উচিত, সিলিন্ডারে প্রতি বর্গইঞ্চিতে যখন ৩ হাজার পাউন্ড চাপে গ্যাস ভরা হয়, তখন একেকটি গাড়ি প্রকারন্তরে চলমান বোমা হয়ে উঠে। গ্যাস ভরার সময় সিলিন্ডার এমনকি গ্যাসও উত্তপ্ত থাকে। সিলিন্ডার যদি মেয়াদোত্তীর্ণ ও ত্রুটিপূর্ণ হয়, তবে তা যে কোনো সময় বিস্ফোরিত হয়ে ভয়াবহ ও মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। যেখানে প্রাইভেটকারের মালিক নিজেই চলাচল করেন, তারপরও কেন তারা জেনেবুঝে এমন অসচেতন ও উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছেন, তা বোধগম্য নয়। তাদের এই অসতর্কতার কারণে নিজের মৃত্যু তো বটেই, অন্যের মৃত্যু ও জানমালের ক্ষতিরও কারণ হয়ে উঠছে। বাসা-বাড়িতে যারা গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করেন, তাদের ক্ষেত্রেও এমন অসচেতনতা লক্ষণীয়। গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারকারীদের এ ধরনের অসচেতনতার পাশাপাশি সরকারী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানেরও খামখেয়ালি ও অসচেতনতা রয়েছে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, সিএনজি চালিত গাড়ির ফিটনেস নেয়ার সময় গ্যাস সিলিন্ডার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার বাধ্যতামূলক কোনো আইন নেই। তার উপর সারাদেশে ৫৮৭টি কনভার্সন সেন্টারের বিপরীতে সিলিন্ডার পরীক্ষার কেন্দ্র রয়েছে মাত্র ১৩-১৪টি। এ অবস্থায় সিলিন্ডার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বাধ্য করা যেমন যাচ্ছে না, তেমনি গাড়ির মালিকরাও কোনো ধরনের তাকিদ অনুভব করছেন না। এমন নিয়ম-শৃঙ্খলাহীন কোনো ক্ষেত্র চলে কিনা, তা আমাদের জানা নেই। এখন এ প্রশ্নও উঠছে, গাড়ি গ্যাসে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল কিনা। গ্যাসের বর্তমান তীব্র সংকট এবং গ্যাস আমদানির কথা উঠাকে কেন্দ্র করে পর্যবেক্ষকরা এ সিদ্ধান্তকে দূরদর্শী মনে করছেন না। দেশে এখন গ্যাস সংকট এতটাই তীব্র আকার ধারণ করেছে যে, নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং যাদের সংযোগ আছে তারাও ঠিকমতো গ্যাস পাচ্ছে না। গ্যাস সংকটের কারণে শিল্প-কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং নতুন অনেক কারখানা চালু করা যাচ্ছে না। অর্থনীতির ক্ষেত্রে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়াও পড়ছে। অন্যদিকে মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডারে গ্যাস ভরে একেকটি যানবাহন চলমান মৃত্যু ফাঁদ হয়ে উঠেছে। কখন কোথায় এ সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি করবে, তার কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বেশ কয়েক বছর আগে বাংলাদেশের গ্যাসের মজুদ হিসাব-নিকাষ করে বলেছেন, আগামী ৫০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ গ্যাসশূন্য হয়ে পড়বে। বর্তমানে যে পরিমাণ গ্যাস মজুদ আছে এবং চাহিদা যেভাবে বাড়ছে, তাতে আবিষ্কৃত ও মজুদ গ্যাসের ভান্ডার দ্রুত ফুরিয়ে যাবে। এ প্রেক্ষিতে এখনই মিয়ানমার ও পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে গ্যাস আমদানির কথা উঠেছে। এছাড়া অন্যান্য দেশ থেকে আমদানিকৃত সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহারের বিষয়টিও জোরালো হয়ে উঠছে। যদি তাই হয়, তবে ক্রমবর্ধমান আবাসনের ফলে বাসাবাড়িতে অচিরেই গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার বেড়ে যাবে। বর্তমানে যেভাবে কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহৃত হচ্ছে এবং গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবহার বৃদ্ধি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যাপারে অসচেতনতা পরিলক্ষিত হচ্ছে, তাতে তখন কী অবস্থা হবে, তা কল্পনাও করা যায় না। আমরা মনে করি, বর্তমান ও ভবিষ্যতের ভয়াবহ দুর্ঘটনার কথা বিবেচনা করে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। এখন যেহেতু জ্বালানি তেলের দাম কম, তাই যানবাহনকে গ্যাসে রূপান্তর করাকে নিরুৎসাহিত করা প্রয়োজন। এ নিয়ে একটি কার্যকর নীতিমালা করা সময়ের দাবী। এছাড়া যেসব যানবাহন গ্যাসে রূপান্তরিত হয়েছে, সেগুলোর সিলিন্ডার নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাধ্যতামূলক করে আইন প্রণয়ন করা জরুরী। গ্যাস সংকট ও গ্যাসে রূপান্তরিত করার কুফল থেকে রক্ষা পেতে সরকারকে যেমন উদ্যোগী হতে হবে, তেমনি সংশ্লিষ্ট সকলকেও সচেতন হতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।