পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
যদি সুন্দর একখান মুখ পাইতাম
যদি নতুন একখান মুখ পাইতাম
মইশখালীর পানের খিলি তারে
বানাই খাবাইতাম।
চট্টগ্রামের সুমিষ্ট কণ্ঠের শিল্পী শেফালী ঘোষ নেই। কিন্ত তার গাওয়া এই গানটি বেঁচে আছে সবার মাঝে। নিজের গাওয়া অগনিত গানের মাঝে এই একটি গান শেফালী ঘোষকে জনপ্রিয়তার সর্বোচ্চ শিখরে নিয়েছিল। শেফালী নেই তাতে কি, তার গান সবার মাঝে তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে।
যে পানির খিলি বানিয়ে খাওয়ানোর কথা শেফালী ঘোষ বলেছেন সেই পান হলো কক্সবাজারের অদূরে চারদিকে সাগর বেষ্ঠিত মহেশখালী উপজেলার। চলতি বছর মহেশখালীতে মিষ্টি পানের বাম্পার ফলন হয়েছে। দেশে সবচেয়ে বেশি মিষ্টি পান উৎপাদন হয় মহেশখালীতে। এবার প্রায় ১৬ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন মিষ্টি পান উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছে মহেশখালীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
সুন্দর একখান মুখকে খিলি বানিয়ে খাওয়ানোর মিষ্টি পান শুধু কক্সবাজার-চট্টগ্রামে নয়, দেশের গÐি পেরিয়ে চাহিদা রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে। যাদের নিয়মিত মুখে এক খিলি পান চাই তারা বাজারে গিয়ে প্রথমেই খোঁজ করেন মহেশখালীর মিষ্টি। উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের পনিরছড়া গ্রামের পানচাষি হেলাল জানান, চলতি মৌসুমে পানের যেমন বাম্পার ফলন হয়েছে তেমনি দামও রয়েছে ভালো। এতে এবার পান চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামসুল আলম জানান, মহেশখালীর মাটি পান চাষের জন্য খুবই উপযোগী। চলতি বছর ১৬০০ হেক্টরের বেশি জমিতে এই মিষ্টি পানের চাষ হয়েছে। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। তিনি জানান, কৃষি বিভাগ থেকে মৌসুমের শুরুতে পান চাষিদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়েছে।
তিনি জানান, কোন মড়ক দেখা দিলে কৃষি বিভাগ তাৎক্ষণিক সহযোগিতা ও পরামর্শে এগিয়ে এসেছে। এছাড়া পানের মড়ক রোগ বিষয়ে চাষিদের মাঝে করণীয় ও সচেতনতা সৃষ্টি করা হয়েছে। চাষিরা পানের সর্বাধিক মূল্য পাচ্ছে। সরকারিভাবে বন্ধ থাকলেও ব্যক্তিগত উদ্যোগে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পান রফতানি হচ্ছে।
মিষ্টি পান সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মোহাম্মদ বাবুল জানান, যেভাবে পানের ফলন হয়েছে সেভাবে দাম স্থিতিশীল থাকে তাহলে চলতি মৌসুমে মহেশখালীতে ৩০০ কোটি টাকারও অধিক পান উৎপাদন সম্ভব হবে। বর্তমানে যেসব জেলায় বেশি পরিমানে পান যাচ্ছে সেগুলো হলো চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও ঢাকা। দেশের সীামনা ছাড়িয়ে সউদী আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে মিষ্টি পানের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। রফতানি বৃদ্ধি পেলে পান চাষ বাড়বে। আর পান চাষ বাড়লে উৎপাদনও বাড়বে বলে জানান একাধিক পানচাষি ও ব্যবসায়ী।
পানের রয়েছে বহুবিধ উপকারিতা। পানে মুখের স্বাদ ফিরে আসে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, গলার সমস্যা ও আওয়াজ পরিষ্কার করে, হজম শক্তি বাড়ায়, পেট পরিষ্কার রাখে, হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করে। সর্দি-কাশিতে পানের রস খেলে উপকার পাওয়া যায়। পানের সাথে গোলমরিচ, লবঙ্গ মিশিয়ে খেলে কাশি কমে। মুখে ঘা হলে পানের মধ্যে কর্পুর দিয়ে চিবিয়ে খেয়ে বার বার পিক ফেললে সুফল পাওয়া যায়। পান খাওয়ার ফলে মুখে যে লালার সৃষ্টি হয় তা হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
কালারমারছড়ার পানচাষি আবু তাহের জানান, তাদের এলাকায় বেশি জমিতে পান চাষ করায় ফলনও বেড়েছে। এতে স্থানীয় লোকজন পান চাষের প্রতি আগের তুলনায় বেশি আগ্রহী। তবে পান চাষের খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষিরা শুরুতে হিমশিন খান। মহাজনদের কাছ থেকে দাদন নিতে হয় বলে অনেক পান চাষি ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হন।
মহেশখালী উপজেলা পান চাষি সমবায় সমিতির সভাপতি মো. শাহ আলম জানান, পান চাষিরা সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তারা কম সুদে ব্যাংক ঋণ সহায়তা পেলে পান চাষ আরও অনেক সম্প্রসারিত হতো। তিনি কম সুদে ব্যাংক ঋণ প্রদানের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানান।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কালাম বলেন, মহেশখালীর পান চাষিদের আগ্রহ সৃষ্টি ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসন সব ধরনের সহায়তা দিয়ে আসছে। মহেশখালীর মিষ্টি পানের ঐতিহ্য ধরে রাখতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পান চাষিদের পর্যায়ক্রমে সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।