Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চাঙ্গা গ্রামীণ অর্থনীতি

মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপে রাজশাহীর আম

| প্রকাশের সময় : ১২ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

রেজাউল করিম রাজু : রাজশাহী বিভাগের বিস্তীর্ণ এলাকা এখন আমে ছয়লাব। জেলা-উপজেলার-ইউনিয়ন পর্যায়ের হাটে বাজারে গুটি আমের পাশপাশি আসতে শুরু করেছে গোপালভোগ, মোহনভোগ, ক্ষুদি খিরসা, ক্ষিরসাপাতি, ল্যাংড়াসহ নানা জাতের আম। এই আম রাজধানী ঢাকাসহ দেশের গÐি পেরিয়ে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপের দেশগুলোতে যাবে। এবার ফলন ভাল। আমচাষী, ব্যাপারী ও সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা আমে দশ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হবে। এতে করে বেশ চাঙ্গা হবে গ্রামীণ অর্থনীতি।
মধুমাসের শেষ ভাগে মূলত জমে উঠেছে রাজশাহী অঞ্চলের ‘মধু আম অর্থনীতি’। গ্রাম বাংলার হাটে বাজারে মহল্লায় আম লিচুর ছড়াছড়ি থাকলেও ক্ষনিকের অতিথি লিচু প্রায় বিদায়ের পথে। এখন দাপট দেখাচ্ছে নানা জাতের আম। দেশের প্রায় সব জেলাতেই আমের আবাদ হচ্ছে। বিশেষ করে বাইশ জেলায় আম চাষ হচ্ছে বানিজ্যিক ভাবে। কৃষি বিভাগের হিসাবে এবার দেশে প্রায় পৌনে দু’লাখ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হচ্ছে। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও বাইশ লাখ মেট্রিকটন। মূল্যমান হিসাবে যা হবে দশ হাজার কোটি টাকা। আমের রাজধানী খ্যাত বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলের চাপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগা, নাটোরে এখন নানান জাতের আমের ছড়াছড়ি। ক’বছর নতুন বাগানের বিস্তৃতিতে যোগ হয়েছে কয়েক লাখ আম গাছ। পরিকল্পিত ভাবে যেমন বাগান গড়ে উঠেছে। তেমনি ভাল জাতের আম গাছ তৈরী হচ্ছে।
কৃষক ও ব্যাপারীরা জানান, আমের রাজ্যে যোগ হয়েছে ফ্রুট ব্যাগিং। একেবারে বিষমুক্ত আমের গ্যারান্টি আর অন্যদের চেয়ে আলাদা চেহারা নিয়ে হাজির হয়েছে ব্যাগিং আম। এবার রাজশাহী অঞ্চলে ফ্রুট ব্যাগিং করা হয়েছে আট কোটি আমে। এসব আমে দুলছে আম চাষীদের স্বপ্ন। এসব আম স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে যাবে মধ্যপ্রাচ্যে আর ইউরোপে। রাজশাহী অঞ্চলে এখন চারিদিক আমের ছড়াছড়ি। আমের আড়ততো বটেই স্বব্জি বাজারেও ঠাই নিয়েছে। আম নিবেন গো আম বলে মহল্লায় মহল্লায় ভ্যানে করে ফেরী করে বিক্রি হচ্ছে আম। এই আমকে ঘিরে বানিজ্য হবে হাজার হাজার কোটি টাকার। এবার স্বপ্নটাও একটু বেশী। আম অর্থনীতি চাঙ্গা থাকবে মাস চারেকের জন্য। বোরো ধান ঘরে তোলার পর এখন ব্যাস্ত সময় পার করছে মানুষ। আম নিয়ে শুরু হয়েগেছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। প্রত্যক্ষ আর পরোক্ষ ভাবে পাঁচ সাত লাখ মানুষ কয়েক মাসের জন্য ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে। ব্যাপারী কুলি, শ্রমিক, মজুর, ভ্যান চালক, ট্রাক চালক, কুরিয়ার পার্শেল ব্যবসায়ী, খাবার দোকান কর্মচারী, ঝুড়ি তৈরী কারক, আমপাড়া, প্যাকিং আর পরিবহন নিয়ে এদের চলছে ভীষন ব্যাস্ততা। আমের মোকামগুলোয় আম আসতে শুরু করেছে। রাজশাহীর বানেশ্বর বাজার আর চাপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে রাস্তার উপর প্রতিদিন বসছে আমের বাজার। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা ভীড় জমাচ্ছেন। হাটে বাজারে গুটি আমের পাশপাশি আসতে শুরু করেছে গোপালভোগ, মোহনভোগ, ক্ষুদি খিরসা, ক্ষিরসাপাতি, রানীপছন্দ চলে এসেছে মনমাতানো ল্যাংড়া। এবার বাজারে আম আসছে বিলম্বে। কারন আবহাওয়া জনিত কারনে নির্ধারিত সময়ের দশদিন পর একসাথে সব গাছে মুকুল আসে। পরবর্তীতে আবহাওয়া অনুকুল থাকায় এবার ঝড় শিলাবৃষ্টির পর প্রচুর আম হয়েছে গাছে গাছে। একেবারে যাকে বলে বাম্পার ফলন। বিষমুক্ত পরিপুষ্ট আম বাজারজাত করনের জন্য প্রশাসন আম আসার সময় বেঁধে দিয়েছিল ২০মে থেকে। পর্যায়ক্রমে আম পাড়ার সূচি। কিন্তু সে সময় অনুযায়ী আম বাজারে আসেনি। কারন উৎপাদন প্রক্রিয়ায় বিলম্ব আর ব্যাপক বৃষ্টিপাতে আম পাকতে সময় লেগে যায়। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে বাজারে আম আসতে শুরু করেছে। এরমধ্যে হঠাৎ করে কদিন ধরে এ অঞ্চলের আবহাওয়া উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। যাকে বলে আম পাকা গরম। প্রভাব ফেলেছে আমের উপর। আম পাকতে শুরু করেছে। গাছে আম ধরে রাখতে পারছেনা। ফলে বাজারে সরবরাহ বেড়েছে। ঈদের কারনে পাইকারী ক্রেতারা হিসেব নিকেশ করে আম কিনছেন। তাছাড়া এ সময় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে স্বজন বন্ধু বান্ধবদের কাছে টন টন আম যায়। তারাই এখন ঈদ করতে নিজ নিজ ঘরে ফিরছে। ফলে আম পাঠানোর পরিমান কমেছে। অন্যদিকে বাজারে দামও কমেছে। আমচাষীরা কমদামে আম বিক্রি করছে। কারন অতিরিক্ত গরমে আম পেকে যাওয়া। আর সামনের ঈদের খরচ। এই আম বেচেতো ঈদের খুশী ভাগাভাগি করবে। রাজশাহীর বানেশ্বর বাজারে গতকাল গিয়ে দেখা যায় সরাসরি ভ্যানে আমে ঝুড়ি সাজিয়ে বসে পাইকারী ক্রেতার অপেক্ষা করছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশী থাকায় সুযোগ বুঝে ব্যাপারীরা দরদাম করছেন। আবার এখানে ৪৬ কেজিতে ধরা হচ্ছে এক মন। আবার কেউ ওজন না করে ঝুড়ি ধরে আম কিনছেন। এতে কেউ জিতছেন আবার কেউ হারছেন। বানেশ্বর বাজারে ব্যবসায়ী আর আম চাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পাইকারী আর খুচরো বাজারে দামে মন প্রতি তিন থেকে চারশো টাকার ফারাক। গোপালভোগ বিক্রি হচ্ছে মনপ্রতি গড়ে দেড় হাজার টাকা ক্ষিরসাপাত ষোলশত টাকা, লক্ষনা আটশো থেকে হাজার, গুটি আম ছয় থেকে আটশো টাকা দরে। আমের হাটে দাম কম হলেও শরের বাজারে বেশ চড়া দামেই তা বিক্রি হচ্ছে। শুরুতে হাট বাজারে কিছুটা চড়া থাকলেও এখন বেশ কমে গেছে। এখন প্রতিদিন গড়ে এক হাজার মন আম বিক্রি হয়ে লেনদেন হচ্ছে কোটি টাকার। ট্রাক বোঝাই হয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। নবাবগঞ্জের কানসাট বাজারেও একই অবস্থা। আম চাষীরা জানান, আমের দাম কমে যাওয়ায় তারা খানিকটা হতাশ। কারণ সব কিছুর দাম বেড়েছে। আম পাড়া শ্রমিকের মজুরী, পরিবহন খরচ সব কিছুতেই বাড়তি। তাই দামে খুব একটা পড়তা হচ্ছেনা। তবে তারা হতাশ নন। এখন রমজান বলে মানুষ একটু কম খাচ্ছে। ঈদের পর পুরো দমে জমে উঠবে আম বাজার। আসবে ফজলী, আশ্বিনা, আ¤্রপালিসহ আরো নানা জাতের আম। কিন্তু গরম তাদের দুশ্চিন্তায় ফেলছে। আমের জুস কোম্পানী গুলো কম দামে আম কিনতে তৎপর হয়ে উঠেছে। জাত ভেদ নেই আম হলেই হলো। কমদামে চায়। কদিন হলো ঘরে উঠেছে বোরো ধান এখন আম। এতে করে গ্রামীন অর্থনীতি বেশ চাঙ্গা।



 

Show all comments
  • বুলবুল আহমেদ ১২ জুন, ২০১৮, ২:৫৩ এএম says : 0
    খুব ভালো খবর
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আম

২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ