বাংলাদেশ রেলওয়ের পণ্য পরিবহন ও যাত্রীসেবার মান্নোয়নে আধুনিক, নিরাপদ এবং গুণগত মানসম্মত রোলিং বহরে স্টক যুক্ত করার লক্ষে ৩ হাজার ৬০২ কোটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের রোলিং স্টক অপারেশন উন্নয়ন প্রকল্পের (রোলিং স্টক সংগ্রহ) অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় রোলিং স্টক সংগ্রহ প্রকল্পসহ মোট ১৪ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ১৪৭ কোটি ৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১৩ হাজার ২৮৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ২৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ২ হাজার ৮৩৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল প্রকল্প সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে নতুন যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রেন পরিচালনা সহজ করতে রোলিং স্টক সংগ্রহ প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় পুরাতন ও জরাজীর্ণ রোলিং স্টক প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে রোলিং স্টকের স্বল্পতা পূরণ করা হবে।
তিনি জানান, মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৩ হাজার ৬০২ কোটি ৭ লাখ টাকার মধ্যে বাংলাদেশ সরকার ব্যয় করবে ৭৬৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য হিসেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ২ হাজার ৮৩৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ঋণ প্রদান করবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রকল্পটি জুলাই, ২০১৭ হতে জুন,২০২১ মেয়াদকালে বাস্তবায়ন করবে।
মুস্তাফা কামাল আরো জানান, প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা একক কোন বিশ^বিদ্যালয়ে অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী না রেখে প্রয়োজনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশ^বিদ্যালয় তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ^বিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন।
একনেক সভায় সারাদেশের ৫৬০ উপজেলায় মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের লক্ষে ‘প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় ১টি করে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা। এর পুরোটাই সরকার তার নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করবে।
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পের আওতায় জেলা ও উপজেলা ভিত্তিক ১টি করে মোট ৫৬০টি মডেল মসজিদ কাম ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।
একনেকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্পসমূহ হলো-চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে সিজিএস কলোনিতে জরাজীর্ণ ১১টি ভবনের স্থলে ৯টি বহুতল আবাসিক ভবনে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিদের জন্য ৬৮৪টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪৮২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ভবনের বর্তমান জায়গায় ১৫ তলা ভবন নির্মাণ প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ১১৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প, এর বাস্তবায়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ও ভাষা প্রশিক্ষণ ল্যাব স্থাপন প্রকল্পের বাস্তবায়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) অফিস ভবন এবং অবকাঠামোসমূহ সংস্কার আধুনিকীকরণ ও নির্মাণ প্রকল্প, এটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ১৯৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।
এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, গাজীপুর এর অ্যাপ্রোচ সড়ক প্রশস্তকরণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যয় হবে ১৬০ কোটি ৬১ লাখ টাকা। ৪টি টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩১১ কোটি ২৮ লাখ টাকা। বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের আওতাধীন ৩টি মিল সুষমকরণ, আধুনিকায়ন, পুনর্বাসন এবং বর্ধিতকরণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। পাবর্ত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রকল্প, এতে ব্যয় হবে ৭৬ কোটি টাকা। জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্প, প্রাক্কলিত ব্যয় ৫৬৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা। জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততা উন্নীতকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪৮৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতায় ৪ লেন বিশিষ্ট ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩৫৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।