Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিশ্ব অর্থনীতির আকাশে অনাস্থার কালো মেঘ

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ১৪ জুলাই, ২০১৮, ১২:০২ এএম

বিশ্ব বড় রকমের বাণিজ্যযুদ্ধের সন্মুখীন। এই যুদ্ধ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তাতে একে একে জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন দেশ। ফলে সর্বত্র আর্থিক গতি-বিধি ওলট-পালট হয়ে যাওয়ার আলামত দেখা যাচ্ছে। এ যুদ্ধের কারণে বিশ্বমন্দা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা করছেন পর্যবেক্ষকরা। তবুও এ যুদ্ধ উদ্যোগ থেমে নেই, বরং বৃদ্ধিই পাচ্ছে। তাতে যুক্তরাষ্ট্র কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশ, পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে গেছে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যযুদ্ধ। প্রথম ধাপে তিন হাজার চারশ’ কোটি ডলার সমমূল্যের চীনা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ২৫ ভাগ শুল্ক আদায় কার্যকর হয়েছে গত ৭ জুলাই। একই দিন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫৪৫টি পণ্যের ওপরও চীনের ২৫ ভাগ শুল্ক আদায় শুরু হয়েছে। তবে ট্রাম্প তাতেই থেমে থাকেননি। বাণিজ্য যুদ্ধকে আরেক দফা উস্কে দিয়েছেন। দুই সপ্তাহের মধ্যে আরও এক হাজার ৬শ’ কোটি ডলারের চীনা পণ্যে শুল্ক আরোপের কথা ভাবছেন তিনি। উপরন্তু তিনি আরও ৫০ হাজার কোটি ডলারের চীনা পণ্যে শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। চীন অভিযোগ করেছে, অর্থনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় যুদ্ধ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় চীন এ নিয়ে একটি মামলাও দায়ের করেছে। বিশ্বের আরেক পরাশক্তিধর দেশ রাশিয়া বলেছে, তারা পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে তৈরি। চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে পশ্চিমাদেশগুলোতে জিনস, মোবাইল ফোন, ছাতার দামও শিগগিরই বেড়ে যাবে। কারণ এসব পণ্য তৈরি হয় চীনে।
কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্র ইস্পাত ও অ্যালোমিনিয়াম পণ্যের আমদানির উপর ২৫% শুল্ক আরোপ করে। এ নিয়ে চীন, ভারত ও পশ্চিমা দেশগুলোসহ বিভিন্ন দেশ প্রচন্ড প্রতিবাদ জানায়। তবুও যুক্তরাষ্ট্র উক্ত পণ্যসমূহের উপর অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহার করেনি। ফলে ক্ষিপ্ত হয়ে মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। স্মরণীয় যে, জুনের প্রথম সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর স্টিল পণ্যে ২৫% ও অ্যালুমিনিয়াম পণ্যে ১০% শুল্ক আরোপ করে। এরপরই পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্য কমিশনার সাংবাদিকদের বলেছেন, আমরা এই অবস্থানে আসতে চাইনি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম পণ্যে আমেরিকার একতরফা ও অহেতুক শুল্ক আরোপের কারণে আমাদের এ অবস্থানে আসতে হয়েছে। আমেরিকান পণ্যে শুল্ক আরোপের তালিকা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। যেখানে প্রায় ২.৮ বিলিয়ন ইউরো সমমূল্যের শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এ তালিকায় কৃষিপণ্য থেকে মোটরবাইক, স্টিল পণ্য রয়েছে। কৃষিপণ্যের মধ্যে রয়েছে চাল ও অরেঞ্জ জুস। তিনি আরও বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত আনুপাতিক, যৌক্তিক এবং তা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম বহির্ভূত নয়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে যে ২৪০ মিলিয়ন ডলারের ৩০ রকম সামগ্রী আমদানি করে ভারত, তার ওপর আচমকা শুল্ক বাড়িয়েছে আমেরিকা। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ভারতও আমেরিকা থেকে ২৯টি সামগ্রীর আমদানির ওপর শুল্ক চাপিয়েছে। নতুন শুল্ক কার্যকর হবে মাস দেড়েক পর থেকে। এছাড়া, কানাডা ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের উপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে মার্কিন পণ্যের উপর ব্যাপক করারোপ করেছে। গত ২৯ জুন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক সংবাদ সম্মেলনে এই পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়ে বলেন, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের উপর ২৫% এবং কেচাপ ও টয়লেট পেপারের উপর ১০% সহ প্রায় ১৩০টি মার্কিন পণ্য এই প্রতিশোধমূলক শুল্কারোপের লক্ষ্য হবে। এরপর মেক্সিকোও মার্কিণ পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে উল্লেখ করে গত মার্চ মাসে ধাতব পণ্যের উপর শুল্কারোপের পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এতে গত মে মাসে কানাডা ও মেক্সিকোকে শুল্কারোপের লক্ষ্যে পরিণত করা দেশগুলোর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এছাড়া গত মে মাসের প্রথমদিকে মেক্সিকো, মার্কিন পণ্যের উপর প্রতিশোধমূলক শুল্কারোপের পদক্ষেপ গ্রহণ করে। উত্তর আমেরিকা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আওতায় এর আগে কানাডা ও মেক্সিকো এসকল মার্কিন পণ্যের উপর শুল্কারোপ করত না। দেশ দুটি, যুক্তরাষ্ট্র তাদের ধাতব পণ্যের উপর আরোপিত শুল্ক বাতিল না করা পর্যন্ত এই শুল্ক বজায় থাকবে বলে উল্লেখ করেছে। তুরস্কও যুক্তরাষ্ট্রর পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করেছে গত ২২ জুন।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে রফতানি হওয়া গাড়ির ওপর যুক্তরাষ্ট্র অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করলে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পুরোদমে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর মারকেল। গত ৪ জুলাই তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন। স¤প্রতি ইউরোপ থেকে আমদানিকৃত গাড়ির ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের হুমকি দেন ট্রাম্প। স্মরণীয় যে, কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-৭ এর শীর্ষ সম্মেলন চরম অনিশ্চয়তা এবং বিতর্কের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে মার্কিন সংরক্ষণশীল নীতির কারণে। সম্মেলনের যৌথ বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সই করতে অস্বীকৃতি জানান। ট্রাম্পের এমন আচরণকে গুরুতর এবং হতাশাজনক বলে উল্লেখ করেন জার্মান চ্যান্সেলর।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছেন তার নীতি- ‘আমেরিকা ফাস্ট’ বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে। তাই তিনি বিভিন্ন দেশকেই শুধুমাত্র টার্গেট করেননি, সেই সাথে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকেও টার্গেট করেছেন। ট্রাম্প অভিযোগ করে বলেছেন, ‘বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। আমি আশা করি তারা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করবে। অন্যথায় সংস্থাটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর আগে মার্কিন এক কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে জানান, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের এই মনোভাবের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে বিভিন্ন দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করার পাশাপাশি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে টিকিয়ে রাখা এবং যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিয়ে বাণিজ্য জোট গঠন করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। যেমন: গত ১ জুলাই ১৬ জাতির সমন্বয়ে গঠিত সংস্থা রিজিওনাল কমিপ্রহেনসিভ ইকোনোমিক পার্টনারশিপের বাণিজ্যমন্ত্রীরা জাপানের টোকিওতে বৈঠকে মিলিত হয়ে বাণিজ্যিক জোট গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এ জোটে ভারত, চীন এবং জাপান ছাড়াও এশিয়ার বাইরের কয়েকটি দেশকেও অন্তর্ভুক্ত করা হবে। চলতি বছরের মধ্যেই এ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে বলে জানিয়েছেন জাপানের বাণিজ্যমন্ত্রী। বৈঠক শেষে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, বিশ্বে আত্মরক্ষার বাণিজ্য গুরুত্ব পাচ্ছে। বিশ্বে এ নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হচ্ছে। তাই এশিয়ার দেশগুলোর সমন্বয়ে একটি মুক্ত বাণিজ্য জোট গড়ে তোলা গুরুত্বপূর্ণ। যদি জোট গঠন সম্ভব হয়, তাহলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১০টি দেশকেও এর অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডও এ জোটে যুক্ত হতে পারে। বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ অর্থনীতির মালিকানা এসব দেশের হাতে। বিশ্বের জনসংখ্যারও অর্ধেক এসব দেশের। অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব থেকে বেরিয়ে নিজেদের ব্যবহারের জন্য বিকল্প ইন্টারনেট তৈরি করতে যাচ্ছে রাশিয়া ও চীন। রাশিয়া সরকার ও চীন সরকারের মধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা চূড়ান্ত হয়েছে বলে একটি রাশিয়ান গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয়েছে। উক্ত খবরে বলা হয়েছে, রাশিয়া নিজস্ব রুট নেম সার্ভার তৈরি করছে; যেটিকে চূড়ান্তভাবে বিকল্প ইন্টারনেট বলা হয়। আর এ জন্য চীন সব রকম সহায়তা করছে। রুশ কর্তৃপক্ষ মূলত চীনের বিখ্যাত ফায়ারওয়ালের জনক ফ্যান বিংজিংয়ের উদ্ভাবনীতে প্রভাবিত হয়ে এ উদ্যোগ নিয়েছে। ফ্যান বিংজিং ‘সাইবার সভেরিনটি’ (সাইবার সার্বভৌমত্ব) উদ্ভাবনীর জন্য বিখ্যাত। তবে নিজস্ব এ ইন্টারনেট ব্যবস্থা রাশিয়া একা ব্যবহার করবে না। তারা ব্রিক্সভুক্ত দেশ ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকাকেও ব্যবহার করতে দেবে। রাশিয়ার মতে, বর্তমান বিশ্বে ইন্টারনেটের সব রকম নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। তারা চাইলে যে কোনো দেশের ইন্টার ব্যবস্থা বন্ধ করে দিতে পারে। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসতে এ চেষ্টা করছে রাশিয়া।
এ বাণিজ্য যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন সংস্থা ও বিশেষজ্ঞ নানা মত ব্যক্ত করছে। যেমন: যুক্তরাষ্ট্রের সংরক্ষণবাদী বাণিজ্য নীতির বিষয়ে সতর্ক করে আইএমএফ প্রধান বলেছেন, বিশ্ব অর্থনীতির আকাশের মেঘ আরও ঘনীভূত হচ্ছে। বহুপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্কগুলোর উপর আস্থার বিষয়ে কালো মেঘ দেখা যাচ্ছে। বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে। এ অবস্থায় বিশ্ব অর্থনীতি আরেকটি ঝুঁকির দিকে যাচ্ছে। আইএমএফ পূর্বাভাস জানিয়েছিল যে, বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি এ বছর ৩.৯% পর্যন্ত হতে পারে যা গত বছর ছিল ৩.৮%। কিন্তু ছয় মাস আগেও যে মেঘ বিশ্ব অর্থনীতির উপর দেখা দিয়েছিল, সেটি আরও ঘনীভূত হয়েছে। দিন দিন বিশ্ব অর্থনীতি আরও দুর্বল হচ্ছে। বার্লিনে বিশ্বব্যাংক, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা, আইএলও, আফ্রিকান উন্নয়ন ব্যাংকসহ বিশ্ব অর্থনৈতিক জোটগুলোর এক সভা শেষে গত ১১ জুন তিনি এই মন্তব্য করেন। সর্বপরি আইএমএফ ১৪ জুন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মার্কিন সরকারের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ ও আমদানি নিষেধাজ্ঞা-সংক্রান্ত বাণিজ্যিক-নীতি বিশ্ব অর্থনৈতিক কাঠামোর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি উন্মুক্ত, ন্যায্য ও নীতিগত বাণিজ্যিক ব্যবস্থা থাকা দরকার। তাই যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক ব্যবস্থায় উদ্বিগ্ন বিভিন্ন পক্ষ। এ-সব উদ্যোগ যুক্তরাষ্ট্র ও তার বাণিজ্যিক অংশীদারদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে সংশ্লিষ্টরা উদ্বিগ্ন। তাই যুক্তরাষ্ট্র ও তার বাণিজ্যিক অংশীদারদের মধ্যে গঠনমূলক সহযোগিতা অব্যাহত রাখা এবং বাণিজ্য-বিরোধ কমানো উচিৎ। যুক্তরাষ্ট্রের এই সংরক্ষণবাদী নীতির কারণে আমেরিকার বিশেষজ্ঞগণও উদ্বিগ্ন। খ্যাতিমান মার্কিন রাজনৈতিক বিশ্লেষক পিটার কোনিং বলেন, ৮-৯ জুন কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-সেভেনের চূড়ান্ত ঘোষণায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট সই করতে অস্বীকৃতি জানানোর মধ্যদিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে ফাটল স্পষ্ট হয়েছে। ফলে এই সংগঠন টিকবে কি-না সন্দেহ রয়েছে। শেষ মুহূর্তে এটা করে ট্রাম্প পরিষ্কার করেছেন যে, পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হয়েছে এবং তা বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কুইবেকে যা ঘটিয়েছেন সেটাই প্রথম ঘটনা নয় বরং তিনি ইরানের সঙ্গে পরমাণু সমঝোতা বাতিল করেছেন এবং শুল্ক নিয়ে তিনি চীন ও পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়েছেন। এছাড়া, মার্কিন খ্যাতনামা পÐিতরা স¤প্রতি নিউইয়র্কে বলেছেন, অর্থনৈতিক ব্যবধান রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত করাই হলো যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যিক বিরোধের মূল কারণ। হোয়ার্টন স্কুলের ডিন জিওফ্রে গারেট বলেছেন, কিছু কিছু মার্কিনী অর্থনৈতিক ব্যবধানকে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত করেছে বলে দু’ দেশের বাণিজ্যিক বিরোধ বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে এখনও কিছু পুরনো রাজনৈতিক চিন্তাধারা রয়েছে। যেমন, রপ্তানি মানে জয়, আমদানি মানে পরাজয়। আসলে বিশ্বজুড়ে সরবরাহ ও বিতরণ ব্যবস্থার মধ্যে সেগুলোর কোনও তাৎপর্য নেই। অর্থনৈতিক ব্যবধান রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত করলে বিরোধ ও জয়-পরাজয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করা হবে, কল্যাণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হবে না।
সার্বিক বিশ্লেষণে এটা প্রতীয়মান হয়, যুক্তরাষ্ট্র তার সৃষ্ট বাণিজ্যযুদ্ধে ইতোমধ্যে কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। যেমনটা হয়েছে অন্য ক্ষেত্রে। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডিন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে একে একে সব আন্তর্জাতিক চুক্তি বাতিল করে দিয়েছেন। তন্মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হচ্ছে, টিপিপি, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি-২০১৫, ৬ জাতির সাথে ইরানের পরমাণু চুক্তি, নাফটা, জাতিসংঘের শান্তি বাহিনীর চাঁদা ইত্যাদি। এছাড়া, যখন তখন যে সে দেশের উপর অবরোধ ও আক্রমণ চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রতিটিরই কার্যক্রম চলছে যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিয়ে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র বিশ^ থেকে প্রায় একঘরে হয়ে পড়ছে। সেই সাথে বিশে^রও ক্ষতি হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ দেশের শেয়ারবাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। বাণিজ্য যুদ্ধের ছোঁয়া বাংলাদেশেও লেগেছে। তুলার দাম বেড়ে যাওয়ায় বস্ত্র শিল্প ক্ষতির মুখে পড়েছে। আবার লাভবানও হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। যেমন: চীন দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, বাংলাদেশ, লাওস ও শ্রীলংকা থেকে কৃষিপণ্য আমদানির শুল্ক হ্রাস করেছে। ভারতও একই কাজ করেছে বাংলাদেশসহ এশিয়ার ৫টি দেশের ক্ষেত্রে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিশ্ব অর্থনীতি


আরও
আরও পড়ুন