Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ভারত ছাড়ছেন কেন পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দুরা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৩ জুলাই, ২০১৮, ১২:০২ এএম

পাকিস্তানে অত্যাচার-বৈষম্যের কারণে যেসব হিন্দু ভারতে চলে এসেছিলেন, তাদের একটা অংশ আবারও ফিরে যেতে শুরু করেছেন। এদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে ভারতের নাগরিকত্ব না পেয়ে আবারও নিজের দেশে ফিরতে শুরু করেছেন এরা।
নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১৬ সালেই ঘোষণা করেছিল যে, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তানসহ প্রতিবেশী দেশগুলিতে কোনও হিন্দু যদি ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হন, তাহলে তাদের স্বাগত জানাবে ভারত, দেবে নাগরিকত্ব। কিন্তু পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দুদের একাংশের এখন মনে হচ্ছে যে, ওই ঘোষণাই সার হয়েছে, নাগরিকত্ব দেওয়া হচ্ছে না নানা অছিলায়।
পাকিস্তান থেকে হিন্দুদের ভারতে চলে আসা শুরু হয়েছিল ১৯৬৫-তে দুই দেশের যুদ্ধের পরেই। তারপরে আরও এক ঝাঁক হিন্দু ভারতে চলে এসেছিলেন ৭১-এর যুদ্ধের সময়, আর শেষবার বড় সংখ্যায় হিন্দুরা পাকিস্তান ছেড়ে আসেন ৯২-৯৩ সালে, অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরবর্তী সময়ে। কিন্তু অন্য বছরগুলোতেও অল্প হলেও পাকিস্তান থেকে হিন্দুদের ভারতে চলে আসা বন্ধ হয়নি। এদের অভিযোগ, হিন্দু হওয়ার জন্যই পাকিস্তানে নিয়মিত অত্যাচারের সম্মুখীন হতেন তারা। রাজস্থানের যোধপুর শহরের বাসিন্দা এক শ্রমিক মি. কিষাণ পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের সাঙ্ঘার জেলা থেকে ভারতে চলে এসেছেন ২০০০ সালে। তিনি বলেন, আমার বাবা-মা ভারত থেকেই পাকিস্তানে গিয়েছিলেন। তাই ভারতকেই নিজের দেশ বলে মনে করি। ‘কিন্তু পাকিস্তানে আমাদের অবস্থা এমনই ছিল যে, নিজের নাম পর্যন্ত বলতে সাহস পেতাম না, হিন্দু নাম শুনলেই সমস্যা হত’। যোধপুর শহরেরই আরেক বাসিন্দা গোর্ধন ভীল পাকিস্তানের টান্ডো সুমরো থেকে ভারতে চলে এসেছেন ২০০১ সালে, কিন্তু এখনো নাগরিকত্ব পাননি তিনি।
মি. ভীলের কথায়, ‘ধর্মীয় নিপীড়নের কারণেই পরিবারসহ ভারতে চলে আসি। কিন্তু এত বছরেও ভারতের নাগরিকত্ব পেলাম না। দীর্ঘমেয়াদী ভিসা নিয়ে থাকতে হয় ভারতে’।
‘যোধপুর শহরের বাইরে বেরতে পারি না। যেখানে ভাড়া থাকি, সেখানে বিদ্যুৎ, পানির ব্যবস্থা কিছুই নেই। ছেলেমেয়েদের স্কুল কলেজে ভর্তি করানোটাও সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এত দিন ধরে নাগরিকত্বের আবেদন করেছি, কিন্তু বারে বারে ঘোরানো হচ্ছে নানা যুক্তিতে’।
মি. ভীল বা মি. কিষানের মতো বহু মানুষ দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও নাগরিকত্ব না পেয়ে তাদের কেউ কেউ আবার ফিরে যেতে শুরু করেছেন পাকিস্তানে।
স¤প্রতি রাজস্থান হাইকোর্টে দায়ের হওয়া এক জনস্বার্থ মামলায় হিন্দুদের পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার তথ্য জানিয়েছেন সেখানকার বিদেশী নাগরিক পঞ্জীকরণ অফিসার শ্বেতা ধনকার। তিনি বলেন, ২০১৫ থেকে ১৭ - এই সময়ের মধ্যে পাকিস্তান ফিরে গেছেন ৯৬৮ হিন্দু। পাকিস্তান থেকে ভারতে চলে আসা হিন্দুদের অধিকারের দাবী নিয়ে সীমান্ত লোক সংগঠন দীর্ঘদিন ধরেই সরব। সংগঠনটির সভাপতি হিন্দু সিং সোধা বলছিলেন, ‘সেদেশে ধর্মের কারণে অত্যাচারিত হচ্ছিলেন, বৈষম্যের শিকার হচ্ছিলেন বলেই তো এই মানুষরা ভারতে চলে এসেছিলেন। কিন্তু এখানে যদি তারা স্বাগতই না হবেন, তাহলে তো তারা ফিরে যাবেনই’।
‘তারা তো দেখতে পাচ্ছেন যে, সমস্যা শুধু পাকিস্তানে নয়, ভারতেও রয়েছে। তাই নিজের দেশে ফিরছেন তারা। শুধু যে নাগরিকত্ব না দিয়ে স্বাগত জানানো হচ্ছে না তা তো নয়। নানা সময়ে গোয়েন্দা থেকে শুরু করে নানা দপ্তর এদের রীতিমতো হেনস্থাও করছে’।
বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরে ঘোষণা করেছিল যে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান আফগানিস্তান থেকে অত্যাচারিত হয়ে যেসব সংখ্যালঘু মানুষ ভারতে চলে আসবেন, তাদের এদেশের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু মি. গোর্ধণ ভীল বলছেন, ‘২০০৯ সালে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলাম। গত মাসে একটা শিবির খুলে ১০৮ জনকে নাগরিকত্ব দেওয়া হল - যারা অনেক পরে এসেছে। কিন্ত আমার আবেদন এখনও ঝুলে রয়েছে। সরকার তো ঘোষণা করেছে নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যাপারে, কিন্তু নীচের তলায় কর্মী অফিসাররা তো হেনস্থাই করছে শুধু।
মি. হিন্দু সিং সোধা আরও জানাচ্ছিলেন,’ যেসব হিন্দু ভারত থেকে আবারও পাকিস্তানে ফেরত চলে গেছেন, তাদের সেখানে প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে যে, ভারতে গিয়ে তোমরা কী পেলে! চাপ আসছে ধর্ম পরিবর্তনেরও। নানা জায়গা থেকে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে মি. সোধা বলছিলেন যে, ভারত থেকে ফেরত যাওয়া হিন্দুদের অনেককেই ধর্ম পরিবর্তন করতে হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারের ওপরে চাপ বাড়ানোর কথা ভাবতে শুরু করেছেন পাকিস্তান থেকে চলে আসা হিন্দুরা। সূত্র : বিবিসি।



 

Show all comments
  • Abu Bakar ১৩ জুলাই, ২০১৮, ২:০২ এএম says : 0
    প্রকৃত মুসলমানের হাতেই সংখ্যালঘুরা নিরাপদ থাকে। ইসলামে বান্দার হক নষ্টকারীকে আল্লাহ মাফ করবেননা - যতক্ষন না উক্ত ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি তাকে মাফ না করে।। উল্লেখ্য, মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সকল মানুষই আল্লাহর বান্দা ।
    Total Reply(0) Reply
  • Heemel Habib ১৩ জুলাই, ২০১৮, ২:০৩ এএম says : 0
    বাংলাদেশের অনেক সংখ্যালঘু ভাই বোনদের এইটা ভালো করে জেনে রাখা প্রয়োজন যে ভারত যত মায়া কান্না দেখাক না কেন এই বাংলা আপনাদের শেষ আশ্রয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Badrul Munir ১৩ জুলাই, ২০১৮, ২:০৭ এএম says : 0
    So Sad
    Total Reply(0) Reply
  • Farid Rahaman ১৩ জুলাই, ২০১৮, ২:০৮ এএম says : 0
    It's the real face of India
    Total Reply(0) Reply
  • রফিক ১৩ জুলাই, ২০১৮, ২:১০ এএম says : 0
    এরা আবার মানবাধিকারের কথা বলে!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হিন্দু


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ