পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
0 অ্যাপভিত্তিক রাইডে চাহিদা বেড়েছে 0 দুর্ঘটনাপ্রবণ ঝুঁকি ও পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলার জন্য দায়ী
মোটরসাইকেল। রাজধানীসহ সারাদেশের সড়কে-মহাসড়কে বেপরোয়া দুই চাকার যানের নাম। বেপরোয়া চালকের কারনে প্রতিনিয়ত ঘটছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। ট্রাফিক বিভাগের উদাসীনতা ও নিয়ম না মানা এই প্রবণতাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ পথচারীদের। রাজধানীতে নিয়মমতো সব গাড়িই সিগন্যালে দাঁড়ায়। শুধু নিয়ম নেই যেন মোটরসাইকেলের বেলায়। একেবেঁকে চলে এমনকি ফুটপাতে উঠে পথচারীদের ঝুঁকিতে ফেলে নিয়ন্ত্রণহীন মোটরসাইকেল। কখনো উল্টো পথে, কখনো নিষিদ্ধ বাঁকে মোড় নিয়ে, আবার কখনো বিপজ্জনক গতিতে দাপিয়ে বেড়ায় নগরজুড়ে। মোটরসাইকেল আরোহীদের প্রতিদিনকার এই উৎপাতে সাধারণ পথচারীদের ক্ষোভের অন্ত নেই। দেশের সর্বোচ্চ আদালত ফুটপাতে যান চলাচল বন্ধে রুল জারি করার পরও এখনো ফুটপাত দিয়ে মোটরসাইকেল চলে ট্রাফিক বিভাগকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে। গণপরিবহনের স্বল্পতা, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা, যানজটের ভোগান্তি এড়িয়ে দ্রæত গন্তব্যে পৌঁছানোর সুবিধা থাকায় ঢাকাসহ সারা দেশের সড়ক-মহাসড়কে প্রতিদিনই বাড়ছে মোটরসাইকেলের সংখ্যা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)-এর হিসাবে চলতি বছরের প্রথম চার মাসে শুধু রাজধানীতেই ৩২ হাজার ৫৬২টি নতুন মোটরসাইকেল নিবন্ধিত হয়েছে। এ হিসাবে গড়ে প্রতিদিন ২৭১টি নতুন মোটরসাইকেল নামছে ঢাকার রাস্তায়। ইদানিং অ্যাপভিত্তিক রাইড সেবায় যুক্ত হওয়ায় মোটরসাইকেলের চাহিদা আরও বেড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যস্ত রাজধানীতে মোটরসাইকেল বৃদ্ধির এই প্রবণতা উদ্বেগজনক। দুর্ঘটনাপ্রবণ, ঝুঁকি ও পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলার জন্য অনেকটাই দায়ী মোটরসাইকেল। এজন্য এটার উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা জরুরী। ভুক্তভোগিদের মতে, মোটরসাইকেলের দৌরাত্ম কমাতে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে ট্রাফিক বিভাগকেই। ট্রাফিক বিভাগের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, মোটরসাইকেল শুধু রাস্তায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তা নয়। বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডেও মোটরসাইকেল ব্যবহার করা হয়। ট্রাফিক পুলিশ এই অপরাধমূলক কর্মকান্ড বন্ধে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ওই কর্মকর্তা জানান, মোটরসাইকেলের বেপরোয়া চলাচল বন্ধে জরিমানা বাড়িয়ে আইন সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)-এর হিসাব মতে, সারাদেশে নিবন্ধিত মোটর সাইকেলের সংখ্যা ১৮ লাখের কিছু বেশি। আর নিবন্ধিত মোটরযানের সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ। এই হিসাবে সারাদেশে মোটর সাইকেলের সংখ্যা মোট মোটরযানের প্রায় ৬০ ভাগ। বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে নিবন্ধিত মোটর সাইকেলের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার। পরের বছর ২০১৩ সালে নিবন্ধিত হয় ৮৫ হাজার ৮০৮, ২০১৪ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৯০ হাজার ৬৮৫। ২০১৫ সালে এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৭০ হাজারে। এর পরের বছর ২০১৬ সালে তা বেড়ে হয় ৩ লাখ ৩২ হাজার। বিআরটিএ-এর সর্বশেষ হিসাব বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে ঢাকায় নিবন্ধিত হয়েছে ৩২ হাজার ৫৬২টি মোটরসাইকেল। এ হিসাবে প্রতি মাসে ৮ হাজার ১৪০ আর প্রতিদিন ২৭১টি করে নতুন মোটরসাইকেল নিবন্ধন নিয়েছে। একই সময়ে সারা দেশে নিবন্ধন পেয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার ৬৯৪টি মোটরসাইকেল। এ হিসাবে দেশে প্রতিদিন ১ হাজার ৫৫টি নতুন মোটরসাইকেল রাস্তায় নামছে। বিআরটিএ’র সূত্র মতে, রাজধানীতে নিবন্ধিত মোটর সাইকেলের সংখ্যা ৬ লক্ষাধিক। এছাড়া নিবন্ধন ছাড়া রয়েছে প্রায় ৫ লাখ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঝে মাঝে অভিযান পরিচালনা করে বেশকিছু অবৈধ মোটর সাইকেল আটক করছে। তার প্রমান রাজধানীর প্রতিটি থানা চত্বরে পড়ে আছে শত শত মোটরসাইকেল। ট্রাফিক পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেল আটক অভিযান অব্যাহত আছে। অভিযান জোরদারের পর থেকে মোটর সাইকেল নিবন্ধনের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
বিআরটিএ’র হিসেবে প্রতিদিন সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় কমপক্ষে ৩০ জন। এ হিসাবে বছরে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১০ হাজার ৮০০ জন। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে নিহত হয় ১২ হাজার। আর বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে নিহতের সংখ্যা ২০ হাজার। বুয়েটের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৫০ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে। ১৫ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে বেপরোয়া মোটরসাইকেল আরোহীদের জন্য। মহাসড়কে মোটরসাইকেলের সঙ্গে বাস বা অন্যান্য যানবাহনের সংঘর্ষে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মোটরসাইকেল আরোহীরা। এবারের ঈদের আগে-পরে ঢাকাসহ সারাদেশে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে মোটরসাইকেলের সাথে। তাতে বেশ কয়েকজন মোটরসাইকেল আরোহীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার নওগাঁয় ট্রাকের চাপায় পিস্ট হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন এক ডাক্তার।
জানা গেছে, মোটরসাইকেলে সাধারণত একজন যাত্রী বহনের কথা আইনে উল্লেখ রয়েছে। কোনো কারনে দুজন আরোহী হলে শর্ত দেয়া আছে। সে ক্ষেত্রে দুইজনকেই মাথায় হেলমেট পড়তে হবে। রাজধানীতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দুইজনের হেলমেট ব্যবহার করতে দেখা যায় না। আর তিনজন ওঠা বে-আইনী হলেও এ চিত্র হরহামেশাই চোখে পড়ে। বিশেষ করে নিম্ন মধ্যবিত্তদের অনেকেই পুরো পরিবার নিয়ে মোটরসাইকেলে চলাচল করেন। দেখা যায়, মোটরসাইকেলের সামনে এক সন্তান আবার চালকের পেছনে মায়ের কোলে অন্যজন বসে ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলাচল করছে। মতিঝিলের এক ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, এক মোটরসাইকেলে পুরো পরিবার মানে তিন সন্তান বাবা ও মা চলাচল করছে এমন দৃশ্য দিনের মধ্যে কয়েকশ’বার চোখে পড়ে। তিনি বলেন, কেবলমাত্র আইন না মানার জন্যই নয়, নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণেও বিষয়টি যথেষ্ট উদ্বেগের। এভাবে দুই চাকার এ যানবাহনে পুরো পরিবার সওয়ার হয়ে চলাচল করলে যে কোনো সময় ঘটতে পারে প্রাণহানি। পুরো পরিবারকে নিয়ে এমন আনন্দযাত্রা নিমিষেই শোকযাত্রায় পরিণত হতে পারে। ২০১২ সালের ৫ মার্চ হাইকোর্ট ফুটপাতে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করে একটি আদেশ জারি করে। অথচ আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই প্রতিনিয়ত ফুটপাত দিয়ে চলছে মোটরসাইকেল। রাজধানীর মিন্টোরোডে প্রতিদিনই ফুটপাত দিয়ে মোটরসাইকেল চালানোর দৃশ্য চোখে পড়ে। মোটরসাইকেল নিয়ে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)-এর চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, মহাসড়কের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন মোটরসাইকেল। দুই চাকার এ বাহন দুর্ঘটনার কবলে পড়লে চালক বা আরোহীর অনেক সময় উভয়েরই মারাত্মক অঙ্গহানির ঘটনা ঘটতে পারে। কাজেই মোটরসাইকেল চালনোর সময় সবার আগে আরোহীকে সচেতন হতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।