Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চট্টগ্রামের মেগা প্রকল্পে বরাদ্দ ৬ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা

গভীর সমুদ্রবন্দর ও বে-টার্মিনালে হতাশা

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ৯ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সদ্যঘোষিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অত্যাবশ্যকীয় বিবেচিত ও প্রধানমন্ত্রীর ফার্স্ট ট্র্যাকের অন্তর্ভূক্ত বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। এই লক্ষ্যে মোট বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ৬ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। তবে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত বন্দরনগরী চট্টগ্রামের আরো বিভিন্ন অত্যাবশ্যকীয় ও জনগুরুত্বসম্পন্ন প্রকল্প বা মেগাপ্রকল্পের জন্য কোন বরাদ্দ মিলেনি। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে সোনাদিয়ায় দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষিত গভীর সমুদ্রবন্দর (ডীপ সী-পোর্ট), চট্টগ্রাম বন্দরের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণে অপরিহার্য পতেঙ্গা-হালিশহর সমুদ্র মোহনায় প্রস্তাবিত বে-টার্মিনাল। বাজেট বরাদ্দ না থাকায় এ দু’টি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন ফের অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আর এ নিয়ে চট্টগ্রামের সচেতন নাগরিক মহল বিশেষ করে পোর্ট-শিপিং অঙ্গনে দেখা দিয়েছে নতুন করে হতাশা।
ঘোষিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে বৃহত্তর চট্টগ্রামের বরাদ্দপ্রাপ্ত মেগা প্রকল্পসমূহ এবং এর বিপরীতে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে- মহেশখালীর মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ মেগাপ্রকল্পের জন্য ২ হাজার ১৭১ কোটি টাকা রাখার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। কর্ণফুলী টানেল নির্মাণে বরাদ্দ রেখেছেন ১ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী হয়ে রামু-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেলওয়ে সংযোগ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ১ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। মহেশখালীতে ভাসমান তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ৭৫৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব রয়েছে নয়া বজেটে। চট্টগ্রাম অঞ্চলের মেগা প্রকল্পসমূহের মধ্যে কর্ণফুলী টানেলের বাইরের অবকাঠোমা সংযোগ নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। এ মেগাপ্রকল্পে সহায়তা করছে চীন। দীর্ঘ জটিলতার পর চায়না এক্সিম ব্যাংক অর্থ ছাড় করার ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে আশাবাদ তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে মহেশখালীর মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ মেগাপ্রকল্প, গুচ্ছপ্রকল্প এবং এলএনজি টার্মিনাল প্রকল্পসহ একটি বহুমুখী সমুদ্র বন্দরের নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে। এর মূল পরিকল্পনা ও গবেষণা সম্পন্ন করেছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকা। জাইকার পরিকল্পনা অনুসারে মাতারবাড়ীতে একটি এনার্জি হাব বা জ্বালানি কেন্দ্র গড়ে উঠবে। সেখানে জাপান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ বিনিয়োগ প্রস্তাব করেছে। ইতোমধ্যে এলএনজি টার্মিনালের অদূরে দেশে প্রথম ও সর্ববৃহৎ জাহাজ কাতার থেকে ‘এক্সিলেন্স’ এক লাখ ৩২ হাজার ঘনমিটার এলএনজি নিয়ে ভিড়েছে। এই এলএনজি পাইপলাইনের মাধ্যমে চলতি জুন মাসের মধ্যে চট্টগ্রামে জাতীয় গ্রীড লাইনের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার মাধ্যমে সরবরাহ শুরু হবে এমনটি আশা করছে জ্বালানি বিভাগ। এদিকে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কলসালল্টস-এর উদ্যোগে দেশের সমুদ্র এলাকায় ৬টি স্থানে কারিগরি সমীক্ষা চালিয়ে মহেশখালীর সোনাদিয়াকে গভীর সমুদ্র বন্দর বা ডীপ সী-পোর্ট নির্মাণের জন্য উপযোগী হিসেবে চিহ্নিত করে। সেখানে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপনের জন্য বিভিন্ন প্রস্তুতিও চলে। চীন এই মেগাপ্রকল্পে বড় ধরনের বিনিয়োগের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু হঠাৎ করে সবকিছু থমকে যায়। যদিও সরকারি কর্তব্যক্তিরা বলে আসছেন, সরকার এখনও সেখানে গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপনে আগ্রহী, প্রকল্প থেকে পিছু হটেনি। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ী মহলের দাবির প্রেক্ষিতে এবার বাজেটে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর মেগাপ্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দ হবে এমনটি প্রত্যাশা করা হলেও শেষ পর্যন্ত তা হলো না। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিবছর কন্টেইনারসহ সার্বিক কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের চাপ ও চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবৃদ্ধির হার বার্ষিক ১২ থেকে ১৭ শতাংশ। ক্রমবর্ধমান পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের চাহিদা মেটাতে পতেঙ্গা-হালিশহরে প্রস্তাবিত বে-টার্মিনাল স্থাপনের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ অনেকদূর এগিয়ে গেছে। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে অত্যাবশ্যকীয় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন আটকে আছে।
মেগা প্রকল্পে অর্থবরাদ্দে সন্তোষ
সদ্যঘোষিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মেগা প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দে সন্তোষ প্রকাশ করেছে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি), চট্টগ্রাম। সংগঠেনের সভাপতি এসএম আবু তৈয়ব বলেছেন, চট্টগ্রামের মেগা প্রকল্পমূহে যৌক্তিক অর্থ বরাদ্দ দেয়াকে আমরা স্বাগত জানাই। কর্ণফুলী টানেল, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার-ঘুমধুম রেললাইন স¤প্রসারণ, মাতারবাড়ি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। এসব মেগাপ্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক স্বার্থেই যথাসময়ে বাস্তবায়ন প্রয়োজন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম

৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ