Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আগুনে ধ্বংস হচ্ছে সুন্দরবন

প্রকাশের সময় : ১৬ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

গত মার্চের ২৭ তারিখ পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের নাংলি ক্যাম্প এলাকায় আগুন লেগে প্রায় ১০ একর বনভূমি পুড়ে যাওয়ার ১৭ দিনের মাথায় একই এলাকায় আবারো ভয়াবহ অগ্নিকা-ের খবর পাওয়া যাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের নাংলি টহলফাঁড়ির পচা কোরালিয়া ও নাপিতখালি বিলের মধ্যবর্তী আব্দুল্লাহ্রছিলা এলাকায় ১২ এপ্রিল সকালে আগুনের লেলিহান শিখা সাধারণ বাসিন্দাদের নজরে পড়ে। আগুন লাগার ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পরও স্থানীয় জনসাধারণ, বনবিভাগের কর্মী এবং ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি ইউনিটের সম্মিলিত চেষ্টায়ও আগুন নেভানো সম্ভব হয়নি। সুন্দরবনে অগ্নিকা- এখন একটি সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। শুকনো মৌসুমে বছরে একাধিকবার পূর্ব জোনের চাঁদপাই রেঞ্জসহ কয়েকটি স্থানে অগ্নিকা-ে ঘনবনের গাছপালা পুড়ে বিরান হওয়ার ঘটনা ঘটছে। খবর পাওয়া পর্যন্ত মঙ্গলবারের অগ্নিকা-ে ১০ একরের বেশি বনভূমি পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা। এবারের অগ্নিকা- এ যাবৎকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ। তীব্র বাতাসের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছিল না এবং যে কোনো সময় তা বিস্তৃত দাবানলে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রতিবারের মতো এবারের অগ্নিকা-ের সাথেও স্থানীয় কিছু সংখ্যক জেলে এবং বনবিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশ থাকতে পারে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন।
মার্চের শেষ সপ্তাহে সুন্দরবনে অগ্নিকা-ের পর প্রকাশিত একটি দৈনিক পত্রিকার রিপোর্টে বলা হয়েছিল, ২০০২ সাল থেকে এ পর্যন্ত সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জে অন্তত ১৮ বার অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। এসব অগ্নিকা-ে প্রায় ৬০ একর বনভূমি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। অধিকাংশ অগ্নিকা-ের পেছনে স্বার্থান্বেষী মহলের নাশকতার যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়। জেলেরা ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন লাগিয়েছে বলে খোদ বন বিভাগের তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। তবে স্থানীয় জনসাধারণ বনবিভাগের একশ্রেণীর কর্মকর্তা ও জেলেদের যোগসাজশের অভিযোগ তুলেছে। কথিত আছে, শরণখোলা উপজেলার উত্তর রাজাপুর ও ধানসাগর এলাকার কয়েকটি অসাধু মৎস্য শিকারি ও বনদস্যুচক্র প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে বনে আগুন লাগিয়ে মাছের বিল তৈরি করে থাকে। বন পুড়িয়ে তৈরি করা বিলে বর্ষায় তারা মাছ ধরার উৎসবে মেতে ওঠে। ধানসাগর স্টেশনের দায়িত্বে থাকা বনবিভাগের কর্মকর্তারা লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে বিলগুলো এসব দুর্বৃত্ত জেলেদের কাছে মৌসুমভিত্তিক মৌখিক ইজারা দিয়ে থাকে। কিছু সংখ্যক জেলে এবং কতিপয় বন কর্মকর্তার লোভের আগুনে ধারাবাহিকভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে সুন্দরবন। এ থেকে পরিত্রাণের কোনো স্থায়ী উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। বারবার অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটছে, গতানুগতিক প্রক্রিয়ায় তদন্ত কমিটি হলেও কখনো অপরাধী শনাক্ত বা শাস্তি না পাওয়ার কারণে বনধ্বংসের অপতৎপরতা বন্ধ হচ্ছে না।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ সুন্দরবন এলাকায় বহুবিধ ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কারণে এমনিতেই সুন্দরবনের অস্তিত্ব বড় ধরনের হুমকির মধ্যে পড়েছে। সুন্দরবন ও দক্ষিণাঞ্চলের কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় গ্যারান্টি ও বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবনকে ধ্বংসের আশঙ্কা থেকে রক্ষা করতে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে জনমত যতই বিস্তৃত ও জোরালো হচ্ছে, সুন্দরবন ধ্বংষের ষড়যন্ত্রকারীরা ততই যেন মরিয়া হয়ে উঠেছে। সুন্দরবন ধ্বংসের এই ষড়যন্ত্র প্রকারান্তরে বাংলাদেশ ধ্বংসের নীল নকশার অংশ। সুন্দরবনের যে অংশে বারবার আগুন লাগছে সেখানকার বনবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জবাবদিহিতার বাইরে থাকতে পারেন না। একই স্থান বারবার অগ্নিকা-ের শিকার হওয়ার পরও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কোনো কঠোর আইনগত পদক্ষেপ না নেয়া এবং এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের নীরবতা বিস্ময়কর। অগ্নিকা-ের মাধ্যমে বন ধ্বংস করে মাছের বিল সৃষ্টির বেনিফিশিয়ারিদের চিহ্নিত করতে হবে। দেশের অনন্য সম্পদ এবং প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সুন্দরবন ধ্বংসের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। সেইসাথে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে মাছ ধরা এবং বাণিজ্যিক নৌ-চলাচলে নিধেধাজ্ঞা জোরদার করা আবশ্যক। সুন্দরবনের সুরক্ষা অন্যতম জাতীয় নিরাপত্তার বিষয় হিসেবে গণ্য করে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ সুন্দরবনের অনিষ্টকারী সব ধরনের শিল্পায়ন ও বাণিজ্যিক কর্মকা- বন্ধ করতে হবে। নৌ-চ্যানেলে জাহাজডুবির স্যাবোটাজ এবং অগ্নিকা-ের হোতাদের ধরে আইনের আওতায় আনতে হবে। সুন্দরবনের সুরক্ষায় কোস্টগার্ড, র‌্যাবের মোবাইল টিম ছাড়াও বাড়তি নজরদারিসহ বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আগুনে ধ্বংস হচ্ছে সুন্দরবন
আরও পড়ুন