Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত নয় মিয়ানমার রেডক্রস

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩ জুলাই, ২০১৮, ১২:০৫ এএম

 মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি এখনও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য প্রস্তুত নয় বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি (আইসিআরসি)। স¤প্রতি রাখাইন অঞ্চল পরিদর্শনকারী আইসিআরসি’র প্রেসিডেন্ট পিটার মাউরার রোববার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এমন পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছেন। মাউরারের দাবি, রাখাইন সফরে গিয়ে যা দেখেছেন, তাতে তিনি মনে করছেন না সহসা প্রত্যাবাসন শুরু হবে। তবে এ ব্যাপারে মিয়ানমার সরকারের বক্তব্য জানা যায়নি বলে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।
গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। জাতিগত নিধন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা। মিয়ানমার শুরু থেকেই রোহিঙ্গাদের বাঙালি মুসলিম আখ্যা দিয়ে নাগরিকত্ব অস্বীকার করে আসছে। তবে এবারের ঘটনায় আন্তর্জাতিক চাপ জোরালো হওয়ার একপর্যায়ে প্রত্যাবাসন চুক্তিতে বাধ্য হয় মিয়ানমার। তবে সেই চুক্তির পর বেশ খানিকটা সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও ধোঁয়াশা কাটছে না। চুক্তির আওতায় এখনও একজন রোহিঙ্গাকেও ফিরিয়ে নেয়নি মিয়ানমার। এরমধ্যেই গত ৬ জুন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে মিয়ানমারের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে জাতিসংঘ। তবে সেখানেও নাগরিকত্ব প্রশ্নটি অমীমাংসিত থাকায় এরইমধ্যে ওই চুক্তি নিয়েও হতাশা প্রকাশ করেছে রোহিঙ্গারা।
মিয়ানমার সরকার দাবি করে আসছে, তারা রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে প্রস্তুত। তাদের দাবি, প্রত্যাবাসনের জন্য দুইটি অভ্যর্থনা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে এবং প্রত্যাসিত রোহিঙ্গাদেরকে প্রথমে রাখার জন্য রাখাইন সীমান্তে একটি অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। তবে মিয়ানমারের এ প্রস্তুতি নিয়ে মোটেও সন্তুষ্ট নন আইসিআরসি প্রেসিডেন্ট।
আইসিআরসি’র প্রেসিডেন্ট পিটার মাউরার স¤প্রতি রাখাইন রাজ্য পরিদর্শন করেছেন। আর রবিবার (১ জুলাই) বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন। এদিন রয়টার্সকে তিনি বলেন, স¤প্রতি মিয়ানমার সফর করে যে পরিস্থিতি দেখে এসেছেন তাতে সেখানে রোহিঙ্গাদের এখনই ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়। মাউরার বলেন, ‘আমি মনে করি, বড় আকারের প্রত্যাবাসনের পরিকল্পনাকে বাস্তবে পরিণত করতে এখনও অনেক কাজ বাকি। প্রত্যাবাসিত রোহিঙ্গাদের অভ্যর্থনা ও গ্রহণ সংক্রান্ত অবকাঠামো নির্মাণ, প্রস্তুতি এবং পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদেরকে আবারও নিজেদের মাঝে গ্রহণ করতে রাখাইনের বিভিন্ন স¤প্রদায়ের প্রস্তুতি...সব কাজই এখনও অসম্পূর্ণ।’
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, মাউরারের বক্তব্যের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে তাৎক্ষণিকভাবে মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ত্রাণ কার্যক্রম বাতিল করার পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মূল সহায়তাটুকু রেড ক্রস থেকেই আসছে। রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরকে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো সমর্থন দিচ্ছে বলে মিয়ানমার সরকার অভিযোগ তোলার পর ত্রাণ কার্যক্রম বাতিল করা হয়েছিল।
প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে রোহিঙ্গারা রাখাইনে থাকলেও মিয়ানমার তাদের নাগরিক বলে স্বীকার করে না। উগ্র বৌদ্ধবাদকে ব্যবহার করে সেখানকার সেনাবাহিনী ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে স্থাপন করেছে সা¤প্রদায়িক অবিশ্বাসের চিহ্ন। ছড়িয়েছে বিদ্বেষ। ৮২-তে প্রণীত নাগরিকত্ব আইনে পরিচয়হীনতার কাল শুরু হয় রোহিঙ্গাদের। এরপর কখনও মলিন হয়ে যাওয়া কোনও নিবন্ধনপত্র, কখনও নীলচে সবুজ রঙের রশিদ, কখনও ভোটার স্বীকৃতির হোয়াইট কার্ড, কখনও আবার ‘ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড’ কিংবা এনভিসি নামের রং-বেরঙের পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষকে। ধাপে ধাপে মলিন হয়েছে তাদের পরিচয়। ক্রমশ তাদের রূপান্তরিত করা হয়েছে রাষ্ট্রহীন বেনাগরিকে।
গত ৮ জুন মিয়ানমার ও জাতিসংঘের মধ্যে যে সমঝোতা স্মারকটি স্বাক্ষরিত হয়েছে সেখানেও রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের প্রশ্নটি উপেক্ষিত। চুক্তির বিস্তারিত এখনও প্রকাশিত না হলেও তা ইতোমধ্যেই অনলাইনে ফাঁস হয়েছে। গত ২৯ জুন এক প্রতিবেদনে রয়টার্স জানিয়েছে,তারা দুইটি বেসরকারি আন্তর্জাতিক সংস্থার সূত্রে নিশ্চিত হয়েছে এটিই মিয়ানমার-জাতিসংঘ সমঝোতার খসড়া। ওই সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের একদিন আগে খসড়াটি প্রস্তুত করা হয়। তবে তার আগেই এর মূল ভাষ্য রচিত হয়েছিল কূটনীতিক ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর জন্য দেওয়া জাতিসংঘ শরণার্থী কমিশনের ব্রিফিং-এ। সেই নথিও রয়টার্সের হাতে এসেছে। প্রত্যাবাসন প্রশ্নে শরণার্থী কমিশনের একটি চিঠির অনুলিপিও পেয়েছে রয়টার্স। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ও জাতিসংঘের মধ্যকার সমঝোতা স্মারকটির(এমওইউ) অনুলিপি পর্যালোচনার পর রয়টার্স জানিয়েছে,সই হওয়া গোপন চুক্তিতে দেশটিতে ফেরত যাওয়া রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কিংবা সারা দেশে স্বাধীনভাবে চলাচলের কোনো প্রকাশ্য নিশ্চয়তা নেই। এতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের ‘রোহিঙ্গা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি। নাগরিকত্বের প্রশ্নের মীমাংসা কী হবে তাও স্পষ্ট নয়। প্রত্যাবর্তনকারী সবাইকে যথাযথ পরিচয়পত্রের কাগজ ও তারা যাতে স্বেচ্ছায় মুক্তভাবে ফিরতে পারেন,মিয়ানমার সরকারকে তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
চুক্তির খসড়া অনুযায়ী, রাখাইনে অন্যান্য অধিবাসীদের মতোই প্রচলিত আইন মেনে স্বাধীনভাবে চলাচলের অধিকার ভোগ করবেন ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গারা। তবে রাখাইন রাজ্যের সীমানার বাইরেও তারা স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারবে কিনা,সেই নিশ্চয়তা দেয়া হয়নি। এমনকি বর্তমানে যে আইন ও নীতিমালা দিয়ে রোহিঙ্গাদের অবাধ চলাফেরার অধিকার রোধ করা হয়েছে,তা সংশোধনের প্রতিশ্রæতিও সেখানে নেই। রয়টার্সের সা¤প্রতিক এক অনুসন্ধানেও নিশ্চিত করা হয়েছে,৮২ সালে প্রণীত যে নাগরিকত্ব আইনে রোহিঙ্গাদের কার্যত রাষ্ট্রহীন করে রাখা হয়েছে,তা পর্যালোচনার কোনও পরিকল্পনা আপাতত নেপিদোর নেই। সূত্র বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ