Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভ্রাতৃত্বের বন্ধন শহর ছাড়িয়ে গ্রামে

| প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ফারুক হোসাইন : বিশ্ব এখন বিশ্বকাপের উন্মাদনায় বুঁদ। এর ব্যতিক্রম নয় বাংলাদেশ। মাঠে-ঘাটে, হাটে-বাজারে, শহরে-গ্রামে সর্বত্রই কেবল আলোচনা একটাই ‘ফুটবল’। বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ যেন দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল।
চায়ের কাপে, পারিবারিক অনুষ্ঠান, বন্ধুদের আড্ডা সর্বত্রই হচ্ছে খেলা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক। এক পক্ষ অন্য পক্ষকে যুক্তি, পরিসংখ্যান, দুর্বলতা দিয়ে ঘায়েল করার চেষ্টা করছে অবিরাম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও এ বিভক্তিতে ভালোই রসদ জোগাচ্ছে। স্ট্যাটাস, কার্টুন, গান, ভিডিও দিয়ে ট্রোল করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সাপোর্টাররাই এখানে অনেকটাই মুখোমুখি। প্রিয় দলকে সমর্থন দিতে গিয়ে বাবা-মা, ভাইয়ে-ভাইয়ে, বন্ধুতে-বন্ধুতে বনে গেছেন শত্রæ। চলছে পতাকা বানানোর প্রতিযোগিতাও। কে কার চেয়ে বড় পতাকা বানাতে পারে? পতাকা লাগাতে গিয়ে মৃত্যুর মতো মর্মান্তিক ঘটনাও ঘটছে। কেউ নিজের জমি বিক্রি করে বানাচ্ছেন পতাকা। কেউবা আবার বাড়ি রাঙাচ্ছেন প্রিয় দলের পতাকার রঙে। পাড়ায়-মহল্লায় ব্রাজিল-আর্জেন্টিনায় বিভক্ত হয়ে আয়োজন করা হচ্ছে ফুটবল ম্যাচ।
তবে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনায় নয়, জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন কিংবা বিশ্বকাপে সুযোগ না পাওয়া ইতালির সমর্থকও কম নয়। প্রিয় দলের খেলা ছাড়াও প্রায় সব দলের খেলা দেখার জন্যই ফুটবল প্রেমিরা বসছেন টেলিভিশনের সামনে। ব্রাজিল-আর্জেন্টিার বিপক্ষে যারা খেলছেন অনুমিতভাবেই প্রতিপক্ষের সমর্থন পাচ্ছে সেসব দল। মুসলিম দেশগুলোকে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই সমর্থন যোগাচ্ছেন। এশিয়ার দেশ হিসেবেও সমর্থন পাচ্ছে জাপান-দক্ষিণ কেরিয়ার মতো ফুটবল দল। এছাড়া সুন্দর খেলার জন্যও সমর্থন দিতে কার্পন্য করছেন ফুটবল প্রেমিরা।
শহরে এবং গ্রামে সবখানেই প্রতিটি বাড়িতে পরিবারের সকলে মিলে একত্রে বসে উপভোগ করছেন খেলা। বাবা-মা, ছেলে-মেয়ে, নারী-পূরুষ, শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে ৮০ বছরের বৃদ্ধও, এই উন্মাদনা থেকে বাদ যাচ্ছে না। শুধু পরিবারের সদস্যরাই নয়, খেলা দেখার জন্য দাওয়াত করা হচ্ছে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদেরও।
এবারের বিশ্বকাপে বড় দলগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ রাতের বেলায় হওয়ায় সকলে মিলে রাতভর খেলা দেখছেন। সাথে থাকছে খাওয়া-দাওয়াসহ নানা আয়োজন। আজকে একজনের বাড়ি তো কাল আরেকজনের বাড়িতে করা হচ্ছে এই আয়োজন। গ্রামে-গঞ্জে প্রোজেক্টরের মাধ্যমেও খেলা দেখার ব্যবস্থা করছে বিভিন্ন ক্লাব, সংগঠন। এলাকাবাসী একসাথে খেলা দেখার জন্যও থাকছে নানা আয়োজন। বন্ধুরা মিলে খেলা দেখার পাশাপাশি পিকনিকের আদলে রান্না-বান্নাও করছেন অনেকে।
রাজধানী থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলা এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামেও দেখা যাচ্ছে একই চিত্র। বিশ্ববিদ্যালয়গুয়ের হলগুলোও যেনো হয়ে ওঠেছে এককেটি দলের ব্র্যান্ড অ্যাম্বেসেডর। প্রবেশ পথ থেকে শুরু করে, গেস্ট রুম, টিভি রুম, গেইম রুম সবই সাজানো হয়েছে প্রিয় দল ও খেলোয়াড়ের পতাকা ও ছবিতে।
ঈদের সময় সময় রাজধানীতে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দুরের শহর ঠাকুরগাঁয়েও দেখা যায়, আগে যেখানে গ্রামের মানুষ সন্ধ্যার পরপরই ঘুমিয়ে যেতো ফুটবল বিশ্বকাপ যেন বদলে দিয়েছে সেই চিত্র। মাঝ রাত পর্যন্ত খেলা থাকছে শহর-গ্রামের বাজার-চায়ের দোকানগুলো। প্রতিটি বাড়িতেই দেখা হচ্ছে ফুটবল খেলা। স্কুল কিংবা কলেজের মাঠে প্রজেক্টরে হাজারো মানুষ একত্রে উপভোগ করছেন প্রিয় দলের নৈপূন্য। মাঝ রাতে খেলা শেষেও যেন ঘুমানোর তাড়া নেই।
খেলা নিয়ে চলছে খুঁটিনাটি আলোচনা, সমালোচনা। প্রিয় দলের পক্ষে যুক্তি এবং প্রতিপক্ষ তুলে ধরছেন দুর্বলতা। নিজের পছন্দের দল গোল দিলে উল্লাসে ফেটে পড়ছেন সমর্থকরা আবার গোল খেলে মূষড়ে পড়েছন তারা। সেই বেদনার সময় কাটা ঘায়ে নূনের ছিটার মতো বিধছে প্রতিপক্ষের উল্লাস। ফুটবল নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়লেও এই খেলার মাধ্যমেই পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় হয়ে ওঠছে।
প্রযুক্তির ছোঁয়া ও সামাজিক অস্থিরতার মধ্যে সামাজিক বন্ধন যেখানে দুর্বল হয়ে পড়েছে সেখানে বিশ্বকাপের সময় পরিবারের সকলে মিলে একত্রে সময় বসে সময় কাটাচ্ছেন। ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুরা একত্রে খেলা দেখার মাধ্যমে জমছে আড্ডা, পারিবারিক বিনোদন। যার মাধ্যমে সুদৃঢ় হচ্ছে ভাতৃত্ব বন্ধন। কাধে কাধ মিলিয়ে উদযাপন করছেন প্রিয় দলের সাফল্য, ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন দলের ব্যর্থতার কষ্টও।
বিশ্বকাপ শুধু শহর-গ্রামের সাধারণ মানুষই উপভোগ করছেন না। এই খেলা একই ছায়াতলে নিয়ে এসেছে সমাজের মাদকসেবী, অপরাধী, ছিনতাইকারী থেকে শুরু করে সকলকে। ফলে বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার পর থেকে কমে গেছে ছিনতাইয়ের ঘটনা, শহরে-গ্রামে-গঞ্জে মাদকসেবীদের আড্ডায়ও নেই তেমন জমায়েত। স্কুল-কলেজের পথে নেই বখাদের চিরচেনা আনাগোনা। দেখা যাচ্ছে না নারীদের উত্তক্ত করার দৃশ্যও। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও অন্যান্য যে কোন সময়ের তুলনায় খুব ভাল বলেই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পুলিশ-গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যদের সাথে ব্যক্তিগত আলোচনাকালে তারা জানান, সারাদেশেই এখন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভাল। বিশ্বকাপ ফুটবল শুরু হওয়ার পর থেকে কমে গেছে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সংখ্যা। এজন্য তারাও অনেকটা স্বস্তিতে সময় কাটাচ্ছেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিশ্বকাপ

২৩ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ