Inqilab Logo

বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে মূলধন না দেয়ার সুপারিশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ জুলাই, ২০১৮, ১২:০২ এএম

মূলধন ঘাটতি পূরণে রাষ্ট্রায়ত্ত¡ ব্যাংকগুলোকে সরকারি অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার প্রবণতা বন্ধ করতে সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। বাজেটে এ খাতে বরাদ্দের প্রস্তাব করার পর সংসদে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এখন সংসদের অনুমিত হিসাব কমিটির একটি উপ-কমিটি এই সুপারিশ করল। তাদের এই সুপারিশ গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিটি।
গত বছরের ২২ নভেম্বর বেসরকারি ব্যাংকে প্রভিশন রাখার বাধ্যবাধকতা শিথিল করা, অগ্রণী ব্যাংকের ২৩ জন গ্রাহকের ঋণ ও বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের ওপর পরবর্তী করণীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করার জন্য ওই উপ-কমিটি করা হয়।
তিন সদস্যের উপ-কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন কুমিল্লা-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন। অন্য সদস্যরা হলেন- ঢাকা-১০ আসনের শেখ ফজলে নূর তাপস ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য ওয়াসিকা আয়শা খান। গত বৃহস্পতিবার ওই উপ-কমিটি তাদের প্রতিবেদন সংসদীয় কমিটিতে জমা দেয়।
প্রতিবদেন বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলোর দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে লোকসান হওয়ার ফলে ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দেখা দেয়, ফলে সরকারকে জাতীয় বাজেট থেকে বরাদ্দের মাধ্যমে ঘাটতি পূরণের জন্য প্রায়ই ব্যাংক অনুরোধ করে। এ ধরনের ঘাটতি পূরণের প্রবণতা বন্ধ করতে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। যেসব ক্ষেত্রে মূলধন ঘাটতিপূরণ অপরিহার্য হয়ে পড়ে সেসব ক্ষেত্রে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের শর্তসাপেক্ষে ঘাটতি পূরণ করা যেতে পারে। বৈঠক শেষে কমিটির সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রতিবেদনটি পাঠানো হবে। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
মূলধন সরবরাহ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ব্যাংক ও আর্থিক খাতের অনিয়ম নিয়ে এবার বাজেট অধিবেশনে বেশ কয়েক দিন সংসদ সদস্যদের সমালোচনার মুখে পড়েন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল মুহিত। ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকগুলোকে মূলধন সরবরাহ নিয়ে তার কঠোর সমালোচনা করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা। যদিও এর জবাবে বাজেটের সমাপনী বক্তৃতায় তেমন কিছু বলেননি মুহিত। সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উপকমিটি ২৩টি সুপারিশ উপস্থাপন করে।
তাদের সুপারিশে বলা হয়, যে সব গ্রাহক প্রতিষ্ঠানের বা ঋণ গ্রহণকারীর ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের কাছে কোনো সহায়ক জামানত নেই বা অপর্যাপ্ত সহায়ক জামানত রয়েছে ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে সেসব গ্রাহকের অন্যান্য স্থাবর সম্পত্তি এটাচড করতে তবে।
যেসব গ্রাহক প্রতিষ্ঠানের অনুক‚লে মামলার কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ রয়েছে, হাই কোর্টের নির্দেশমূলে উক্ত স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করে মূল মামলার কার্যক্রম দ্রুত চালু করতে হবে। ঋণের সমুদয় অর্থ আদায়ের লক্ষ্যে গ্রাহক প্রতিষ্ঠানসমূহের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলার কার্যক্রম নিবিড়ভাবে তদারক করতে হবে।
খেলাপি ঋণের সমুদয় অর্থ আদায়ের জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অগ্রণী ও বেসিক ব্যাংক গ্রাহকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি বিধিতে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। গ্রাহকের নামে স্থাপিত এলসি দায় যে সব গ্রাহক পরিশোধ করেনি অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি বিধিতে মামলা দায়ের করার সুপারিশ করা হয়েছে।
মামলা কার্যক্রম ও ঋণ আদায়ের অগ্রগতি ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের অডিট কমিটিকে মনিটর করতে বলা হয়েছে।
এছাড়া অগ্রণী ও বেসিক ব্যাংকের গ্রাহক প্রতিষ্ঠানের ঋণ হিসাবে সংঘটিত অনিয়মের জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের দায় দায়িত্ব নির্ধারণ করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের প্রচলিত চাকুরি প্রবিধানমালার নির্দেশনা মোতাবেক তাদের বিরুদ্ধ প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি দেওয়ানি ও ফৌজদারি বিধিতে মামলা দায়ের করতে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই দুই ব্যাংকের যে বিশাল অংকের টাকা অনাদায়ী ও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তা জনগণের কষ্টার্জিত আমানত। এ বিশাল অংকের অর্থ আদায়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ঋণ খেলাপি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেইল আউট না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ভবিষ্যতে কোনো অনুমোদিত ঋণের বিপরীতে অর্থ প্রদানের পূর্বে উপযুক্ত মূল্যের জমি অথবা অন্যান্য সিকিউরিটি যথাযথভাবে ব্যাংকের নামে রেজিস্ট্রি সমাপ্ত করতে হবে।
বেসিক ব্যাংক ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে যেসব গ্রাহককে ঋণ দিয়েছে সেসব গ্রাহকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া ঋণ আদায়ের স্বার্থে প্রয়জন হলে দুদকের মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুশাসন দেওয়া।
চেকের বিপরীতে ঋণদান এবং এলটিআরের বিপরীতে এলসি প্রতিষ্ঠিত না করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এছাড়া একমোডেশন বিলের মাধ্যমে গ্যারান্টার হওয়ার প্রক্রিয়ায় ঋণ নেওয়া বন্ধ করা, যথোপযুক্ত বন্ধকি ছাড়া ঋণ না দেওয়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআইসি রিপোর্ট অবজ্ঞা করে যাতে ঋণ না দেওয়া হয় সেটা নিশ্চিত করা, বোর্ড বহির্ভূত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন যেন না হয় তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বেসরকারি ব্যাংকের প্রভিশন রাখার বাধ্যবাধকতা শিথিল করা আইনানুগ হয়নি বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে উপ-কমিটি। ভবিষ্যতে পুনরায় প্রভিশন রাখার বাধ্যবাধকতা শিথিল না করার সুপারিশ করেছে তারা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ