পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শফিউল আলম : বন্যা বিস্তারের শঙ্কা রয়েছে ঈদের পরই। চলতি জুন মাস থেকে জুলাই এমনকি আগস্ট পর্যন্ত রয়েছে বন্যার ঝুঁকি। এবার বন্যা হতে পারে দেশের অঞ্চলভেদে আকস্মিক, স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি এবং ব্যাপক। উত্তর-পূর্বে আপার মেঘনা অববাহিকায় বৃহত্তর সিলেট এবং দক্ষিণ-পূর্ব পাহাড়ি অববাহিকায় চট্টগ্রাম অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া-জলবায়ু ও পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞরা আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা করছেন।
চীন, হিমালয় পাদদেশ, ভারত, নেপালে ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হচ্ছে। বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে জুলাই পর্যন্ত। বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলে বর্ষার নিয়ামক দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু সক্রিয়। অতিবৃষ্টিতে নামবে উজানের ঢল। এরফলে উত্তর জনপদে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, তিস্তার পানি বিপদসীমায় পৌঁছে যেতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকায় বাড়ছে পানি। এই বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বিশেষত উজানে ভারতে ফারাক্কা বাঁধের গেটগুলো খুলে দেয়া হলে ভাটিতে গঙ্গা-পদ্মা বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সুরমা-কুশিয়ারা নদী বিপদসীমার ঊর্ধ্বে রয়েছে। দক্ষিণ-পূর্বে চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাহাড়ি খরস্রোতা নদীগুলো আবারও ফুঁসে উঠতে পারে। বাংলাদেশ সংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগরে একাধিক নিম্নচাপের প্রভাবে দেশের অভ্যন্তরে অতিভারী মৌসুমী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এসব প্রেক্ষাপটে তৈরি হচ্ছে ব্যাপক বন্যা পরিস্থিতি। টানা ভারী বর্ষণে চট্টগ্রাম অঞ্চলে ঘটতে পারে পাহাড়ধসের বিপর্যয়। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) আবহাওয়া-জলবায়ু ও পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মোঃ রিয়াজ আখতার মল্লিক গতকাল (বৃহস্পতিবার) দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, এবার মৌসুমী বায়ু ও বর্ষা আসার আগেই বর্ষণের মাত্রা অনেক বেশী। যা বৃষ্টিপাতের অস্বাভাবিক আচরণ। উত্তর-পূর্ব ভারত, বাংলাদেশে অতিবৃষ্টির ফলে আকস্মিক বন্যা হতে পারে। তবে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি বন্যার শঙ্কার বিষয়েও পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, উজানে ভারতে অতিবৃষ্টির কারণে আগামী ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকায় পানির সমতল বৃদ্ধি পেয়ে চলতি মাসের শেষের দিকে বিপদসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে। উত্তর জনপদে ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে তিস্তা নদীর পানি। উজানে ভারতের আসাম-মেঘালয়ের (বরাক অঞ্চল) ঢলে সুরমা-কুশিয়ারাসহ সিলেটের নদীগুলো বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। দেশের দক্ষিণ-পূর্ব পাহাড়ি অববাহিকায় অতিবৃষ্টিতে নদ-নদী ইতোমধ্যে বিপদসীমা অতিক্রম করে। মুহুরী, হালদা নদীর পাড়ে আকস্মিক ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, সুরমা-কুশিয়ারা এবং চট্টগ্রামের পাহাড়ি অববাহিকায় জুলাই পর্যন্ত বন্যার আশঙ্কা থেকেই যায়।
এদিকে বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া বিভাগ, আন্তর্জাতিক আবহাওয়া-জলবায়ুর বিশ্লেষণ থেকে জানা গেছে, তিব্বতসহ চীন, হিমালয় ও সাব-হিমালয়ান অঞ্চল, নেপালে এবং ভারতের বিশেষত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যে (দি সেভেন সিস্টার) এবং সেই সাথে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিমে গত এক সপ্তাহে ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হয়েছে। বর্ষণের পানি গড়াবে ভাটিতে বাংলাদেশের দিকেই। ফলে বাংলাদেশের উত্তরের জেলাসমূহে পাশাপাশি বৃহত্তর সিলেটের সুরমা-কুশিয়ারা, মনু-খোয়াই, বাল্লা, নেত্রকোণার কংস নদীপাড়ে আরও ব্যাপক বন্যার শঙ্কা রয়েছে।
আবহাওয়া বিভাগের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়, মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে অতিবৃষ্টিতে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। আগামী জুলাই মাসের প্রথমার্ধে সুরমা-কুশিয়ারা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় এবং দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।
গতকাল পাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তে জানা গেছে, সিলেটের প্রধান নদী সুরমায় গত ২৪ ঘণ্টায় একশ’ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে কানাইঘাটে ২০৬ সেন্টিমিটার ও সিলেটে ২৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সুনামগঞ্জ পয়েন্টেও বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। কুশিয়ারা নদীর পানি অমলশীদে ১৬১ সেমি, শেওলায় ৯৭ সেমি ও শেরপুর সিলেটে ১৩ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সারিগোয়াইন নদী সারিঘাটে বিপদসীমার ১৫ সেমি, মনু নদী মনু রেলব্রিজ পয়েন্টে বিপদসীমার ১২৫ সেমি উপরে, মৌলভীবাজার পয়েন্টে ৭৬ সেমি উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। খোয়াই নদী বাল্লা পয়েন্টে বিপদসীমার ৯২ সেমি ও হবিগঞ্জে ২৩৫ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব নদীর পানিবৃদ্ধি আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের মোট ৯৪টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গতকাল পানি বৃদ্ধি পায় ৫৫টিতে, হ্রাস ৩৩টিতে, বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হয় ১০টিতে। বাংলাদেশ এবং ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী কয়েক দিনেও বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ এবং সাব-হিমালয়ান পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ আসাম, মেঘালয়, অরুণাচল, মিজোরাম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, মনিপুরে মাঝারি থেকে ভারী ও অতিভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।