Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১ আশ্বিন ১৪৩১, ২২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

যানজট নিরসনে নতুন উদ্যোগ

অর্থনীতির লাইফলাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক

নূরুল ইসলাম : | প্রকাশের সময় : ৪ জুলাই, ২০১৮, ১২:০২ এএম

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট নিরসনে নতুন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। মহাসড়কে যানবাহনের গতি বাড়াতে এবং যানজট এড়াতে এবার পৃথক ট্রাক লেন নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে। এর আগে চার লেনের এই মহাসড়কে পৃথক সার্ভিস লেন নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছিল। ইতোমধ্যে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে রায়েরবাগ পর্যন্ত মহাসড়কের এক পাশে পৃথক সার্ভিস লেন নির্মাণ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। তবে সার্ভিস লেনটি নির্মাণ করার পরই তা বেদখল হয়ে গেছে। যাত্রাবাড়ীর রসুলপুর থেকে দনিয়া পর্যন্ত পুরো সার্ভিস লেনটি এখন স্থানীয় দোকানদারদের দখলে। রিকশাসহ ধীর গতির যানবাহনগুলো এই সার্ভিস লেন ব্যবহারের কথা থাকলেও এখনও তা কার্যকর করা হয়নি। বরং রিকশা, ভ্যান সবই চলছে মহাসড়ক দিয়েই। এতে করে দূরপাল্লার যানবাহনগুলো স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না। ঢাকায় প্রবেশের মুখে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের মুখে প্রায়ই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
অর্থনীতির লাইফলাইনখ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট এখন নিত্যদিনের ঘটনা। বিশেষ করে মহাসড়কের মেঘনা ও গোমতী সেতুতে নানা কারনে প্রতিনিয়ত যানজট লেগেই থাকে। হাইওয়ে পুলিশের উর্ধ্বত এক কর্মকর্তা জানান, এই দুই সেতু দুই লেনের। চার লেনের মহাসড়ক ধরে যানবাহনগুলো এসে দুই লেনের সেতুতে ধীর গতিতে উঠতে গিয়ে প্রথম যানবাহনের দীর্ঘ সারি তৈরী হয়। পরে তা যানজটে রুপ নেয়। যানবাহনের চাপ বাড়লে এই যানজট ক্রমে ভয়াবহ আকার ধারন করে। সেতুর টোল আদায়ে নানা অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের কথা উল্লেখ করে কর্তব্যরত এক পুলিশ সদস্য জানান, টোল আদায়ে ৮টি বুথ বসানো হলেও সময়মতো সেগুলো চালু না থাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। আরেক পুলিশ সদস্য জানান, সেতু এলাকায় যানজটের আরেকটি প্রধান কারন সেতুতে উঠতে গিয়ে যানবাহন বিকল হয়ে যাওয়া। প্রতিদিনই কোনো না কোনো বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান সেতুতে উঠতে গিয়ে অথবা সেতুর উপরে বিকল হয়ে যায়। এতে করে যানজটের সৃষ্টি হয়। রেকার এনে বিকল হওয়া গাড়ি না করানো পর্যন্ত যানজট পরিস্থিতির উন্নতি করা যায় না। বাস চালকদের অভিযোগ, পুলিশ রেকার আনতে গড়িমসি করে। সে কারনেও ভোগান্তি বাড়তে থাকে। ভুক্তভোগি একাধিক বাস চালক বলেন, যেহেতু দুই সেতুতে উঠতে গিয়েই বেশিরভাগ গাড়ি বিকল হয়, সেহেতু সেতুর দুই পাড়ে দুটি রেকার প্রস্তুত রাখলে বেশিক্ষণ সময় লাগার কথা নয়। পুলিশ জেনেও তা করে না।
সড়ক ও জনপদ (সওজ) সূত্র জানায়, ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিভিন্ন কারনে সৃষ্ট যানজট এড়াতে এবং যানবাহনের গতি বাড়াতে সম্প্রতি এই মহাসড়কে পৃথক ট্রাক লেন নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে।
সুপারিশে বলা হয়, মহাসড়কে চলাচলকারী পণ্যবাহী ট্রাক বিকল হয়ে মহাসড়কটিতে যানজট তৈরি করে। এছাড়া ধীরগতির ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের কারণে চার লেনে উন্নীত করা হলেও মহাসড়কটির পূর্ণ সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। সওজ সূত্র জানায়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উদ্যোগে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট নিরসনে করণীয় শীর্ষক এক বৈঠকে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের জন্য পৃথক লেন তৈরীর সুপারিশ করা হয়।
বৈঠক সূত্র জানায়, চলতি বছরের মে মাসে টানা কয়েক দিন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তীব্র যানজট হয়। ফেনী রেল ওভারপাস নির্মাণের কারণে একদিকের সড়ক বন্ধ থাকা ও বিকল্প সড়ক ব্যবহার অনুপযোগী হওয়াই ছিল এর মূল কারণ। নির্মাণাধীন এই ওভারপাস ছাড়াও নিয়মিতই এ মহাসড়কে যানজট লেগে থাকে। এজন্য ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছাতে ৪ ঘণ্টার পথ কখনও কখনও ১৯-২০ ঘণ্টাও লেগে যায়। এজন্য গত মাসে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে মহাসড়কটির যানজট নিরসনে জরুরি বৈঠক আহŸান করা হয়।
সূত্র জানায়, বৈঠকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা হয়। এগুলো হলো, অতিরিক্ত ওজনবাহী যানবাহন, ওজন স্কেলের ব্যবস্থাপনায় ত্রæটি, মেঘনা ও গোমতী সেতুতে টোল বুথের সংখ্যা অপ্রতুল ও টোল পরিশোধের সময় ভাংতি না থাকা, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের আধিক্য, নিষিদ্ধ থ্রি হুইলারসহ ব্যাটারিচালিত গাড়ি ও ইজিবাইক চলাচল বন্ধ না হওয়া, গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে মোবাইল কোর্টের সংখ্যা কম, মহাসড়কে কোনো ট্রাক টার্মিনাল না থাকা, মহাসড়কের উপরেই ট্রাক পার্কিং এবং ফৌজদারহাট থেকে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত মহাসড়কে ডিভাইডার না থাকা। বৈঠকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট নিরসনে পৃথক ট্রাক লেন নির্মাণ ছাড়াও বেশ কয়েকটি সুপারিশ করা হয়। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মতো এই মহাসড়কেও একটি ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের সুপারিশ করা হয়, যাতে যত্রতত্র ট্রাক পার্কিং ও পণ্য ওঠানামা বন্ধ হয়। এছাড়া ওভারলোড ট্রাকগুলোকে মাঝপথ থেকে না ফিরিয়ে উৎসমুখেই আটকানোর সুপারিশ করা হয়। এজন্য পণ্য লোডিং পয়েন্টে ওজন স্কেল স্থাপনেরও সুপারিশ করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মহাসড়ক

২৮ ডিসেম্বর, ২০২২
২১ ডিসেম্বর, ২০২২
২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ