Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অনুমোদন ছাড়াই ফ্লাইওভারের নকশা পরিবর্তন

প্রকাশের সময় : ১৪ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নকশা পরিবর্তন করেছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা। যাত্রীবাহী বাস দাঁড়ানোর ব্যবস্থা এবং লোকজনের ওঠানামার জন্য আলাদা সিঁড়ি তৈরির মাধ্যমে নকশার পরিবর্তন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পিপিপি এবং পিএসসিসি’র কোনো অনুমোদন নেয়া হয়নি বলে জানা যায়। পিপিপি ও পিএসসিসি’র শর্ত লঙ্ঘনের বিষয়ে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালকও কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নামমাত্র একজন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দিলেও সেই প্রকল্প পরিচালক এখন দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন। দুই বছরের বেশি আগে উদ্বোধন হওয়া ফ্লাইওভারের নকশা পরিবর্তন বিষয়ে গত বছর নির্বাচিত দক্ষিণের সিটি মেয়র সাঈদ খোকনের কিছু না জানা অস্বাভাবিক নয়। তবে তথাকথিত প্রকল্প পরিচালক এবং নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ওরিয়ন গ্রুপের দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। ফ্লাইওভারগুলো নির্মাণের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে যানজটমুক্ত ও দ্রুততর যাতায়াত নিশ্চিত করা। ফ্লাইওভারে ওঠা মানে হাইওয়ে রাস্তায় পৌঁছে যাওয়া। ওয়ান ওয়ে ব্যবস্থা কার্যকর থাকায় সেখানে সাধারণত লোকাল বাসের যাত্রীদের মতো ওঠানামার সুযোগ রাখা হয় না। নকশা পরিবর্তন করে ফ্লাইওভারে যাত্রী ওঠানামার সুযোগ রাখা এবং ত্রুটিপূর্ণ অথবা ঝুঁকিপূর্ণ এক্সপানশন জয়েন্ট স্থাপনের মাধ্যমে ফ্লাইওভারকে নির্বিঘœ, দ্রুত ও ঝুঁকিমুক্ত চলাচলের উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত করা হয়েছে।
ঢাকার যানজট নিরসন ও সৌন্দর্য বর্ধনে ফ্লাইওভারগুলো কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হয়েছিল। ঢাকা নগরীতে একে একে অন্তত চারটি ফ্লাইওভার উদ্বোধনের পর নগরীর যানজট সমস্যা অনেকটা নিরসন হয়েছে, এমনটা সম্ভবত এখনো দাবি করা যাচ্ছে না। তবে ফ্লাইওভার নির্মাণ ব্যয়ের ক্ষেত্রে দুর্নীতি এবং ভুল নকশায় ফ্লাইওভারের মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয় এখন অন্যতম আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ভুল নকশায় ও ত্রুটিপূর্ণ নির্মাণের কারণে মৌচাক-মগবাজার ফ্লাইওভারের এক ডজনের বেশি পিলার ভেঙে পুনর্নির্মাণের কারণে কয়েক দফা সময় বাড়ানোর পর সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী তা উদ্বোধন করেছেন। অন্যদিকে ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকার বৃহত্তম মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার প্রায় আড়াই বছর আগে উদ্বোধনের পরই এটি পথচারী ও মোটরসাইকেল চালকদের জন্য মরণ ফাঁদ হয়ে উঠেছে। প্রকাশিত একটি রিপোর্ট থেকে জানা যায়, পুলিশের হিসাবে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে দুর্ঘটনায় প্রথম দুই বছরে অন্তত ৯ জন নিহত এবং শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। ফ্লাইওভারের এক্সপানশন জয়েন্টে মোটরসাইকেলের চাকা আটকে অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে বলে জানা যায়। একটি অনুসন্ধানমূলক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, সুইজারল্যান্ডের ম্যাগেবা নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ভারতীয় কারখানায় নির্মিত এক্সপানশন জয়েন্টগুলো নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের ইঞ্জিনিয়ারদের তত্ত্বাবধানে বসানো হয়েছে, এসব এক্সপানশন জয়েন্ট আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার দাবি করেছেন ফ্লাইওভার বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ওরিয়ন গ্রুপের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। এক্সপানশন জয়েন্টে আটকে একের পর এক মর্মান্তিক সব দুর্ঘটনায় মানুষ হতাহত হওয়ার পরও কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার অগ্রহণযোগ্য দাবি করছে।
খিলগাঁও-মালিবাগ ফ্লাইওভারও উদ্বোধনের অল্প কিছুদিন পরই ফাটল বা নির্মাণ ত্রুটির কারণে বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দেশের প্রায় প্রতিটি মেগা প্রকল্পেই দুর্নীতি, সময়মতো বাস্তবায়ন না হওয়া, নির্মাণ ত্রুটিসহ নানাবিধ দুর্বলতা ধরা পড়ছে। বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর নির্মাণ ত্রুটি, ফাটল এবং ত্রুটিপূর্ণ অ্যাপ্রোচ রাস্তা মরণ ফাঁদে পরিণত হয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় অস্বাভাবিক হারে হতাহতের খবর পাওয়া যায়। উল্লেখ্য, এক দশকের বেশি আগে বিগত চারদলীয় জোট সরকার প্রথম যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। প্রথমে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা নির্মাণব্যয় ধরা হলেও নকশা পরিবর্তন ও সম্প্রসারণের পাশাপাশি বাস্তবায়নের সময় বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে এর নির্মাণব্যয় বেড়েছে চার গুণের বেশি। সম্প্রতি প্রকাশিত এক রিপোর্টে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার নির্মাণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে ২ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ফ্লাইওভারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনের কোনো সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও গত ৫ অর্থবছরে ফ্লাইওভার নির্মাণ খাতে এই বিপুল পরিমাণ ব্যয় দেখানো হয়েছে বলে দুদকে অভিযোগ করা হয়েছে। দক্ষিণের সিটি মেয়র সাঈদ খোকনের পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার নির্মাণে কথিত দুর্নীতি, অননুমোদিতভাবে নকশা পরিবর্তনের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দায়দায়িত্ব সিটি মেয়র এড়াতে পারেন না। নকশা পরিবর্তনের মাধ্যমে ফ্লাইওভারে গণপরিবহন থামানো ও যাত্রী ওঠানামার সুযোগ সৃষ্টি একটি বিপজ্জনক পদক্ষেপ। এর ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বৃদ্ধি ছাড়াও যান চলাচল বৃদ্ধির সাথে সাথে ফ্লাইওভারের ওপর যানজট সৃষ্টি হলেও অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। এভাবেই হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যই ভ-ুল হয়ে যেতে পারে। এসব ত্রুটি, অননুমোদিত নকশায় প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং দুর্নীতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অনুমোদন ছাড়াই ফ্লাইওভারের নকশা পরিবর্তন
আরও পড়ুন