Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বাড়ছে বিনিয়োগ অর্থনীতিকে বড় করছে ইপিজেড

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ৪ জুলাই, ২০১৮, ১২:০২ এএম

দেশের অর্থনীতিকে বড় করছে ইপিজেড। বাড়ছে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান। সদ্য পাস হওয়া ২০১৮-১৯ সালের বাজেটেও নেওয়া হয়েছে পরিকল্পনা। সরকার আশা করছে, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এক কোটি লোকের কর্মসংস্থান নিশ্চিত হবে এবং একই সঙ্গে আশাতীত বিনিয়োগ বাড়বে। সদ্য প্রকাশিত বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৮ এর তথ্যনুযায়ীÑ বাংলাদেশে বর্তমানে আটটি ইপিজেড রয়েছে। ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত ছয় শত প্রতিষ্ঠানকে শিল্প স্থাপনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে ৪৬৯টি উৎপাদনরত এবং ১৩১টি শিল্প প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত ইপিজেডসমূহে চার হাজার ৫৬০ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগে হয়েছে। সমীক্ষায় বলা হয়, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ২৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে প্রথম আট মাসে প্রকৃত বিনিয়োগ হয়েছে ২১৯ দশমিক ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আটটি ইপিজেডে চার লাখ ৮৫ হাজার ৯১৫জন বাংলাদেশী কর্মীর প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, এরমধ্যে ৬৪ শতাংশ নারী কর্মী। বর্তমান সরকার দেশের বিদ্যুৎ ঘাটতি দুর করে উৎপাদন ক্ষমতা ১৬ হাজার ৪৬ মেগাওয়াটে উন্নীত করেছে। ১৯ মার্চ ২০১৮ তে সর্বোচ্চ ১০ হাজার ৮৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিদ্যুৎ বিতরণ ও সিস্টেম লস ১১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
জানা গেছে, দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এক কোটি লোকের কর্মসংস্থানের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী ১৫ বছরে কোটি লোকের কর্মসংস্থানে ইতোমধ্যে সরকার ৭৯টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দিয়েছে। এরমধ্যে ৫৬টি সরকারি এবং ২৩টি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সমীক্ষায় আরো বলা হয়, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যবসা সহজীকরণ এবং বিনিয়োগকারীদের নির্বিঘেœ সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ওয়ান স্টপ আইন ২০১৮ পাস হয়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা একই স্থান থেকে নয় ধরনের সেবা পাবেন।
সরকার ইতোমধ্যে বিনিয়োগবান্ধব জাতীয় শিল্পনীতি প্রণয়ন করেছে। জাতীয় শিল্পনীতির খসড়ায় বলা হয়েছে ‘কোনো বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে ১০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ প্রায় আট কোটি টাকা বিনিয়োগ করলে অথবা কোনো স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানে ২০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ প্রায় ১৬ কোটি টাকা স্থানান্তর করলে তাকে এদেশের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।
ইতোমধ্যে ৭৯টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে কুয়েত, ডেনমার্ক, ভারত, চীন, জাপান, ওমান, কোরিয়ার, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, পর্তুগাল, রোমানিয়া, সুইডেনসহ ৩৭টি দেশ বিনিয়োগ করছে। সমীক্ষায় বলা হয়, সরকার ইপিজেডে শ্রমিকদের মজুরি ৬৭ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে এবং মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক উন্নয়নে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে।
বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নের ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রী জানান, ২০১৫ সালের পরে যে স্থিতিশীল ও আগ্রসর অর্থনীতির সূচনা আমরা করেছি তার সুফল হিসেবে বিনিয়োগ প্রসার ও বৈদেশিক বিনিয়োগ অনতিবিলম্বে এদেশের প্রতি আকৃষ্ট হতে যাচ্ছে।
সদ্য প্রণীত ওয়ানস্টপ সার্ভিস আইন, ২০১৮ বাস্তবায়নের জন্য একইস্থান হতে অনলাইনভিত্তিক ১৫০টি সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে সিঙ্গাপুরের আদলে সফট্ওয়্যার তৈরি করার কাজ প্রায় শেষ করে এনেছি। আশা করছি, এর মাধ্যমে শিগগিরই যে কোন বিনিয়োগ প্রস্তাব বিষয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এক স্থান হতে সকল প্রাসঙ্গিক সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে।
বাজেট বক্ততায় মুহিত বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহকে ঘিরেও আমাদের কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। এ অঞ্চলগুলির উন্নয়ন ও পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগকে উৎসাহিত করার অভিপ্রায় আছে আমাদের। এছাড়া, অঞ্চলগুলোর ভেতরে ও বাইরে পশ্চাদসংযোগ শিল্পকারখানা তৈরির মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে চাই। মহানগরীসহ বিভিন্ন এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা শিল্পকারখানাকে অর্থনৈতিক অঞ্চলে স্থানান্তরের বিষয়ে ব্যবসায়ী সংগঠনকে উৎসাহিত করতে আমরা সচেষ্ট আছি। এছাড়াও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে শিল্পখাতের বিকাশ, দক্ষ মানবসম্পদ গঠন, কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের কথা বলেছেন।
দেশে প্রতিবছর আনুমানিক ২০ লাখ লোক শ্রমবাজারে প্রবেশ করে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, তবে, শ্রমবাজারে আসা সকল কর্মী দক্ষ নয়। ফলে, দেশে বিপুল শ্রমশক্তি থাকা সত্তে¡ও দেশীয় শিল্পে দক্ষ শ্রমিকের জন্য আমাদের প্রতিবেশী দেশের কর্মীদের ওপর নির্ভর করতে হয়। অন্যদিকে, দক্ষতার ঘাটতির কারণে প্রবাসে বাংলাদেশী কর্মীরা যথাযথ মজুরি পায়না। অভিবাসী শ্রমিকদের সংখ্যানুপাতে বাংলাদেশে প্রবাস আয় প্রবাহ তুলনামূলকভাবে কম। এক্ষেত্রে, কর্মসংস্থানবান্ধব কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার সুযোগ বাড়ানো এবং এ ধরনের শিক্ষার প্রতি আগ্রহ তৈরি করা এবং মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন অর্থমন্ত্রী। বলেন, আধুনিক ও বস্তনিষ্ঠ মাদ্রাসা শিক্ষাও দীর্ঘমেয়াদে মধ্যপ্রাচ্যসহ আরবদেশগুলোতে মানসম্মত কর্মসংস্থানের সুযোগ লাভের ক্ষেত্রে অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে।
অর্থমন্ত্রী জানান, সারাদেশে ১০০টি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ নির্মাণ এবং অবশিষ্ট ৩৮৯টি উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আলোকে অভিবাসনে পিছিয়ে পড়া জেলাসমূহ হতে কর্মী প্রেরণের হার বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী বলেন, জিডিপি ও কর্মসংস্থানে শিল্পখাতের অবদান শক্তিশালী হলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন টেকসই হয় এবং ঝুঁকির আশঙ্কা কম থাকে। আমরা জাতীয় আয়ে শিল্পখাতের অবদান বর্তমান ৩০ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশে উন্নীত করতে চাই। একই সঙ্গে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোও আমাদের লক্ষ্য।###



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইপিজেড

১৫ অক্টোবর, ২০২২
১২ জানুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ