পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফারুক হোসাইন : আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আন্দোলনের প্রস্তুতির পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতাও জোরদার করেছে বিএনপি। কিছুদিন পরপরই ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রতিনিধি ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রধানদের কাছে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বর্ণনা, বিরোধী দলের ওপর সরকারের দমনপীড়ন তুলে ধরা, মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করারসহ মামলার নথিপত্র তাদের হাতে হস্তান্তর করা হয়।
এছাড়া প্রভাবশালী রাষ্ট্র ভারত, চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোর সাথে বাড়ানো হয়েছে কূটনৈতিক যোগাযোগ। এরই অংশ হিসেবে ভারত সফর করছে বিএনপির তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলটি কংগ্রেসের সভাপতি রাহুল গান্ধীসহ কংগ্রেসের বিভিন্ন নেতা, বিজেপির প্রভাবশালী নেতা এবং ভারতের থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলোর সাথে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা করছে। বিএনপির তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তার সাথে আরও রয়েছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির। প্রতিনিধি দলটি ইতোমধ্যে ওবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ), বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন (ভিআইএফ) এবং রাজিব গান্ধী ফাউন্ডেশনের (আরজিএফ) সাথে বৈঠক করেছে। বিএনপি সূত্রে জানা যায়, এসব বৈঠকে থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলোর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, নির্বাচন ও আইনের শাসন সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় এবং বাংলাদেশে যে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের অনুপস্থিতি রয়েছে সে বিষয়ে থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলো অবগত রয়েছে বলেও জানানো হয়। এছাড়া ভারত সফরে বিএনপি নেতারা ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) নেতাদের পাশাপাশি বিরোধী দল কংগ্রেসের সভাপতি রাহুল গান্ধীর সাথে বৈঠক করেছেন।
জানা গেছে ওবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএস) ভারতের একটি শীর্ষস্থানীয় থিঙ্ক ট্যাঙ্ক। বিজেপির অত্যন্ত ঘনিষ্ট এই সংগঠনটির সদস্য হলেন- সাবেক রাষ্ট্রদূত, আমলা, অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা। ওআরএফের সম্মানিত ফেলো ও ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাই কমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তীও বিএনপি নেতাদের সাথে বৈঠকের সময় উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায়। বিএনপির একটি সূত্র বলছেন ওআরএস এবং ভিআইএফের সাথে আলোচনায় বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়।
বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, ভারতের থিঙ্ক ট্যাংক ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে আলোচনায় আগামী নির্বাচন নিয়ে ভারতের মনোভাবের কিছুটা ইঙ্গিত তারা পেয়েছেন। অবশ্য বিএনপি নেতাদের ভারত সফরের কয়েকদিন আগেই অর্থ্যাৎ গত ১৭ এপ্রিলে ওবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ফেলো মনোজ যোশী তার একটি নিবন্ধে লিখেছেন, ‘২০১৪ সালে বাংলাদেশে যে নির্বাচন হয়, তাতে মাত্র ২২ শতাংশ ভোট পড়েছিল। সেই নির্বাচন বিএনপি বর্জন করে এবং সে সময় অনেক সহিংসতা হয়। কাজেই আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের আশা বাংলাদেশের এবারের নির্বাচন যেন আগের বারের চেয়ে বিশ্বাসযোগ্য হয়। বিএনপি নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা ভারতের দিক থেকে এমন অবস্থানের ইঙ্গিত পেয়েছেন। ভারত চায় বিশ্বাস ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। এমনকি আগামী নির্বাচন বিষয়ে বিএনপি ছাড়াও একাধিক বিরোধী রাজনৈতিক দলের সাথে ভারত যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে বলে তারা জানতে পেরেছেন।
বিএনপি নেতাদের সাথে ভারতের থিঙ্ক ট্যাঙ্কের বৈঠক নিয়ে ভারতের সংবাদপত্র দ্যা হিন্দু জানিয়েছে, বিএনপি নেতারা বিজেপির ঘনিষ্ট সংগঠন ওআরএস এবং ভিআইএফের মাধ্যমে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে ডিসেম্বরে বাংলাদেশের আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য সহযোগিতা কামনা করেছেন। একই সাথে তারা ভারতের সাথে বাংলাদেশের জনগণের সম্পর্ক গড়ে তোলার আহŸান জানান। বিএনপি সূত্রে জানা যায়, বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে ভারতকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়, জনগণের সাথে জনগণের সম্পর্ক হলে তা দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং উভয় দেশের জন্য লাভজনক হবে। আর যদি সম্পর্ক পার্টি টু পার্টি হয় তাহলে তা একটি নির্দিষ্ট সময় পরে আর থাকে না। বএনপি নেতারা মনে করেন, আগামী নির্বাচন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো একতরফাভাবে করা সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে না। বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এখন নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। এ জন্য ভারতের সহযোগিতা চায় বিএনপি। ভারত সফররত বিএনপি নেতারা দেশটির রাজনৈতিক নেতা ও থিঙ্ক ট্যাংকের সাথে আলোচনায় বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিবেশী দেশে গণতান্ত্রিকভাবে সরকার পরিবর্তনের গুরুত্বের দিকটি তুলে ধরেন। একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা হলে বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হবে, তার প্রভাব ভারতেও পড়বে এমন ধারণা দেন তারা।
এ দিকে ভারত সফরের কিছুদিন আগেই বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল চীন সফর করেছেন। সেখানে তারা চীনের বিভিন্ন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অর্গানগুলোর সাথে বৈঠক করেছেন। বিএনপি সূত্রে জানা যায়, চীনের সাথে বৈঠকেও বিএনপি বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য চীনের সহযোগিতা কামনা করেন। চীনের পক্ষ থেকেও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পরিবেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়। চীনের নতুন রাষ্ট্রদূত ঢাকায় প্রথম সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয় ইউনিয়নের বিভিন্ন রাষ্ট্রের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছে বিএনপি। এর মধ্যে কয়েকটি রাষ্ট্রের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক থাকার কথাও স্বীকার করেছেন বিএনপির দায়িত্বশীল একজন নেতা।
এছাড়া প্রায় প্রতিমাসেই ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করেন বিএনপির প্রতিনিধিরা। তারা এসব বৈঠকে বাংলাদেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, বর্তমান সরকারের সময়ে দেশে গুম-খুন, ধর্ষণসহ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাÐের বিষয় তুলে ধরা হয়। একইসাথে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের দমন এবং তাদের নামে মিথ্যা মামলার সার্বিক তথ্যও তাদের হাতে তুলে দেয়া হয়। এদিকে একই সময়ে দেশের বাইরে রয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংক েেথকে কয়েক দিনের যাত্রাবিরতি শেষে তিনি লন্ডনে গেছেন বলে দলীয় একটি সূত্র জানিয়েছেন। সেখানে (লন্ডনে) তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপি আয়োজিত একটি সমাবেশে অংশ নেবেন। নর্থ লন্ডনের হোটেল রয়েল রিজেন্সিতে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এছাড়া তারেক রহমানের সাথে একটি ইফতার অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিবের যোগ দেয়ার কথা রয়েছে বলে দলের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।