Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যানজটে স্থবির চট্টগ্রাম

| প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : তীব্র যানজটে অচল বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলিতে বিস্তৃত হচ্ছে যানজট। স্থবির বাণিজ্যিক রাজধানীর ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রফতানি কার্যক্রম। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকা পড়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে রোজাদাররা। নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান কর্মঘণ্টা, পুড়ছে জ্বালানী তেল। ঈদ বাজারকে ঘিরে নগরীতে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। কয়েকটি সড়কে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। বন্দরমুখী ভারী যানবাহনের ভিড়ে অচল মহানগরীর কয়েকটি সড়ক। এসব কারণে নগরীতে যানজট প্রকট আকার ধারণ করেছে। মাহে রমজানে যানজট সহনীয় রাখতে অনেক উদ্যোগ নেয়া হয়। ট্রাফিক বিভাগ যানবাহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
সড়ক, ফুটপাত দখলমুক্ত করতে রোজার আগ থেকে শুরু হয় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক হয়। এসব বৈঠকে বেশকিছু উদ্যোগ নেয়া হলেও বাস্তবে এর কোন সুফল মিলছে না। দিনে দিনে যানজট আরও তীব্র হচ্ছে। গতকাল নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে নগরীর প্রতিটি সড়ক ছিল যানজটে অচল। বিমানবন্দর সড়কের কাটগড় থেকে শুরু করে সিমেন্ট ক্রসিং, বন্দরটিলা, ইপিজেড মোড়, কাস্টম হাউস মোড়, নিমতলা, ফকিরহাট, বারিক বিল্ডিং, আগ্রাবাদ, দেওয়ানহাট থেকে শুরু করে লালখান বাজার, জিইসি মোড় হয়ে বহদ্দারহাট পর্যন্ত প্রধান সড়কটি ছিল যানজটে অচল।
এর প্রভাবে জাকির হোসেন রোড, বায়েজিদ বোস্তামী সড়ক, ও আর নিজাম রোড, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, পোর্ট কানেকটিং রোডসহ সবকয়টি সড়কে অচলাবস্থা নেমে আসে। অন্যদিকে নিউমার্কেট, আন্দরকিল্লা মোড়, চকবাজার, মুরাদপুর, কালামিয়া বাজার, প্রবর্তক মোড়, গুলজার মোড়, গণি বেকারী, জামালখান সড়ক, বৌদ্ধ মন্দির মোড়, জুবিলী রোড, পাথরঘাটা রোড, ফিরিঙ্গিবাজার থেকে শুরু করে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ-আছাদগঞ্জ এলাকা ছিল যানজটে স্থবির। ১০ নম্বর রুটের একটি বাসের চালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, বেলা ১১টায় কাটগড় থেকে বাস ছাড়ার পর জিইসি মোড় পৌঁছতে দেড় ঘণ্টা সময় লেগে যায়। গাড়ির গতি নেমে এসেছে ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটারে। তিনি বলেন, যানজটের মূলে রয়েছে রিক্সা, অটেরিকশা আর ছোট টেম্পোর আধিক্য। এসব ছোট যানবাহনের কারণে রাস্তায় বড় যানবাহন চলতে পারছে না।
গণপরিবহনের চালকরা জানান, যানজটের কারণে তাদের আয়ও কমে গেছে। গণপরিবহন আটকা পড়লে লোকজন গাড়ি থেকে নেমে হাঁটছে। আগে যেখানে একেকটি বাস-মিনিবাস নির্ধারিত রুটে ১০ বার আসা-যাওয়া করতো এখন যানজটের কারণে ৫ বারও আসা-যাওয়া করতে পারছে না। এতে তাদের আয় অর্ধেকে নেমে এসেছে। যানজটে আটকা পড়ে অফিসমুখী এবং অফিস ফেরত লোকজনকে দুই দফায় চরম দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। প্রচÐ রোদে তপ্ত সড়কে আটকে পড়া যানবাহনে রোজাদারদের কাহিল অবস্থা। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঈদের কেনাকাটা সারতে রাস্তায় বের হওয়া লোকজনের অবস্থা আরও করুণ। যানজটের কারণে বেড়ে গেছে রিক্সা, অটোরিকশার ভাড়া।
ট্রাফিক বিভাগ জানায়, ঈদের আগে-পরে অন্তত ৬ দিন বন্দর থেকে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। আর এ কারণে এখন বন্দর থেকে আমদানি-রফতানি পণ্যমুখী যানবাহনের চাপ বেড়ে গেছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে রফতানি পণ্যবাহী যানবাহন আসছে বেসরকারি টার্মিনালগুলোতে। ফলে বন্দরমুখী পোর্ট কানেকটিং রোড ও টোল রোডে যানবাহনের চাপ বেড়ে গেছে। পোর্ট কানেকটিং রোডে চলছে সংস্কার কাজ। এ কারণে ওই সড়কে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তীব্র জট লেগেই আছে। এর প্রভাবে আশপাশের সড়কগুলোতে যানজট স্থায়ী রূপ নিয়েছে। ঈদ বাজারে কেনাকাটা জমে উঠেছে। মার্কেটমুখী মানুষের স্রোতের কারণে প্রতিটি মার্কেটকে ঘিরেই যানজট হচ্ছে। ঈদ বাজারকে ঘিরে বৈধ-অবৈধ রিক্সার সাথে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক নতুন রিক্সা যোগ হয়েছে। বেড়েছে অটোরিকশা ও টমটমের সংখ্যাও। এসব কারণে যানজট সামাল দেয়া ট্রাফিক পুলিশের পক্ষে রীতিমত অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) কুসুম দেওয়ান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, যানজট সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ট্রাফিক পুলিশ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরপরও কোন কোন সড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। ইফতারের আগমুহূর্তে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি থানা ও গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারাও রাস্তায় নেমে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করছে। এর ফলে অন্তত ইফতারের সময় যানজট সহনীয় পর্যায়ে রাখা যাচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম

৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ