Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আলোচনায় ভারত মিশন

ভোটের রাজনীতি

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ১৯ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

0 বিএনপিকে ‘ভারতবিরোধী দল’ হিসেবে অপপ্রচার চালানো হয় 0 জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্কই টেকসই ও বিশ্বাসযোগ্য 0 বন্ধু দেশগুলোর সাথে আলোচনা একটি চলমান প্রক্রিয়া


বিএনপি নেতাদের ভারত সফর নিয়ে রাজনীতির মাঠে চলছে নানামুখী হিসাব-নিকাশ আর গুঞ্জন। ভারত মিশনে বিএনপির কূটনৈতিক-রাজনৈতিক দর্শন ও নতুন চিন্তা-ভাবনার নানা দিক নিয়ে রাজনীতি সচেতন নাগরিকদের মাঝে চলছে আলাপ-আলোচনা।
আর টকশোতে বিষয়টি সরব হয়ে উঠেছে। কারাবন্দী দলের চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এই তিন প্রেক্ষাপটে বিএনপি নেতাদের ভারত সফর গভীর তাৎপর্য বহন করছে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। রাজনীতি ও বিদেশনীতিতে প্রভাব রাখে ভারতের এমন কয়েকটি বেসরকারি থিংক ট্যাংক সংস্থার আমন্ত্রণে গত ৩ জুন বিএনপির সিনিয়র তিন নেতা ভারত সফরে যান। তারা ৬ দিন দিল্লিতে ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী। দুই দেশের জনগণের সঙ্গে প্রকৃত সম্পর্ক এবং দেশের সঙ্গে দেশের। সম্পর্কের ভিত্তি তো কোন দল বা গোষ্ঠীর সঙ্গে নয়। সে ধরনের সম্পর্কে টেকসই বন্ধুত্ব হয় না। বিশ্বাসযোগ্যতার জন্যও এটা গুরুত্বপূর্ণ।
ভারত সফরে যাওয়া তিন নেতার অন্যতম খসরু বলেন, এসব বিষয়ে উভয় দেশের জনগণের মধ্যে যে দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে আমরা খোলামনে আলোচনা করেছি। দেশ ও জনগণের পক্ষে অবস্থানের কারণেই বিএনপিকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ‘ভারতবিরোধী দল’ হিসেবে অপপ্রচার চালানো হয়। আবার ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার জন্য ভারতের সমর্থন আছে’ এ ধরনের প্রপাগান্ডা ও দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করা হয়। যা দুই দেশের সুসম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়।
তিনি বলেন, ভারত একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ। বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে ভারতের জোরালো সমর্থন জনগণের কাছে প্রত্যাশিত। শুধু ভারতই নয়Ñ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, যুক্তরাজ্যের মতো বন্ধু দেশগুলোর সাথেও আলোচনা একটি চলমান প্রক্রিয়া। আলোচনায় আমরা ওই বার্তা তুলে ধরছি।
এদিকে বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, সা¤প্রতিক ভারত সফরসহ বিএনপির পক্ষ থেকে কূটনৈতিক পর্যায়ে যেসব বক্তব্য ও বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হয় এতে উঠে এসেছে, জাতিসংঘের চার্টার ও জনগণের মৌলিক অধিকারসমূহ বাংলাদেশে অনুপস্থিত। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটাধিকার হারিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ সরকার বিশ্বে স্বৈরশাসক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এ সরকার মানবাধিকার, আইনের শাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সমগ্র বিশ্বের মানবাধিকার সংস্থাসমূহ, জাতিসংঘের জেনেভা রিপোর্ট, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ব্রিটিশ পার্লামেন্ট রিপোর্টে তথ্য-প্রমাণাদি সহকারে তাই আজ বলা হচ্ছে। সরকার জনগণের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রকৃতপক্ষে কী হচ্ছে তা জানতে আগ্রহী ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ বিভিন্ন দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংগঠন-সংস্থাসমূহ। বিএনপি নেতৃবৃন্দ আলোচনাকালে বলেছেন, স্বৈরাচারী কায়দায় শাসন পরিচালনার ফলে দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা সরকার কেড়ে নিয়েছে। জনগণ চায় গণতান্ত্রিক শাসন, ভোটাধিকার ফিরে পেতে।
ভারত সফরকালে বিএনপি নেতৃবৃন্দ দুই দেশের মধ্যকার অমীমাংসিত সমস্যাগুলো আলোচনার টেবিলে এনে সমাধানের পথ সুগম হবে বলে তাদের মত ব্যক্ত করেন। এরফলে উভয় দেশ ও জনগণের সম্পর্কের আশানুরূপ উন্নতি হবে। অতীতের ভুল, তথ্য-বিভ্রাট ও প্রপাগান্ডা থেকে বাস্তবতার নিরিখে বেরিয়ে আসা উভয় দেশের মানুষের কল্যাণেই প্রয়োজন বলে মনে করছে দলটি।
আমীর খসরু জানান, দিল্লিতে তার মিশনে সফরসঙ্গী ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির। এটি সেই অর্থে প্রতিনিধিদল নয়। ভারতে নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী কয়েকটি থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণে তারা দিল্লি সফর করেন। এরমধ্যে রয়েছে- বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউট, বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন, ভারত সরকারের থিংক ট্যাংক আইডিএস, ওআরএফ, কংগ্রেসের রাজীব গান্ধী কনটেম্পোরারি ইনস্টিটিউট। থিংক ট্যাংকের শীর্ষ নীতি-নির্ধারক, গবেষক ও বিশ্লেষকদের সাথে আন্তরিক পরিবেশে তাদের আলাপ-আলোচনা, প্রশ্নোত্তর, ভাবের আদান-প্রদান হয়। তারা সেখানে কোনো বক্তব্য উপস্থাপন করেননি, সবকিছুই আলোচনায় উঠে এসেছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত উভয় দেশের জনগণের মধ্যে দূরত্ব তৈরি, অবিশ্বাস, সম্পর্ক বিনষ্টের কারণ ও প্রতিবন্ধক হিসেবে যেসব বিভিন্ন প্রচার-প্রপাগান্ডা এবং তথ্যের বিভ্রাট চলে আসছে, আলোচনায় তাও আমরা চিহ্নিত করেছি। ভারতের থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকরাও বাংলাদেশের সার্বিক অবস্থা, বিশেষ করে আগামী জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে নির্বাচনী পরিবেশ কতটা কী রয়েছে সেসব বিষয় গবেষণা ও আলোচনার ক্ষেত্র হিসেবে নিয়েছেন। তারা চান এ সম্পর্কে সঠিক ও পরিস্কার ধারণা লাভ করতে। এই থিংক ট্যাংকের তথ্য-উপাত্তগুলোই ভারতের নীতি-নির্ধারক পর্যায়ে পৌঁছে যায়। ভারতের সঙ্গে বিএনপির নতুন মাত্রায় এই আলোচনার ধারা অব্যাহত রাখা উভয় দেশের জনগণের স্বার্থেই প্রয়োজন।
কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গে ভারতে থিংক ট্যাংক পর্যায়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আলোচনা হয়েছে। আমরা বলেছি, খালেদা জিয়া কেন আজ কারাগারে? নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকে রেখে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে এ সরকার চায় আবার ক্ষমতা দখল করতে। তিনি গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ধারাবাহিক আন্দোলন করে আসছেন। এ কারণেই সরকার তাকে বন্দী করে রেখেছে। নির্বাচনে জনগণকে বাইরে রেখে একদলীয় সরকার ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়।



 

Show all comments
  • বজলুল হক ১৯ জুন, ২০১৮, ১:৪৬ এএম says : 0
    বিএনপি নেতাদের ভারত সফরে অনেক ভুল তথ্য ও তথ্য ঘাটতি, দূরত্ব নিরসন হবে। আগামী নির্বাচনে যাতে জনগণ অবাধে ভোটদানে অংশগ্রহণ করতে পারে সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
    Total Reply(1) Reply
    • MIRZA KIBRIA ১৯ জুন, ২০১৮, ২:০০ পিএম says : 4
      তর্কের খাতিরে বিএনপির কথা সত্য ধরে নিলে প্রশ্ন আসে, আওয়ামী লীগ যদি ভারতের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে ক্ষমতায় যায় এবং টিকে থাকে, সেটা যদি খারাপ এবং অগ্রহণযোগ্য হয় তাহলে বিএনপি যদি একই পথ অনুসরণ করে তা কেন সমর্থনযোগ্য এবং নন্দিত কাজ হবে? -
  • সাদমান আরিফ হোসেন ১৯ জুন, ২০১৮, ১:৫১ এএম says : 0
    আগামী নির্বাচনের আগে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত থাকতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • ময়নাল হোসেন ১৯ জুন, ২০১৮, ১০:১৫ এএম says : 0
    আগামী জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ সম্পর্কে একটা বিশ্বাসযোগ্যতা এবং আস্থার অভাব রয়েছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএনপি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ