Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বন্যার ঝুঁকিতে দেশ

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ২৯ জুন, ২০১৮, ১২:০১ এএম

ব্যাপক আকারে বন্যার পদধ্বনি দেখা দিয়েছে। দেশের প্রধান নদ-নদীতে পানি প্রবাহের উৎস উজান অববাহিকায় টানা ভারী বর্ষণ হচ্ছে। এরমধ্যে রয়েছে হিমালয় পাদদেশ, চীন, তিব্বত, নেপাল, ভারতের বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, অরুণাচল, আসাম, মেঘালয়, মনিপুর ও মিজোরাম। এসব অঞ্চলে অতিবৃষ্টি অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া বিভাগসহ আন্তর্জাতিক আবহাওয়া নেটওয়ার্কের।
অপরদিকে অভ্যন্তরীণ বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পেতে পারে। এ কারণে জুলাই ও আগস্টে ফুঁসতে পারে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ, তিস্তা, গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকায় ভাটি অঞ্চলের নদ-নদীসহ বৃহত্তর সিলেট ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি নদীগুলো। ঝুঁকি থাকলেও বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্কতা ও প্রস্তুতির অভাব প্রকট। সর্বত্র ভাঙাচোরা পাউবোর বাঁধ বন্যার চাপ ঠেকাতে পারে না। গত বছর বন্যার পর অধিকাংশ স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ মেরামত ও সংস্কার কাজ এখনো শেষ হয়নি। অনেক জায়গায় বাঁধ সংস্কারে বরাদ্দও ঠিকমতো ছাড় পায়নি। এ অবস্থায় বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের বিস্তীর্ণ এলাকার শহর-বন্দর গ্রাম-জনপদ। বিশেষজ্ঞ সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের প্রধান নদ-নদীর পানি প্রবাহের ৭৫ থেকে ৯০ ভাগই উজান অববাহিকার। উজানে অতি বৃষ্টি হলেই গঙ্গা-পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, মেঘনা অববাহিকায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে দেখা দেয় বন্যা। ভর বর্ষা মৌসুমে জুলাই মাসের বন্যাকে স্বাভাবিক ধরা হয়। তবে জুলাইয়ের বন্যা আগস্ট এমনকি সেপ্টেম্বর মাসেও প্রলম্বিত হলে ব্যাপক বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়।
বিগত ১৯৮৮, ১৯৯৮, ২০০৭ এবং সর্বশেষ ২০১৭ সালে ব্যাপক বন্যা হয়। বাংলাদেশ এবং পার্শ্ববর্তী ভারত, নেপাল, চীন, মিয়ানমারে এ বছর বর্ষার মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থেকে জোরালো অবস্থায় বিরাজ করছে। এরফলে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ, সাব-হিমালয়ান পশ্চিমবঙ্গসহ উত্তর-পূর্ব ভারতে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হচ্ছে। এখনো সেসব অঞ্চল বন্যা কবলিত না হলেও এর উজানভাগে চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে মারাত্মক বন্যা হয়েছে। এভাবে ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকলে জুলাই ও আগস্টে দেশের প্রধান নদ-নদী বিপদসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে বৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম ও ফেনীতে কয়েক দফা আকস্মিক বন্যা হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া গত বুধবার দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, মধ্য জুলাইয়ে যমুনা নদে স্বাভাবিক বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আগস্টের শেষ দিকেও বন্যা হতে পারে। ব্রহ্মপুত্রের উজানে অতিবৃষ্টির যা পূর্বাভাস ছিল এখনও সেই তুলনায় কম বর্ষণ হয়েছে। আবার নেপাল ও ভারতের বিহারে যদি টানা ভারী বৃষ্টিপাত হয় সেক্ষেত্রে গঙ্গায় পানি বৃদ্ধি পেতে পারে।
অন্যদিকে জুলাই-আগস্টে ব্যাপকাকারে বন্যার শঙ্কার পেছনে আবহাওয়া ও পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞরা দু’টি বিষয় উল্লেখ করেন। প্রথমত বর্ষার মৌসুমি বায়ু চীন তিব্বত ভারত ও বাংলাদেশে ক্রমেই জোরদার হতে পারে। আবহাওয়ার ‘এল-নিনো’ অবস্থা (বৃষ্টিপাত লাঘবকারী) হ্রাস পেয়ে পূর্ব ভারতে অতিবৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। যার প্রভাব পড়বে নদ-নদীর উজান অববাহিকায়। দ্বিতীয়ত বাংলাদেশে আবহাওয়া-জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য, মৌসুমি বায়ু প্রবাহ ও বন্যার প্রবণতা অনুযায়ী অতীতে ব্যাপক আকারে বন্যা হয়েছে জুলাই থেকে আগস্ট হয়ে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ ব্যবস্থায় নদ-নদীর পানির সমতল পরিস্থিতি ও সম্ভাব্য বন্যা সম্পর্কে পূর্বাভাস প্রদান করা যায় পাঁচ দিন আগে। এছাড়া পরীক্ষামূলক বন্যা পূর্বাভাস দেয়া হয় দশ দিন আগে। তবে অতীত অভিজ্ঞতায় জুলাই-আগস্ট মাসে স্বাভাবিক বন্যার ঝুঁকি থাকে বলে জানায় পাউবো সূত্র।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ সূত্র জানায়, বাংলাদেশের অভিন্ন নদ-নদীগুলোর উৎস বা অববাহিকা মূলত ভারতে হলেও উজানে পানি প্রবাহের পূর্বাভাস মিলছে না। বন্যার চাপ সামাল দিতে ভারত গঙ্গায় ফারাক্কা, তিস্তায় গজলডোবাসহ বিভিন্ন বাঁধ ও ব্যারেজের গেটগুলো খুলে দিয়ে ভাটিতে বাংলাদেশের দিকে কী পরিমাণে পানি ছেড়ে দিচ্ছে তাও জানায় না। ৪টি নদ-নদীর উজান অববাহিকার তাও মাত্র ৮টি পয়েন্টের আংশিক তথ্য মিলছে।
এক. ব্রহ্মপুত্র-যমুনার উজানভাগের অববাহিকায় ৪টি পয়েন্ট, উত্তর-পূর্ব ভারতের আসামের গুয়াহাটি, পান্ডু গোয়ালপাড়া ও ডুবড়ি। দুই. গঙ্গা অববাহিকায় ২টি পয়েন্ট, উজানের ফারাক্কা এবং সাইফগঞ্জ (বিহার)। তিন. সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর উজানে বরাকের শিলচর। চার. তিস্তার একটি উজান পয়েন্টের। অথচ ভারত উজানের অববাহিকায় নদ-নদীর সমতল বা প্রবাহের অবস্থা এবং বাংলাদেশ বন্যা কবলিত হচ্ছে কিনা এ সম্পর্কে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস দিচ্ছে না।
দেশে সময়মতো সঠিক বন্যা পূর্বাভাস জানতে উজানের অববাহিকার দেশসমূহ বিশেষত ভারতের পক্ষ থেকে আগাম তথ্য-উপাত্ত পাওয়া জরুরি। উজানে পানির প্রবাহের মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি তথ্য-উপাত্ত বাংলাদেশের বন্যা পূর্বাভাস, সতর্কতা এবং কৃষি-খামার তথা জনস্বার্থেই পাওয়া প্রয়োজন।
এদিকে পাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে প্রধান নদ-নদীর পানির প্রবাহ, পূর্বাভাস সম্পর্কে সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তে জানা গেছে, গঙ্গা-পদ্মা ও এর সংলগ্ন নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজ শুক্রবার গঙ্গা-পদ্মায় পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদের পানি অপরিবর্তিত থাকতে পারে। মেঘনা ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ি অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি হ্রাস পাচ্ছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নদীগুলোর পানি হ্রাস অব্যাহত থাকবে এবং সিলেট জেলায় বিরাজমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।

 



 

Show all comments
  • Fahim ২৯ জুন, ২০১৮, ১২:১৩ এএম says : 0
    বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারকে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Kowaj Ali khan ২৯ জুন, ২০১৮, ১২:৪৮ এএম says : 0
    বন্যার ঝুকিতে বাংলাদেশ হওয়ার একমাত্র কারণ ভারত। ভারত বাঁধ দিয়ে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ যদি বন্ধ না করিতো তবে বাংলাদেশে এই ভাবে বন্যা হইতো না।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohsin Bablu ২৯ জুন, ২০১৮, ১:২৮ এএম says : 0
    উজানে ভারতের ঢল হলে বাংলাদেশে ব্যাপক আকারে বন্যা সংঘটিত হতে পারে। কারণ ভারত তখন সকল বাঁধের সকল গেট খুলে দিবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Belal Uddin ২৯ জুন, ২০১৮, ২:০০ এএম says : 1
    ভারতে ঢল ও বন্যা হলেই বাংলাদেশ বন্যায় কবলিত হয়। কিন্তু ভারত বন্যার তথ্য আগে কেন জানায় না?
    Total Reply(0) Reply
  • A F M Mohsin ২৯ জুন, ২০১৮, ৩:৫৬ এএম says : 0
    Govt need to take immediate flood preparedness to protect people.
    Total Reply(0) Reply
  • Jahid Mohammed ২৯ জুন, ২০১৮, ৩:৫৭ এএম says : 0
    Need proper flood preparation. Thanks the daily Inqilab for early awerness.
    Total Reply(0) Reply
  • Nazim Uddin ২৯ জুন, ২০১৮, ৩:৫৭ এএম says : 0
    বন্যার ব্যাপারে সরকারের জরুরী ভিত্তিতে প্রস্তুতি ও সতর্কতা প্রয়োজন। এটা অবিলম্বে করা উচিৎ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা

১৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ