পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
আর দু’দিন বাদেই পহেলা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষ। নববর্ষ উদযাপনের জন্য রাজধানীসহ সারাদেশে বিশেষ করে শহরগুলোতে একটা তোড়জোড় ও আয়োজন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত কয়েক দশক ধরে বাংলা নববর্ষ উৎসব আকারে উদযাপিত হচ্ছে। অতীতে উৎসব করে নববর্ষ পালনের তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। গ্রামীণ জনজীবনে কৃষি ও ব্যবসার সঙ্গে বাংলা সনের ওৎপ্রোত সম্পর্ক থাকার কারণে অতীতে গ্রামে-গঞ্জে মেলা ও হালখাতার প্রচলন ছিল। শহুরে জনজীবনে এসব খুব একটা দেখা যেত না। এখন সবকিছু যেন উল্টে গেছে। গ্রামে-গঞ্জে এখন মেলা ও হালখাতা প্রায় উঠেই গেছে। পক্ষান্তরে শহরে নববর্ষ উদযাপনের ঘটা শুরু হয়েছে। এ উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, সমাবেশ, মিছিল ইত্যাদি হচ্ছে। নববর্ষ ব্যবসা-বাণিজ্যেরও একটা উপলক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পহেলা বৈশাখে নববর্ষ উদযাপনের নামে বাদ্য-বাজনা, আলপনা, মুখোশ নৃত্য, রঙখেলা, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা প্রভৃতিকে চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতি বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে যার সঙ্গে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর আচরিত সংস্কৃতির কোনো মিল নেই। নববর্ষে পান্তা-ইলিশের এক হুজুগ সৃষ্টি হয়েছে। নববর্ষের সঙ্গে পান্তা বা ইলিশের কোনো সম্পর্ক নেই। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজধানীসহ বড় শহরগুলোতে পান্তা-ইলিশ অপরিহার্য অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে। ভাবটা এমন যেন পান্তা-ইলিশ ছাড়া নববর্ষই মিছে। হুজুগটা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, পহেলা বৈশাখে পথে-ঘাটে পান্তা-ইলিশের দোকান বসে যায়। শুধু কি তাই? বড় বড় হোটেলগুলোতে পর্যন্ত এ দিনে পান্তা-ইলিশের বিশেষ আয়োজন বা ব্যবস্থা করা হয়। ঘরে ঘরে পান্তা-ইলিশ খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। পান্তা-ইলিশ যেন এখন নববর্ষের ‘সংস্কৃতি’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাঙালি যে হুজুগপ্রিয়, এ থেকে সেটা আবারো প্রমাণিত হয়।
পান্তা-ইলিশের যে ক্রেজ তৈরি হয়েছে, আদৌ তার কোনো মানে নেই, প্রয়োজনও নেই। শখ করে বা অন্য কোনো কারণে কেউ যদি পান্তা-ইলিশ খেতে চায় তবে পহেলা বৈশাখেই কেন, বছরের যেকোনো দিন খেতে পারে, যতদিন ইচ্ছা খেতে পারে। কিন্তু এ কথা বলে এখন কোনো কাজ হবে বলে মনে হয় না। প্রতি বছরই পহেলা বৈশাখের প্রাক্কালে ইলিশের প্রসঙ্গ উঠে আসে। কথা হয় ইলিশ নিয়ে, পান্তা-ইলিশ নিয়ে। এসময় ইলিশের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। ক্রেতা বাড়ার কারণেই যে দামে আকাশচুম্বি উল্লম্ফন ঘটে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এবারও ব্যতিক্রম ঘটেনি। প্রায় মাসখানেক আগে থেকেই ইলিশের দাম বাড়া শুরু হয়েছে। পহেলা বৈশাখ যত এগিয়ে আসছে, দাম ততই বাড়ছে। গতকাল পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর মতে, রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে আকার ও ওজনভেদে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকা থেকে ৮-৯ হাজার টাকা পর্যন্ত। কোনো কোনো বাজারে এই দামেও পাওয়া যাচ্ছে না। মজুদদাররা অনেক আগেই ইলিশ মজুদ করে রেখেছে। তারা ধীরে ধীরে বাজারে ছাড়ছে। কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে যথেচ্ছ দাম আদায় করে নিচ্ছে। ওয়াকিবহাল মহলের অজানা নেই, ইলিশ ধরার ওপর এখন নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে। পহেলা মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে পরিচিত এলাকাগুলোতে কেবল জাটকা নয়, ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ। খবর পাওয়া গেছে, এই নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি মানা হচ্ছে না। ইলিশের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় চুরিচামারি করে জাটকাসহ ইলিশ ধরা হচ্ছে। ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছই নয়, অন্যতম অর্থকরী সম্পদও বটে। আমরা জানি, পহেলা মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল এবং নভেম্বর থেকে মে পর্যন্ত ইলিশ ও জাটকা ধরার ওপর বিধিনিষেধ আরোপের ফলে ইলিশের উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বর্ধিত উৎপাদন আমাদের আমিষের চাহিদা পূরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। সেই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রাও কিছু আসছে। বিশ্বব্যাপী আমাদের ইলিশের সুনাম, কদর ও চাহিদা রয়েছে। এ কারণে ইলিশ রফতানি উত্তরোত্তর বাড়ছে। নববর্ষের উৎসবের নামে কিংবা অন্য কোনো উপলক্ষে ইলিশ ও জাটকা ধরা আমরা সমর্থন করতে পারি না। একই সঙ্গে মাসের পর মাস ইলিশ মজুদ রেখে পহেলা বৈশাখের আগে তা বাজারে তুলে ইচ্ছামতো দাম আদায়ও সমর্থন করতে পারি না।
নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ বা জাটকা ধরা সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। প্রজনন মওসুমে মা ইলিশ ধরা হলে কিংবা আকার ১০ ইঞ্চি হয়নি এমন ইলিশ ধরা যেকোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে নাগরিক সচেতনতা বাড়াতে হবে। কোথাও কোনো কারণে নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য হলে বিধি মোতাবেক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এই সঙ্গে পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ খাওয়া নিরুৎসাহিত করতে হবে। আশার কথা, পহেলা বৈশাখে ইলিশ বর্জন করার দাবি উঠেছে। মাছ বাঁচানোর জন্য এ দাবি যৌক্তিক। দাবির বাস্তবায়ন একান্তভাবেই কাম্য। যেহেতু বাংলা নববর্ষের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে ইলিশের কোনো সম্পর্ক নেই, সুতরাং জনসাধারণকেও এই হুজুগ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এ ব্যাপারে সরকার, সচেতন মহল ও মিডিয়াকে এগিয়ে এসে প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখতে হবে। পান্তা-ইলিশ কোনো ‘সংস্কৃতি’ নয়। কাজেই ইলিশ বর্জন করলে কোনো ক্ষতি হবে না। এতে জাতীয় সম্পদ সুরক্ষা হবে। দেশের মানুষই তার সুফল পাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।