পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শফিউল আলম : মৌসুমী নিম্নচাপ হঠাৎ পাল্টে দিয়েছে আবহাওয়া। এর সক্রিয় প্রভাবে প্রবল বর্ষণ, দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়া এবং সামুদ্রিক জোয়ারে বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করছে। গতকাল (সোমবার) মহানগরী ও জেলার বিভিন্ন এলাকা হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে তলিয়ে যায়। এতে করে কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েন। হাজার হাজার বসতঘর কাদা-পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে। রোজাদারদের পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। জ্যৈষ্ঠ মাস শেষ না হতে অর্থাৎ বর্ষার আগেই ডুবলো চট্টগ্রাম। সেই সঙ্গে চট্টগ্রামবাসীর ফের শুরু হলো ‘দুঃখের বারমাইস্যা’। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত লালখানবাজার-মুরাদপুর আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভারের ওপর দিয়েও ঢলের মতো পানি বয়ে যায়। এ নিয়ে জনে জনে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তীব্র সমালোচনা হয় স্বঘোষিত কর্মবীর সিডিএ ছালামের জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী যথেচ্ছ কর্মকাÐে। সওদাগরী পাড়া চাক্তাই খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জ, পাহাড়তলী, আগ্রবাদ, চকবাজার, বাকলিয়ায় শত শত গুদাম-আড়ত দোকান-পাটে মজুদ কোটি কোটি টাকা মূল্যের মালামাল পানিতে ডুবে ও ভিজে বিনষ্ট হয়ে গেছে। অব্যাহত ভারী বর্ষণের কারণে বন্দর নগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে পাহাড়ধসের সতর্কতা বহাল রেখেছে আবহাওয়া বিভাগ। পাহাড়-টিলার ধারে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় লাখ লাখ নি¤œআয়ের মানুষ বসবাস করছে। তাদেরেকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে প্রশাসন মাইকিং করছে। তবে অধিকাংশই ছাড়ছে না পাহাড়ধারের ঘরবসতি। এ অবস্থায় চট্টগ্রামে বিরাজ করছে পাহাড়ধস আতঙ্ক।
এদিকে মৌসুমি নি¤œচাপটি রোববার মধ্যরাত থেকে স›দ্বীপ-সীতাকুÐ অতিক্রম করে স্থল নি¤œচাপে পরিণত হয়ে উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও দুর্বল লঘুচাপ আকারে কুমিল্লা ও ভারতের ত্রিপুরা হয়ে আরও উত্তর-পূর্ব দিকে কেটে যাচ্ছে। মৌসুমি নি¤œচাপ অতিক্রমের সময়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলে ঝড়ো হাওয়ার সাথে অতি ভারী বর্ষণে প্লাবিত হয় বিস্তীর্ণ অঞ্চল। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানায়, গতকাল বিকেল ৩টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ২২৯ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত নি¤œচাপের কারণে দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। সকাল ৫টা ৫৮ মিনিটে ঝড়ো বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৭২ কিলোমিটার। স্থল নি¤œচাপের পরবর্তী প্রভাব এবং দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু সক্রিয় হওয়ার কারণে বরিশাল, ঢাকা, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার সাথে ভারী থেকে অধিক ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে। সেই সাথে চট্টগ্রাম অঞ্চলে পাহাড় ধসের সতর্কতার কথা জানায় আবহাওয়া বিভাগ। গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় রাঙ্গামাটিতে ২৫৭ মিলিমিটার। এ সময় চট্টগ্রামে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ২৪৪ মিমি।
বৃহত্তর জেলার অনেক জায়গায় পাহাড়-টিলার ঢলের তোড়ে প্লাবিত হয় গ্রাম-জনপদ, ফল-ফসল, ক্ষেত-খামার। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। সবচেয়ে দুর্ভোগে পড়েন খেটে খাওয়া দিনমজুর মানুষজন, ফুটপাতে ঈদের বিকিকিনিতে যৎসামান্য আয়-রোজগারে যারা সংসার চালায়, বৈরী আবহাওয়ার কারণে তাদের রোজগার প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রামের ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর ঈদের প্রাক্কালে ভাটা পড়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে আমদানি জাহাজের মালামাল লাইটারিং খালাস ডেলিভারি পরিবহন বন্ধ রয়েছে। বন্দরের ভেতরে-বাইরেও পণ্যসামগ্রী ওঠানামা ব্যাহত হচ্ছে। সাগর উপকূলে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। সমুদ্র বন্দরসমূহকে দেখানো হচ্ছে ৩নং সতর্ক সঙ্কেত। সমুদ্র উত্তাল থাকায় ট্রলার নৌযানে মাছ শিকার বন্ধ রয়েছে।
গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, মৌসুমী নি¤œচাপের (পরে স্থল নি¤œচাপ ও দুর্বল প্রভাবে রোববার সন্ধ্যা থেকে বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের সর্বত্র যেন আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামে। অঝোর বর্ষণের একই সময়ে গতকাল সামুদ্রিক জোয়ার থাকায় মহানগীর বিস্তীর্ণ অঞ্চল ডুবে যায়। এরমধ্যে নগরীর আগ্রাবাদসহ এক্সেস রোড, হালিশহর, কাট্টলী, দামপাড়া ওয়াসা, প্রবর্তক, মেহেদীবাগ, পাঁচলাইশ, শোলকবহর, কাতালগঞ্জ, মুরাদপুর, নাসিরাবাদ, ষোলশহর ২নং গেইট, চকবাজার, বাকলিয়া, বহদ্দারহাট, রাজাখালী, চান্দগাঁও, মোহরা, কাপ্তাই রাস্তার মোড়, কালুরঘাট, অক্সিজেন, দক্ষিণে পতেঙ্গা, কাটগড়সহ নগরীর ব্যাপক এলাকা হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে প্লাবিত হয়। নগরীর ব্যাপক অংশজুড়ে লাখো মানুষ হয়ে পড়ে পানিবন্দী।
বিরূপ আবহাওয়া ও পানিবদ্ধতার কারণে সৃষ্টি হয় যানজট। আবার যানবাহনের অভাবে অগণিত কর্মমুখী মানুষ পড়েন অবর্ণনীয় দুর্ভোগে। নগরীর ব্যবসা-বাণিজ্য দিনভর থমকে যায়। বিকেল থেকে বর্ষণের মাত্রা কমলেও অনেক এলাকায় পানিবদ্ধতা রয়ে গেছে। নির্বিচারে পাহাড় কেটে বালি ও মাটি তুলে নেয়ার কারণে সেই বালি-মাটিতে নগরীর নালা-নর্দমা ও খাল-ছরাগুলো ভরাট হয়ে গেছে। এতে করে ভারী বৃষ্টি হলেই নগরী ডুবে যাচ্ছে প্রতিবছর প্রাক-বর্ষায় ও বর্ষা মৌসুমে। গতকাল নগরীতে অসংখ্য বসতঘরে কাদা-পানি জমে যায়। আর তা অপসারণেই নাকাল হতে হয় মানুষকে। এদিকে জেলার ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, মিরসরাই, চন্দনাইশ, লোহাগাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে প্রবল বর্ষণের সাথে পাহাড়ি ঢলে ফল-ফসল, সবজি ক্ষেত-খামারের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে আবহাওয়া বিভাগ জানায়, ফেনী ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত মৌসুমী স্থল নি¤œচাপটি আরও উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে লঘুচাপ আকারে বর্তমানে বাংলাদেশের কুমিল্লা ও ভারতের ত্রিপুরা অঞ্চলে অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে। মৌসুমী বায়ু উত্তর বঙ্গোপসাগরে সক্রিয় অবস্থায় আছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩নং স্থানীয় সতর্ক
সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে ভারী বর্ষণের সতর্কবার্তায় আবহাওয়াবিদ মোঃ আবদুর রহমান খান জানান, প্রবল মৌসুমী বায়ুর কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। এর প্রভাবে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বরিশাল, ঢাকা, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারী (৮৯ মিমিটারেরও বেশি) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভ‚মিধসের আশঙ্কা রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।