Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিনিয়োগ শিল্পায়নে কেইপিজেড

শফিউল আলম : | প্রকাশের সময় : ৫ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অপরূপ পরিবেশ-প্রকৃতি অটুট রেখেই উন্নয়ন মডেল : অর্ধলাখ শ্রমিক কাজ করছেন, পূর্ণাঙ্গ হলে ৩ লাখ লোকের কর্মসংস্থান
দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের জন্য এখন পুরোপুরি প্রস্তুত চট্টগ্রামে অবস্থিত কোরিয়ান রফতানি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প জোন- কেইপিজেড। ইতোমধ্যে এ বিশাল শিল্পাঞ্চলে আংশিক বিদেশী বিনিয়োগে শিল্পায়ন হয়েছে। কেইপিজেড হচ্ছে দেশের প্রথম ও একক কোন বিদেশী বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত বিশেষায়িত শিল্প এলাকা। বন্দরনগরীর অদূরে কর্ণফুলী নদীর মোহনা ও চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষিণ তীরে আনোয়ারা এলাকায় এটি গড়ে উঠেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার নামীদামী প্রতিষ্ঠান ইয়াংওয়ান কর্পোরেশনের উদ্যোগে এটি বিনিয়োগ শিল্পায়নের বিপুল সম্ভাবনাকে ধারণ করে এগিয়ে চলেছে। ইয়াংওয়ানের কর্ণধার বয়োবৃদ্ধ কোরীয় শিল্পপতি কিহাক সানের উদ্যোগে কেইপিজেড ছাড়াও অনেক আগে থেকেই চট্টগ্রাম ও ঢাকা ইপিজেডে প্রতিষ্ঠিত শিল্প-কারখানাসমূহ ঈর্ষণীয় সাফল্যের সাথেই পরিচালিত হয়ে আসছে। কেইপিজেড প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৯৯ সালে ২ হাজার ৪৯২ একর উঁচু-নিচু টিলাময় বিস্তীর্ণ ভূমি অধিগ্রহণ করে সরকার হস্তান্তর করে। পরিবেশ অধিদপ্তর কেইপিজেডকে ছাড়পত্র দেয় ২০০৯ সালে। সেখানকার অপরূপ পরিবেশ-প্রতিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও নিটোল প্রকৃতিকে অটুট রেখেই দক্ষিণ এশিয়ায় নীরবে উন্নয়নের মডেলে রূপান্তরিত হয়েছে এই শিল্পাঞ্চলটি। কেইপিজেডের মূল কোরীয় কোম্পানি ইয়াংওয়ান কর্পোরেশন বাংলাদেশে গার্মেন্টস খাতে সর্বপ্রথম বিদেশী বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। ইয়াংওয়ান ১৯৮৭ সালে চট্টগ্রাম ইপিজেডে কারখানা স্থাপন করে। বর্তমানে দেশে কোরীয় কোম্পানিটির ১৭টি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেখানে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার শ্রমিকের। বাংলাদেশসহ ১৩টি দেশে ইয়াংওয়ানের বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন রয়েছে।
কেইপিজেড শিল্প-কারখানা স্থাপনের সক্ষমতা নিয়ে পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করলে অন্তত ৩ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের ভাগ্য হবে সুনিশ্চিত। কেইপিজেডে ইতোমধ্যে ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান করেছে। এর প্রথম কারখানা কর্ণফুলী স্যুজ ফ্যাক্টরিতে এখন ১৮ হাজার শ্রমিক কর্মরত। তাদের মধ্যে ১৫ হাজারই আশপাশের গ্রামের বাসিন্দা। পরিকল্পিত এই শিল্পাঞ্চলের পূর্ণাঙ্গ অবকাঠামো উন্নয়নে ২০ কোটি ডলার এবং একশ’ শিল্প-কারখানা স্থাপনে ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে কেইপিজেড কোম্পানির। বিভিন্ন ধরনের শিল্প-কারখানায় উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী রফতানি বাবদ বার্ষিক আয়ের টার্গেট রয়েছে ১ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলারের। কেইপিজেড ছাড়াও আনোয়ারা এবং এর আশপাশ এলাকার পটিয়া, কর্ণফুলী, বাঁশখালীতে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন হবে প্রসারিত। বিশ্বমানের এই রফতানি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পাঞ্চলটি গত প্রায় ১৬ বছরে ধাপে ধাপে গড়ে তোলা হয়েছে। কেইপিজেড পরিপূর্ণ বাস্তবায়িত হলে সেখানে নিজস্ব জেটি-বার্থ, আইটি পার্ক, স্কুল-কলেজ, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ভাষা শিক্ষা ও রিসার্চ সেন্টার, টেকনিক্যাল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। এরজন্য কারিগরি নকশা তৈরি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে অবকাঠামো সুযোগ-সুবিধা হিসেবে যুক্ত হচ্ছে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস সরবরাহ, টেলিকম সুবিধা, ব্যাংক, কাস্টমস, সিএন্ডএফ, শিপিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্টসহ বন্দর সংশ্লিষ্ট সেবাসমূহ। বিদেশী বিনিয়োগকারী, নির্বাহী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসন সুবিধা, ১৮ হোল গালফ কোর্সসহ অন্যান্য বিনোদন পরিকল্পনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের। সময়ের হাত ধরে বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণে আরও সেবা-সুবিধা প্রদান করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ও কোরিয়া সরকারের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে ইপিজেড আইন ১৯৯৬ অনুসারে ইয়াংওয়ান কর্পোরেশন কোরিয়া বাংলাদেশে একটি ইপিজেড স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে রেজিস্ট্রেশন করে। ক্রয় ও মালিকানা সম্পর্কিত নিয়ম-প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে ১৯৯৯ সালের আগস্টে কোরিয়ান ইপিজেডকে ভূমি হস্তান্তর করে সরকার কোরিয়ান ইপিজেডকে একটি শিল্প জোন হিসেবে ঘোষণা দেয়। এরআগে ১৯৯৮ সালে সরকার প্রায় আড়াই হাজার একর পাহাড়ি ভূমি কোরীয় কর্তৃপক্ষকে বরাদ্দ প্রদান করে। পরিবেশ ছাড়পত্রের শর্ত অনুযায়ী মোট জমির ৫২ শতাংশ বনায়ন, জলাধার সৃজন ও উন্মুক্ত এলাকা হিসেবে থাকবে। এসব শর্তের নিরিখে ৮২২ একর ভূমিতে ২০ লাখ গাছপালা লাগানো হয়েছে। ৪৭০ একর জায়গায় ১৭টি জলাধার ও উন্মুক্ত এলাকায় ঘাস লাগিয়ে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বিনোদনের জন্য গলফ কোর্স তৈরি হয়েছে।
অবশিষ্ট ১ হাজার ২০০ একর ভূমিতে রাস্তাঘাট ও শিল্প-কারখানা স্থাপনের উপযোগী অবকাঠামো গড়ে তোলার কাজ সম্পন্ন হতে চলেছে। সেখানে পাখ-পাখালী ও জীবজন্তুর বিচরণের মধ্যদিয়েই কল-কারখানার চাকা ঘুরছে। যা দেশে একটি ব্যতিক্রমী শিল্প এলাকা। কেইপিজেডে এখন পর্যন্ত ২৪টি কল-কারখানার উপযোগী ভবন নির্মিত হয়েছে। এর আয়তন প্রায় ৩০ লাখ বর্গফুট। মূল পরিকল্পনা অনুসারে সেখানে একশ’ একর জমিতে তথ্য-প্রযুক্তি শিল্প (আইটি), ১৪০ একর জমিতে টেক্সটাইল-শিল্প, ৫০ একর জমিতে ওষুধ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তাছাড়া কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্প, মাঝারি শিল্প গড়ে উঠবে। এরজন্য অবকাঠামো উন্নয়নে মোট ব্যয় হবে ২০ কোটি ডলার। এরফলে বিনিয়োগ আশা করা হচ্ছে ১২০ কোটি ডলারের। আর বার্ষিক পণ্য রফতানি আয়ের টার্গেট রাখা হয়েছে সোয়া একশ’ কোটি ডলার। কেইপিজেডে শিল্প স্থাপনে কোরীয় শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান স্যামসাং আগ্রহ ব্যক্ত করেছে বলে শিল্পোদ্যোক্তারা জানান। তারা কেইপিজেডে ২শ’ একর ভূমি চায়। তাছাড়া আরও কয়েকটি নামকরা প্রতিষ্ঠান সেখানে বিনিয়োগ ও শিল্প স্থাপনে আগ্রহী।



 

Show all comments
  • Masud Raihan ৫ নভেম্বর, ২০১৭, ১১:৪৫ এএম says : 0
    KEPZ will be a model of investment and trade, industrialization. We need permanent political stability for our desired economic growth.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কেইপিজেড
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ