২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
মানব দেহের স্বরযন্ত্র বা ল্যারিংস শ্বাসনালীর উপরি ভাগের একটি অংশ যা গলার মাঝখানে খাদ্যনালীর সামনে থাকে। ল্যারিংস মাধ্যমে আমরা শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ে থাকি। এই ল্যারিসে দুটি ভোকাল কর্ড থাকে। এই ভোকাল কর্ডের কম্পনের মাধ্যমে আমরা কথা বলি। ল্যারিংসে বা দুটি ভোকাল কর্ডে যদি রোগ হয় তাহলে গলা ব্যথা, কণ্ঠস্বর পরিবর্তন এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। কণ্ঠনালীতে রোগসমূহ হচ্ছে জন্মগত, প্রদাহজনিত, পলিপ, টিউমার বা ক্যান্সার ইত্যাদি। ক্যান্সার শেষ পর্যায়ে গলার চারদিকে ছড়িয়ে গেলে গলা ফুলে যায় বা গলার গ্ল্যান্ড বড় হয়ে ফুলে যায়। ধূমপান কণ্ঠনালীর ক্যান্সারের অন্যতম কারণ মনে করা হয়। ধূমপান ছাড়াও মদপান, পানের সাথে জর্দা, সাদাপাতা খাওয়া, অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাদ্য গ্রহণ, অতিরিক্ত গরম খাবার খাওয়া, কণ্ঠনালীর অতি ব্যবহার ইত্যাদিও ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। গবেষণায় দেখা যায় যে শতকরা ৮০Ñ৮৫ ভাগ কণ্ঠনালীর ক্যান্সার রোগী ধূমপায়ী। সব ধরনের ক্যান্সার রোগীর মধ্যে শতকরা ত্রিশ ভাগেরও বেশি হেড নেক ক্যান্সার। হেড নেক ক্যান্সারের মাঝে কণ্ঠনালীর ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। সাধারণত দেখা যায়, বয়স্কদের কণ্ঠনালীর ক্যান্সার বেশি হয় এবং মহিলাদের চেয়ে পুরুষরাই এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় বেশি।
শ্বাসনালীর ক্যান্সারের উপসর্গসমূহ :
কণ্ঠনালীর ক্যান্সার সমগ্র বিশ্বে আজকাল দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের দেশেও এই রোগের প্রকোপ অনেক বেশি। শ্বাসনালীর ক্যান্সারের উপসর্গসমূহ- হচ্ছে কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন হয়, যা ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসায় ভাল হয় না অথবা পনের দিনের বেশি থাকে এবং পরবর্তীতে শ্বাসকষ্ট হয়। গলায় কিছু আটকিয়ে আছে মনে হয়। অনেক সময় ঢোক গিলতে অসুবিধা হয়। গলা ফুলে যাওয়া বা গলার গ্ল্যান্ড বড় হয়ে ফুলে যায়। কোন কোন সময় কণ্ঠনালীর ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর কানও ব্যথা হতে পারে। এর কারণ হলো একই নার্ভ কান ও কণ্ঠনালীর সাথে সংযুক্ত।
রোগ নির্ণয় :
রোগীর সম্পূর্ণ ইতিহাস জানতে বা শুনতে হবে। তারপর রোগীর গলা দেখতে হবে। স্বরযন্ত্র বা শ্বাসনালীর ক্যান্সারের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগ নির্ণয় করা গেলে প্রায় সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। কিন্তু রোগ যখন এডভান্স পর্যায়ে চলে যায় তখন চিকিৎসায় খুব বেশি একটা সুফল পাওয়া যায় না। যদি কারো দুই সপ্তাহের বেশি গলার স্বর পরিবর্তন বা ভাঙা থাকে বা এই স্বর পরিবর্তন ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়, তবে অবশ্যই নাক কান গলা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বর্তমানে আমাদের দেশে এই রোগ নির্ণয়ের আধুনিক ব্যবস্থা আছে, যেমন ফাইবার অপটিক ভিডিও ল্যারেংগমকপি, যার মাধ্যমে সহজেই এ রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। ফাইবার অপটিক ভিডিও ল্যারেংগমকপির মাধ্যমে রোগী নিজেও টিভির পর্দায় নিজের কণ্ঠনালী দেখতে পারবেন। যদি কণ্ঠনালীর ক্যান্সার হয়েছে ধারণা করা হয়, তখন গলা থেকে বাইপসি নিয়ে হিস্টোপ্যাথলজি করলে ক্যান্সার সনাক্ত করা সম্ভব। যদি রোগী শেষ পর্যায়ে শ্বাসকষ্ট নিয়ে আসে, তখন জরুরি ভিত্তিতে গলায় অপারেশনের মাধ্যমে শ্বাস নেয়ার জন্য একটি টিউব বসানো হয়, যাকে ট্রাকিওশটমি অপারেশন বলা হয়। পরবর্তীতে বায়পসি নেয়া হয়।
কণ্ঠনালী ক্যান্সারের চিকিৎসা :
ক্যান্সার সনাক্ত হলে অবিলম্বে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। রেডিও-থেরাপি, কেমোথেরাপী ও অপারেশনের মাধ্যমে কণ্ঠনালীর ক্যান্সারের চিকিৎসা করা যায় প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হলে রেডিও-থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা করালে রোগী সম্পূর্ণ ভাল হয়ে যায়। কিন্তু রোগী শেষ পর্যায়ে আসলে অপারেশন করতে হয়। রোগ যদি গলার গ্ল্যান্ডে ছড়িয়ে যায় তাহলে গলার সেই টিউমারেরও অপারেশন করা দরকার। স্বরযন্ত্রের বা কণ্ঠনালীর অপারেশন করলে মানুষ কথা বলতে পারে না। তখন তাকে কথা বলার জন্য আলাদা ব্যবস্থা নিতে হয়। যেমন কৃত্রিম স্বরযন্ত্রের সংযোজন অথবা খাদ্যনালীর মাধ্যমে কথা বলা যা বিশেষ ট্রেনিং-এ শিখানো হয়। এ ব্যবস্থাটি বাংলাদেশে বিদ্যমান। ফলে স্বরযন্ত্রের অপারেশন করলে কথা বলার আর অসুবিধা হবে না। আমাদের দেশে রোগীরা অপারেশন করাতে চায় না এবং প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসকের কাছে বা হাসপাতালে আসে না। যার ফলে ক্যান্সারে কষ্ট পেয়ে অকালে মারা যায়। সঠিক সময়ে রেডিও-থেরাপি বা অপারেশন করার পর অনেক বছর সুস্থভাবে বেঁচে আছেন এমন রোগীর সংখ্যা অনেক।
বাংলাদেশের সব বড় বড় হাসপাতালে কণ্ঠনালীর কন্সারের চিকিৎসা যেমনÑসার্জারি, রেডিওÑথেরাপি, কেমোথেরাপী সকল আধুনিক সুযোগ-সুবিধা আছে।
উপসংহার :
ধূমপান থেকে বিরত থাকুন। অন্যান্য যে সব কারণে কণ্ঠনালীর ক্যান্সার হয় তা থেকে এড়িয়ে চলুন। কারণ চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। উপরে বর্ণিত যে কোন উপসর্গ দেখা দিলে কালবিলম্ব না করে একজন নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো চিকিৎসা নিতে হবে।
ষ অধ্যাপক ডাঃ এম আলমগীর চৌধুরী
নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ সার্জন
বিভাগীয় প্রধান, ইএনটি বিভাগ
আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রোড ৮, ধানমন্ডি, ঢাকা, ০১৯১৯ ২২২ ১৮২, ই-মেইল: ধষধসমরৎ.পযড়ফিযঁৎু০৭@মসধরষ.পড়স
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।