Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১০ অক্টােবর ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

সংসদীয় কমিটির নির্দেশনা ঋণ আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ক্ষতি দেড়শ’ কোটি টাকা

প্রকাশের সময় : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : ঋণের টাকা আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১৫১ কোটি টাকা। অন্যদিকে ব্যাংকের বন্ধকী সম্পত্তির প্রকৃত মূল্য নিরূপণ না করে সুদ মওকুফ এবং মওকুফ অবশিষ্ট টাকা আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ আরো সাড়ে ২৮ লাখ টাকা বেড়েছে।
এই ক্ষতির জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে জাতীয় সংসদের সরকারী হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। একই সাথে দায়ী কোম্পানী যাতে ভিন্ন ব্যাংক থেকে ভিন্ন নামে এলসি খুলতে না পারে, সে বিষয়ে দিক নির্দেশনা দিয়েছে কমিটি। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে ওই কমিটির ৫৫তম বৈঠকে এ নির্দেশনা দেয়া হয়।
বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের আওতাধীন অগ্রণী ব্যাংক লিঃ-এর ঋণ পুনঃতফসিল ও সুদ মওকুফ কার্যক্রমের ২০০৯-১০ অর্থ বছরের হিসেবের উপর বাংলাদেশের মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদন ২০১০-২০১১ এর অনিষ্পন্ন অডিট আপত্তি ২৪ (চব্বিশ) টি এবং জড়িত টাকার পরিমাণ ৬৮০ কোটি ৩১ লক্ষ ০৩ হাজার ১শ’ ৮৭ টাকার আপত্তির বিষয়ে আলোচনা করা হয়। পরে গৃহীত সিদ্ধান্তের আলোকে বিষয়গুলো দ্রুত নিষ্পত্তির করতে বলা হয়েছে।
বৈঠকে সহায়ক জামানত গ্রহণ ব্যতিরেকে অপরিশোধিত ভোজ্য তেল আমদানির নিমিত্ত বার বার ক্যাশ এলসি স্থাপনের অনুমোদন এবং মেয়াদোত্তীর্ণ টিআর, পিএডি ও পুনঃ তফসিলকৃত ঋণ আদায় না হওয়ায় ব্যাংকের ক্ষতি ২২৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা মর্মে উত্থাপিত অডিট আপত্তির প্রেক্ষিতে কমিটি সহায়ক জামানত গ্রহণ ব্যতিরেকে এলসি খোলায় সহায়তাকারী দায়ী কর্মকর্তাদের চিহ্নিতকরণ, অপসারিত কর্মকর্তাদের দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, রীট পিটিশন ভ্যাকেট এবং দায়ী কোম্পানী যাতে ভিন্নতর ব্যাংক থেকে ভিন্ন নামে এলসি খুলতে না পারে সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি’র মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থাগ্রহণসহ অনধিক ১৫ দিনের মধ্যে নিরীখ কর্র্তৃপক্ষের মাধ্যমে কমিটিকে অবহিত করার সুপারিশ করা হয়।
ঋণের দায় পরিশোধে ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ না করে অনিয়মিতভাবে পুনঃতফসিলীকরণের পরেও ঋণের টাকা আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় ব্যাংকের ক্ষতি ১৫০ কোটি ৮৩ লাখ ৯৭ হাজার ৬শ’ ১৯ টাকা মর্মে উত্থাপিত অডিট আপত্তির প্রেক্ষিতে কমিটি যে সকল কর্মকর্তা জমির মূল্য অধিক দেখিয়ে মূল্য নিরূপণের সাথে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ, দায়ী কোম্পানী যাতে ভিন্নতর ব্যাংক থেকে ভিন্ন নামে এলসি খুলতে না পারে সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবির মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থাগ্রহণসহ অনধিক তিন মাসের মধ্যে নিরীখ কর্র্তৃপক্ষের মাধ্যমে কমিটিকে অবহিত করার করতে বলা হয়।
প্রকল্প ও সিসি হাইপো ঋণের দায় পরিশোধে ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ না করে অনিয়মিতভাবে পুনঃতফসিলীকরণের পরেও ঋণের টাকা আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় ব্যাংকের ক্ষতি ৪৮ কোটি ১৭ লক্ষ ৪১ হাজার ১শ’ ২৫ টাকা, পুনঃতফসিলীকরণ আদেশে অর্জিত সুদ, সুদবিহীন স্থিতি বা ব্লকড হিসেবে প্রদর্শনের নির্দেশনা না থাকা সত্ত্বেও তা করায় ব্যাংক সুদ বাবদ ৪৮ লাখ ৫৭ হাজার ৪শ’ ৫৬ টাকা আয় হতে বঞ্চিত এবং নিয়মিত ঋণের দায় ব্লক হিসেবে স্থানান্তর করায় ব্যাংকের ক্ষতি ৩৫ কোটি ২৩ লাখ ৭১ হাজার ৬শ’ ৬৩ টাকা এবং ব্যাংকের বন্ধকী সম্পত্তির প্রকৃত মূল্য নিরূপণ না করে সুদ মওকুফ এবং মওকুফ অবশিষ্ট টাকা আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় ব্যাংকের ক্ষতি ২৮ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা মর্মে উত্থাপিত অডিট আপত্তির প্রেক্ষিতে কমিটি দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, দায়েরকৃত মামলার তদারকী জোরদারকরণ এবং অনধিক ৬০ দিন, ৩ মাস এবং ৬ মাসের মধ্যে বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করে অডিট অফিসের মাধ্যমে কমিটিকে বিষয়গুলো অবহিত করতে বলা হয়।
এছাড়াও আপত্তির অনুচ্ছেদ ৭,৮,৯,১০,১১,১২,১৩, ১৪,১৫,১৭,১৮, ১৯,২০,২১ ও ২২ বিষয়ে উত্থাপিত অডিট আপত্তির প্রেক্ষিতে কমিটি দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেব্যবস্থা গ্রহণ, দায়েরকৃত মামলার তদারকী জোরদারকরণ এবং অনধিক, ১৫ দিন , ৩০ দিন, ৬০ দিন, ৩ মাস এবং ৬ মাসের মধ্যে বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করে অডিট অফিসের মাধ্যমে কমিটিকে বিষয়গুলো অবহিত করতে নির্দেশনা দেয়া হয়।
বারবার পুনঃ তফশিলিকরণ ও অনিয়মিতভাবে কষ্ট অব ফান্ড কভার না করে সুদ মওকুফসহ পুনঃতফশিলিকরনের পরেও ঋণের টাকা আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় ব্যাংকের ক্ষতি ৬৯ কোটি ১৪ লাখ ৯৭ হাজার টাকা, ঋণ গ্রহীতার ব্যক্তিগত সম্পত্তি বিক্রয়ের ব্যবস্থা না করে এবং এককালীন মূল্য আদায় ব্যতীত মেসার্স কওয়াটী ডিটারজেন্ট এন্ড কেমিকেল ইন্ডাষ্ট্রিজ লিঃ এর সম্পত্তি তৃতীয় পক্ষের নিকট হস্তান্তর করায় ব্যাংকের ক্ষতি ৮ কোটি ২২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা , মেসার্স মাসাহা নিটিং এন্ড ডাইং ইন্ডাষ্ট্রিজ লিঃ এর খেলাপী দায় থাকা সত্ত্বেও ব্যাক টু ব্যাক এলসি স্থাপন এবং মালামাল রপ্তানী করতে ব্যর্থ হওয়ায় সৃষ্ট ডিমান্ড লোন পুনঃতফশিলিকরন ও পুনরায় ডিমান্ড সৃষ্টি হওয়ায় ব্যাংকের ক্ষতি ১ কোটি ২২ লাখ ৮০ হাজার ২ শত ৯৫ টাকা এবং ডেট কালেকশন খেলাপী ও অবলোপনকৃত ঋণের দায় চুক্তিপত্র অনুসারে আদায় না হওয়া সত্ত্বেও কমিশন প্রদান করায় ব্যাংকের ক্ষতি ৪৩ লাখ ৬৩ হাজার টাকার অডিট আপত্তি নিষ্পত্তির করতে বলা হয়।
কমিটির সভাপতি ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, কমিটির সদস্য এ,কে,এম,মাঈদুল ইসলামএমপি, মোঃ আব্দুস শহীদ এমপি, মোঃ শামসুল হক টুকু এমপি, মইন উদ্দীন খান বাদল এমপি এবং রেবেকা মমিন এমপি, সিএন্ডএজি মাসুদ আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ফজলে কবিরসহ অডিট অফিসের কর্মকর্তাবৃন্দ, অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সংসদীয় কমিটির নির্দেশনা ঋণ আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ক্ষতি দেড়শ’ কোটি টাকা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ