মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী অভিযোগ করেছেন যে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশ্বভারতীর গৈরিকীকরণ হচ্ছে। গৈরিকীকরণ শব্দটা ভারতে হিন্দুত্ববাদের প্রভাব বিস্তার বোঝাতে ব্যবহার করা হয়। মমতার ওই অভিযোগের যে লিখিত জবাব বিশ্বভারতী দিয়েছে, সেটিকে সম্পূর্ণভাবেই রাজনৈতিক বক্তব্য বলে মনে করছেন সবাই।
বিশ্বভারতী একটি কেন্দ্রীয় সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়। রীতি অনুযায়ী এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হয়ে থাকেন দেশের প্রধানমন্ত্রীরা। সেই হিসাবে বর্তমানে বিশ্বভারতীর আচার্য নরেন্দ্র মোদী। আর বর্তমানে যিনি উপাচার্য, সেই বিদ্যুৎ চক্রবর্তীও আরএসএস ঘনিষ্ঠ হিসাবেই শিক্ষা মহলে সুপরিচিত। কয়েক বছর আগে তিনি উপাচার্যের পদে আসীন হওয়ার পর থেকেই রাজনৈতিকভাবে অশান্ত হয়ে উঠছে শান্তিনিকেতন।
শান্তিনিকেতনে গিয়ে মমতা ব্যানার্জী উপাচার্যকে সরাসরি নিশানা করে বলেন, “ঠাকুরবাড়ির বংশধর সুপ্রিয় ঠাকুর এসেছিলেন আমার কাছে, দুঃখ করছিলেন তার বাড়ির সামনেও নাকি পাঁচিল তুলে দিয়েছে। আশ্রমিকরা কষ্টে আছেন খুব। সবাই জেলখানায় থাকবে আর উনি (উপাচার্য) মুক্তখানায় থাকবেন। "বিশ্বভারতীর, আমার লাল মাটির জায়গাটাকে গৈরিকীকরণ করবেন। এই একটা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রের অধীনে, তাদের এই হাল। প্রধানমন্ত্রী তো এটার চ্যান্সেলর, তার তো দেখা উচিত।“ বিশ্বভারতীয় কর্মকান্ড নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখবেন বলেও জানিয়েছেন মমতা ব্যানার্জী।
শুধু যে মমতা ব্যানার্জী বিশ্বভারতী নিয়ে ক্ষুব্ধ তা নয়। প্রবীণ আশ্রমিকদের একটা বড় অংশই বিশ্বভারতীর কাজকর্মে বিরক্ত। তারা বলছেন যে রবীন্দ্রনাথের আদর্শের পুরো বিপরীতে হাঁটছে বিশ্বভারতী। ঠাকুর পরিবারেরর বংশধর, শিক্ষাবিদ ও আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “রবীন্দ্রনাথের আদর্শের সম্পূর্ণ বিপরীত অভিমুখে চলছে বিশ্বভারতী। একেবারে ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের এই প্রতিষ্ঠানটাকে। চারদিকে পাঁচিল তুলে দিচ্ছেন উপাচার্য, স্বাধীনভাবে পড়াতে পারছেন না শিক্ষকরা, যাকে যখন ইচ্ছা সরিয়ে দেয়া হচ্ছে।“
মমতা ব্যানার্জীর অভিযোগের লিখিত জবাব দিয়েছে বিশ্বভারতী। কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘মাননীয়াকে অনুরোধ করব যে কান দিয়ে না দেখে বুদ্ধি দিয়ে বিচার করুন। আজ আপনার মনোনীত মন্ত্রী ও উপাচার্য গারদের ভিতরে। কী করে হল? কারণ আপনি স্তাবকদের কথা শুনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেই বিধ্বস্ত।’ তারা আরও বলেছে, ‘বিশ্বভারতী একমাত্র কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। আপনার আশীর্বাদ না থাকলে আমাদের সুবিধা কারণ আমরা প্রধানমন্ত্রীর মার্গদর্শনে চলতে অভ্যস্ত।’ এই বিবৃতিটির প্রতিটি লাইনেই রাজনীতি প্রকট হয়ে উঠেছে।
রাজ্য সরকারের সঙ্গে বিশ্বভারতীর সর্বশেষ বিতর্কের শুরু হয় শান্তিনিকেতন আশ্রম এলাকায় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের বাসভবনকে ঘিরে। বিশ্বভারতী তার বাবাকে বাড়ি করার জন্য যে জমি দিয়েছিল, তার থেকে কিছুটা জমি নাকি বেশি দখল করে রেখেছেন সেন, এমনটাই অভিযোগ করে কর্তৃপক্ষ। বিদ্যুৎ চক্রবর্তী উপাচার্য হয়ে আসার পরে একাধিকবার অমর্ত্য সেনের পৈতৃক বাসভবন প্রতীচি নিয়ে একই অভিযোগ তুলেছে বিশ্বভারতী। অধ্যাপক সেন প্রতিবারই সেই অভিযোগ নাকচ করেছেন।
এবার পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাদের ভূমি দপ্তরের রেকর্ডে থাকা পর্চা প্রকাশ করে জানিয়েছে যে যতটা জমি সেন পরিবারকে দিয়েছিল বিশ্বভারতী, ঠিক ততটাই তিনি রেখেছেন। বাড়তি জমি নেই। এ তথ্য মুখ্যমন্ত্রী তার শান্তিনিকেতন সফরের সময়েই অমর্ত্য সেনের হাতে তুলে দিয়ে এসেছেন। তার ফলে বিশ্বভারতী যে দাবী করে আসছিল এতদিন, তা যে অসত্য, সেটাও প্রমাণিত হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সেন পরিবারের জমি নিয়ে মমতা ব্যানার্জী তথ্য প্রকাশ করে দেয়ার ফলে মুখ পুড়েছে বিশ্বভারতীর। তাই একটা রাজনৈতিক বিবৃতি দিয়েছে তারা। জমি নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই উপাচার্য মন্তব্য করেন যে অমর্ত্য সেন নোবেল বিজেতা নন, তিনি নিজেই নাকি প্রচার করে থাকেন যে তিনি নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন।
বর্তমান উপাচার্যের বিরুদ্ধে হিন্দুত্ববাদের স্বপক্ষে রাজনীতি করার অভিযোগ আগেও উঠেছে। অর্মত্য সেনের বিরুদ্ধেও জমি দখল করে রাখার বিষয়টিও রাজনৈতিক বলেই মনে করা হয়। বিভিন্ন ইস্যুতে অধ্যাপক সেনের মতামত হিন্দুত্ববাদীদের বিপক্ষেই যায়, তাই তাকে যে বিশ্বভারতী পছন্দ করবে না, এটাই স্বাভাবিক বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
প্রাবন্ধিক রন্তিদেব সেনগুপ্তর কথায়, “রবীন্দ্রনাথের মুক্তচিন্তার যে আদর্শ, তা তো আরএসএস বিজেপির আদর্শের একেবারে বিপরীত। রবীন্দ্রনাথ সাম্প্রদায়িকতার উর্দ্ধে ছিলেন। এরা তো সেই চিন্তাভাবনাগুলো মেনে নিতে পারে না। মুক্ত চিন্তার চর্চা যেসব প্রতিষ্ঠানে চলে যেমন বিশ্বভারতী বা জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় – সবকটি ক্ষেত্রেই একটা অশান্ত পরিবেশ করে তোলার চেষ্টা হচ্ছে যাতে প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দেওয়া যায়। কেউ যাতে আর মুক্ত চিন্তা করতেই না পারে।“ তিনি আরও বলছিলেন, যে উপাচার্যের কাজকর্ম দেখে মনে হচ্ছে তিনি বিশ্বভারতী যেন ধ্বংস করার অ্যাজেন্ডা নিয়েই এসেছেন এখানে। সূত্র: বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।