মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে গঠিত আনান কমিশন গত মাসে নতুন করে দেওয়া এক প্রতিবেদনে রাখাইন পরিস্থিতি তুলে ধরেছে। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত ওই কমিশন গত ৮ জুন ‘সঞ্চিত অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। নতুন প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, রাখাইন পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয়নি, বরং তা আরও খারাপ হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কমিশনের চূড়ান্ত সুপারিশগুলো মিয়ানমারের সংকট মোকাবিলার ক্ষেত্রে দেশটির সরকার ও তাদের আন্তর্জাতিক সহযোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ রূপরেখায় পরিণত হয়েছে। মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতির এক প্রতিবেদন থেকে এসব কথা জানা গেছে। রাখাইন সংকট সমাধানের প্রচেষ্টা সত্তে¡ও আনান কমিশনের এক বছরের কার্যকাল শুরুর পর পরই রোহিঙ্গা পরিস্থিতি বাজে রূপ ধারণ করে। ২০১৬ সালের অক্টোবর ও ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে ব্যাপকভাবে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। ইরাবতি বলছে, দুই সময়েই নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) প্রাণঘাতী হামলার পরেই এই সহিংসতা ছড়িয়েছে। এই হামলার পরই রাখাইনে সেনাবাহিনীর শুরু করা ক্লিয়ারেন্স অপারেশনে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়। আর এই কারণে প্রাণ হারায় হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক। বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা। রাখাইন সংকট নিয়ে ব্যাপক আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়ে মিয়ানমার সরকার ও এর ডি ফ্যাক্টো নেতা অং সান সু চি। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জাতিসংঘ এবং যুক্তরাষ্ট্র জাতিগত নিধনযজ্ঞের অভিযোগ করলেও তারা তা অস্বীকার করছে। কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশের পর তা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। মিয়ানমার সেনাবাহিনী এর যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। প্রতিবেদনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশ্ন উঠেছিল আরসা-র মতো গ্রæপগুলোর সঙ্গে কথা না বলায়। তবে নতুন প্রতিবেদনে আনান কমিশন দাবি করেছে, তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করতে গেলে কমিশনের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়তো। গঠনের পর থেকেই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রবল বাধার মুখে পড়েছে কফি আনানের নেতৃত্বাধীন রাখাইন উপদেষ্টা কমিশন। এই বিরোধিতায় বিশেষ সরব ছিল সাবেক ক্ষমতাসীন ও সামরিক-বাহিনী সমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি) ও রাখাইনভিত্তিক আরাকান ন্যাশনাল পার্টি (এএনপি)। উগ্র জাতীয়তাবাদী গ্রæপ মা বা থা-এর কাছ থেকেও শক্ত বিরোধিতার মুখে পড়ে রাখাইন উপদেষ্টা কমিশন। ‘বিদেশি প্রভাবের’ কমিশন দেশের ‘নিরাপত্তা এবং জাতীয় স্বার্থের ক্ষতি করতে পারে’ দাবি করে তারা এই কমিশন ভেঙে দেওয়ার আহ্বান জানাতে থাকে। একই ধরনের বক্তব্য আসে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তরফ থেকেও। তবে আনান কমিশনের নতুন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাং কমিশনের কাজে সহায়তা করবেন বলে কফি আনানকে আশ্বস্ত করেন। ২০১৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর এই কমিশনের বিলুপ্তির জন্য ইউনিয়ন পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছিল। এএনপি, ইউএসডি ও সামরিক বাহিনীর নিয়োগ করা আইন প্রণেতাদের সমর্থন সত্তে¡ও ওই পদক্ষেপ ব্যর্থ হয়। আনান কমিশন কাজ শুরুর এক মাসের মধ্যেই ২০১৬ সালের অক্টোবরে উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইনের মংডু শহরতলী এলাকায় বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) তিনটি চেকপোস্টে সমন্বিত হামলা চালায় আরসা সদস্যরা। হত্যা করা হয় ৯ বিজিপি কর্মকর্তাকে। এর প্রতিক্রিয়ায় সেনাবাহিনী মাসব্যাপী ওই অঞ্চলে ক্লিয়ারেন্স অপারেশন চালায়। ওই সময় বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গা। জাতিসংঘের ধারণা ওই সময়ে হত্যা করা হয় প্রায় এক হাজার রোহিঙ্গাকে। রাখাইন উপদেষ্টা কমিশন বলছে, ওই সহিংসতার মধ্য দিয়ে রাখাইন সংঘাতের ভিন্ন চিত্র দেখা গিয়েছিল। অনেক বছর পর প্রথমবারের মতো রাখাইনের মুসলিম স¤প্রদায় সেনাবাহিনী ও পুলিশের বিরুদ্ধে সুসমন্বিতভাবে সশস্ত্র আক্রমণ চালাতে পেরেছিল সেসময়। রাখাইন সংঘাতে এ পরিবর্তন আনান কমিশনের কাজকে মারাত্মক জটিল করে তোলে। প্রথমত, সামরিক বাহিনী এবং সরকারের বেসামরিক অংশ রাখাইনের সংঘাতকে ক্রমাগতভাবে সন্ত্রাসবাদ ও পাল্টা সন্ত্রাসবাদের দৃষ্টিতে দেখতে থাকলো। দ্বিতীয়ত, অন্য অংশে সহিংসতা না ছড়ালেও রাখাইনের প্রধান দুই স¤প্রদায়ের মধ্যকার সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে খারাপ হয়ে পড়ে, যদিও রাজ্যের অন্য অংশে সহিংসতা ছড়ায়নি। আর তৃতীয়ত, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহযোগীদের সঙ্গে মিয়ানমার সরকারের সম্পর্ক ব্যাপকভাবে খারাপ হতে থাকে। সহিংসতার পর জরুরী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে মনে করেছিল রাখাইন উপদেষ্টা কমিশন। আর সে উপলব্ধি থেকে ২০১৭ সালের মে মাসে একটি অন্তর্র্বতী প্রতিবেদন প্রকাশ করে তারা। ওই প্রতিবেদনে প্রাথমিক কিছু সুপারিশ করা হয়। তবে ওই বছরের আগস্টে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার আগে পর্যন্ত হাতে গোনা কয়েকটি সুপারিশই বাস্তবায়ন করা হয়। ইরাবতি, রয়টার্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।