Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোহিঙ্গাদের নাম-নিশানা মুছে ফেলার কাজ শুরু করেছে মিয়ানমার

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৯ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

গত বছর আগস্টে কথিত রোহিঙ্গা জঙ্গি দলের হামলার জের ধরে মিয়ানমার সেনাবাহিনী দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে যে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ শুরু করে তার পর থেকে সাত লাখের বেশি সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমান পালিয়ে প্রতিবেশি বাংলাদেশে গিয়ে আশ্রয় নেয়। রোহিঙ্গাদের সেই ট্রাজেডি সেখানেই থেমে থাকেনি। বর্ষা মওসুম আগমনের সঙ্গে সঙ্গে বন্যা ও ভূমিধসের আশঙ্কা আরেক মানবিক বিপর্যয়ের হুমকি তৈরি করেছে। মিয়ানমার নামে পরিচিত সাবেক বার্মা সরকার এখন ‘রোহিঙ্গা’ নামটিই মুছে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে।
বহু শতক ধরে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নামের এই জনগোষ্ঠীর বাস হলেও দেশটির সংখ্যাগুরু বৌদ্ধরা এদেরকে বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী বলে মনে করে। ফলে অসংখ্য সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠী অধ্যুষিত দেশটিতে রোহিঙ্গারা রাষ্ট্রহীন ও নির্যাতিত স¤প্রদায়ে পরিণত হয়েছে। সাপ্রতিক বছরগুলোতে দেশটিতে গণতন্ত্রের ক্ষীণ ছোঁয়া লেগেছে। কিন্তু তাতে রোহিঙ্গাদের প্রতি বিরূপ আচরণের কিছুটা কমতি হচ্ছে না।
সপ্রতি মিয়ারমারের তথ্য মন্ত্রণালয় রেডিও ফ্রি এশিয়া এবং বিবিসি’র খবরে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি চিহ্নিত করে। বদ্ধ সমাজের খবর প্রচার করে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের তহবিলপুষ্ট রেডিও ফ্রি এশিয়া। ওই দুই সংবাদ মাধ্যমের অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করা হয়, যা মিয়ানমারের এমআরটিভি চ্যানেলের ‘ডেমক্রেটিক ভয়েস অব বার্মা’ প্রচার করে। দেশটির তথ্যমন্ত্রণালয় নির্দেশ দেয় রোহিঙ্গা শব্দটি রয়েছে আরএফএ ও বিবিসি’র এমন কোন অনুষ্ঠান প্রচার করা যাবে না। তবে, প্রতিষ্ঠান দুটি মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মানতে অস্বীকৃতি জানায়। মিয়ানমারে আরএফএ ও বিবিসি’র স¤প্রচার বন্ধ করে দেয়া হলেও শর্টওয়েভ, সামাজিক গণমাধ্যম ও ওয়েবসাইটে তা পাওয়া যাচ্ছে।
১৯৬২ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত মিয়ানমারে সামরিক স্বৈরশাসন থাকাকালে নিরঙ্কুশ সেন্সরশিপ বজায় ছিলো। ২০১৫ সালে গণতন্ত্রপন্থী নেতা অং সাং সু চির নেতৃত্বাধিন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমক্রেসি বিজয়ী হওয়ার পর কিছুটা আশা জেগেছিলো। কিন্তু গত কয়েক বছরে দেখা গেছে এনএলডি বা সামরিক বাহিনী কেউই গণতন্ত্রের পথে খুব একটা অগ্রসর হতে পারেনি। সাংবাদিক দলনের জন্য পুরনো আইনগুলো এখনা বহাল। মিয়ানমার সেনাবাহিনী ১০ রোহিঙ্গাকে হত্যা পর এই ঘটনা তদন্তের কারণে অন্যায়ভাবে দুই রয়টার্স সাংবাদিককে গ্রেফতার যার সর্বশেষ উদাহরণ।
অং সাং সু চি কেন এমনটি ঘটতে দিচ্ছেন সেই প্রশ্ন অনেকের। যদিও আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে তিনি প্রায়ই বলেন যে এখনো পার্লামেন্ট, গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণায়সহ প্রশাসনের উপর সেনাবহিনীর নিয়ন্ত্রণ প্রবল। কিন্তু এটাও ঠিক যে তিনি ‘রোহিঙ্গা’ বা ‘বাঙ্গালি’ শব্দগুলো ব্যবহার না করতে জনগণের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন। তবে তার সরকার কেন ‘সেন্সর’কে সমর্থন করছে তাকে সেই প্রশ্ন করতেই হবে। তার নিশ্চই মনে আছে, তিনি যখন গৃহবন্দী ছিলেন তখন সত্য জানার জন্য তাকে আরএফএ বা বিবিসি টিউন করতে হতো। তার চোখের সামনেই এসব সংবাদ মাধ্যম নিগৃহ হচ্ছে এটা দেখতে পাওয়া খুবই পীড়াদায়ক। সূত্র : এসএএম।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ